স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর যেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ঠেকানো যাচ্ছে না-তাদের চাপা ক্ষোভ ও প্রত্যাশা তারা প্রকাশ করেছেন–সচিবালয় কর্মচারীদের ৯ দফা দাবি ২০২৪
সচিবালয় কর্মচারীরা কি নতুন পে স্কেল চান? হ্যাঁ। সরকারি চাকরিতে নিজেদের বিকশিত করার জন্য দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন দাবি-দাওয়া যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর উপস্থাপন করা হলেও আজও কোন দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। উচ্চতর পদ সৃষ্টি, পদ সংরক্ষণ, পদোন্নতির ক্ষেত্রে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সংকুচিতকরণ, ৫০ শতাংশ পেনশন প্রদান, বাস্তবতার আলোকে পদনাম পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে কর্মচারীদের মাঝে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, জাতীয় পে-কমিশন, ২০১৫ ঘোষিত হওয়ার পর আজ অবধি বেতন কমিশন গঠন করা হয়নি।
বেতন কি দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়? বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ সকল দ্রব্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে আকাশচুম্বী ও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মচারীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। নিম্নবেতনভুক্ত কর্মচারীরা পরিবার-পরিজনসহ জীবিকা নির্বাহে আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এছাড়া বিগত ১৫-১৬ বছর যাবত কর্মচারীদের পেশাগত দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন না হওয়ায় কর্মচারীরা প্রশাসনিক, পারিবারিক ও সামাজিক বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করে অবিলম্বে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য নয় দফা দাবি সিনিয়র সচিবের কাছে দাখিল করেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে বারবার দাবী দাওয়া পেশ করা হলেও তা কোন পাত্তাই পায়নি।
একক পদনাম কতটা জরুরি? সকল সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর, অধিদপ্তরে কাজের ধরন অনুযায়ি পদনাম ও গ্রেড পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করা প্রয়োজন। সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত কর্মচারীদের গ্রাচ্যুয়িটির পরিবর্তে পেনশন প্রবর্তন সহ বিদ্যমান গ্রাচ্যুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচ্যুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবী উঠেছে অন্যদিকে সরকার সর্বজনীন পেনশনে স্থানান্তরের ঘোষণা করছে। ফলে গ্র্যাচুইটি, লাম্পগ্র্যান্ট ও জিপিএফ সুবিধা বাতিল হতে পারে। সরকার মূলত ব্যয় হ্রাসের জন্য এমন পদক্ষে নিচ্ছে বলে ধারা হয় হচ্ছে তাই নতুন পে স্কেল ঘোষনার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দাবী দাওয়া ২০২৪ / বৈষম্য দূরীকরণে ৯ দফা দাবী পেশ করা হয়েছে
সরকারি হিসেবেই গড় মূল্যস্ফিতি ১০% এর ঘরে ঘুড়ছে। শুধুমাত্র খাদ্যে মূল্যস্ফিতি ১৫% ছাড়িয়েছে। সেসরকারি হিসেবে মূল্যস্ফিতি ২০-২৫% ছাড়িয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে তাই নতুন পে স্কেল ঘোষনা করে সরকার মূল্যস্ফিতি বৃদ্ধি করতে চাইবে না।Caption: cabinet staff claim
সরকারি চাকুরিজীবীদের দাবী সমূহ ২০২৪ । যে দাবী নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করা হলেও তা পূরণ করা হয়নি
- পে-কমিশন গঠন পূর্বক ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্বে অন্তবর্তীকালীন কর্মচারীদের জন্য ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করত হবে।
- ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখতে হবে।
- সচিবালয়ের ন্যায় সকল দপ্তর, অধিদপ্তরের পদনাম পরিবর্তনসহ ১০ম গ্রেডে উন্নীত করণ এবং এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করতে হবে।
- টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড পূণর্বহাল সহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পূনঃবহল, বিদ্যমান গ্রাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপীল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি-২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ ও অধঃস্তন আদালতের কর্মচারিদের বিচার বিভাগীয় সহায়ক কর্মচারি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
- আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিল পূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে। ব্লক পোষ্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর বেতন স্কেলের উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে।
- বাজারমূল্যের উর্দ্ধগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সমন্বয় পূর্বক সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
১৯৮৫ সালের পে স্কেলে কি ছিল?
গ্রেড-১ এবং গ্রেড-২-এর বেতন যথাক্রমে ৩০০০ টাকা (নির্ধারিত) এবং ২৮৫০ টাকা (নির্ধারিত) থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল যথাক্রমে ৬০০০ টাকা (নির্ধারিত) এবং ৫৭০০ টাকা (নির্ধারিত)। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১০০ ভাগ। গ্রেড-৩-এর পে-স্কেল ২৩৫০-২৭৫০ টাকার পরিবর্তে নির্ধারিত হয়েছিল ৪৭৫০-৫৫০০ টাকা। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১০২ শতাংশ। নবম গ্রেডের বেতন স্কেল ৭৫০-১৪৭০ টাকার স্থলে নির্ধারিত হয়েছিল ১৬৫০-৩০২০ টাকা। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১২০ শতাংশ। গ্রেড-১৯-এর কর্মচারীদের পে-স্কেল ২৪০-৩৪৫ টাকার স্থলে নির্ধারিত হয়েছিল ৫৫০-৯৬৫ টাকা। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১২৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন গ্রেডে (গ্রেড-২০) পে-স্কেল ২২৫-৩১৫ টাকার স্থলে নির্ধারিত হয়েছিল ৫০০-৮৬০ টাকা। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১২২ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো গ্রেডেই বেতন ১০০ ভাগের কম বাড়েনি।
Next Pay Scale 2024 । ৯ম পে স্কেল কেন চাই