বেতন নিতে রিটার্ন প্রমাণক ২০২৫ । সরকারি কর্মচারীদের ১০ গ্রেডের নিচের রিটার্ন দাখিল কি বাধ্যতামূলক নয়?
সকল সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী (গন কর্মচারী) এর আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হলেও এখন ৩.৫০ লক্ষ টাকার কম আয় থাকলে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের রিটার্ন দাখিল করতে হবে না। আয়কর আইন ২৬৪(৩) (২৭) ধারা অনুযায়ি সকল গনকর্মচারীর বেতন পরিশোধের সময় প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দাখিল বাধ্যতামূলক নয়- বেতন পরিশোধে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক-মাসিক বেতন নিতে রিটার্ন প্রমাণক ২০২৫
রিটার্ণ দাখিলের প্রমানক কি? অর্থ আইন-২০২৫ এর ক্রমিক ১২১ এর ধারা ২৫ অনুযায়ি শুধুমাত্র ১০ম গ্রেড এবং তদূর্ধ্ব গ্রেডের গনকর্মচারীদের বেতন ভাতার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে ১০ম গ্রেডের নিচের কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রাপ্তির জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নহে। গতবছর অর্থ আইন ২০২৪ অনুযায়ি সকল গনকর্মচারীর রির্টান দাখিল বাধ্যতামূলক ছিল। রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ” বলিতে বুঝাইবে— রিটার্ন দাখিলের প্রত্যয়ন বা প্রাপ্তি স্বীকার পত্র অথবা করদাতার নাম, টিআইএন এবং করবর্ষ সংবলিত সিস্টেম জেনারেটেড সার্টিফিকেট; বা করদাতার নাম, টিআইএন এবং করবর্ষ সংবলিত উপকর কমিশনার কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়ন।
রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিল করিতে হইবে কাদের? করারোপযোগ্য আয় না থাকা সাপেক্ষে, ২০ (বিশ) লক্ষাধিক টাকার ঋণ গ্রহণকরতে রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করিতে রিটার্ণ দাখিল করতে হইবে। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০ (দশ) লক্ষাধিক টাকার জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় বা লিজ বা হস্তান্তর বা বায়নানামা বা আমমোক্তারনামা নিবন্ধন করিতে রিটার্ণ দাখিল করতে হবে।
ক্রেডিট কার্ড প্রাপ্তি ও বহাল রাখিতেও রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসাবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসাবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখিতে রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। (পাঁচ) লক্ষাধিক টাকার পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায় রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। সরকারি কর্মচারী বা গণকর্মচারীর বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতেও রিটার্ণ দাখিল করতে হবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের আয়কর রিটার্ন ফরম । আয়কর রিটার্ন কত টাকা ।আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণের নিয়ম
টিআইএন থাকলেই রিটার্ন দিতে হবে? গত অর্থবছর থেকে সব টিআইএনধারীর বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। শূন্য আয়ের জন্য কোনো কর দিতে হয় না। কিন্তু রিটার্ন জমা দিতেই হবে। ১০ গ্রেডের নিচের কর্মচারীদের রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকছে না।
আয়কর আইন ২০২৩ এর ২৬৪(৩) (২৭) ধারা দেখুন । অর্থ আইন ২০২৫ ধারা ১২১
সরকারি চাকরিজীবীদের রিটার্ণ দাখিল করতে হবে । আয় থাকলেও বা না থাকলেও রিটার্ণ দাখিল বাধ্যতামূলক থাকলো না
- ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ গ্রহণে;
- কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পনসর শেয়ারহোল্ডার হতে হলে;
- আমদানি নিবন্ধন সনদ বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ গ্রহণ অথবা নবায়ন করতে;
- সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে;
- সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার লাইসেন্স নবায়ন করতে;
- সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি বা লিজ বা হস্তান্তর বা বায়নানামা বা আমমোক্তারনামা নিবন্ধন করতে;
- চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, একচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ নবায়ন করতে;
- মুসলিম ম্যারেজ অ্যান্ড ডিভোর্স (রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট, ১৯৪৭ এর অধীন নিকাহ রেজিস্ট্রার, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন, ২০১২ এর অধীন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক ও স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ এর অধীন রেজিস্ট্রার হিসেবে লাইসেন্স প্রাপ্তি অথবা নবায়ন করতে;
- ট্রেড বডি বা কোনো বাণিজ্যিক সংগঠনের সদস্যপদ প্রাপ্তি অথবা নবায়ন করতে;
- স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডার বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নবায়নে;
- ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স, বন্ডেড ওয়াটারহাউস লাইসেন্স, কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্স, ফ্রেট ফরওয়ার্ডিং লাইসেন্স ও বায়িং হাউস নিবন্ধন গ্রহণ ও নবায়নে;
- যেকোনো এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে:
- সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস–সংযোগ প্রাপ্তিতে;
- সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ প্রাপ্তিতে:
- লঞ্চ, স্টিমার, মাছ ধরার ট্রলার, কার্গো, কোস্টার, ডাম্ব-বার্জসহ যেকোনো প্রকারের ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেট গ্রহণ ও নবায়নে;
- পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ইট উৎপাদনের অনুমতি গ্রহণ ও নবায়নে;
- সিটি করপোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু বা পোষ্য ভর্তিতে:
- কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ গ্রহণে ও নবায়নে;
- আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণে ও নবায়নে;
- আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলায়;
- ১০ লাখের অধিক টাকার মেয়াদি আমানত খোলায় ও বহাল রাখতে:
- ১০ লাখের অধিক টাকার সঞ্চয়পত্র কেনায়;
- পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে;
- ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক বা উৎপাদন কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানকারী পদমর্যাদায় কর্মরত ব্যক্তির বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে:
- দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার সরকারি কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে:
- স্বাভাবিক ব্যক্তি ব্যতীত অন্য করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে;
- কোনো নিবাসী করদাতা কর্তৃক অ্যাডভাইজরি বা কনসালটেন্সি সার্ভিস, ক্যাটারিং সার্ভিস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, জনবল সরবরাহ, নিরাপত্তাসেবা সরবরাহ বাবদ কোনো কোম্পানি হতে অর্থ প্রাপ্তিতে;
- বিমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণ ও নবায়নে;
- দ্বিচক্র বা ত্রিচক্র মোটরযান ব্যতীত অন্য মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে;
- এনজিও–বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিও বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি হতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার অনুকূলে বিদেশি অনুদানের অর্থ ছাড় করতে;
- ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স নবায়নে;
- কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এবং সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৮৬০–এর অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ ও নবায়নে:
- কোনো নিবাসী করদাতা কর্তৃক পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা সরবরাহের উদ্দেশ্যে দরপত্র দলিলাদি দাখিলকালে;
- পণ্য আমদানি বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিলকালে;
- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক গঠিত অনুরূপ কর্তৃপক্ষ অথবা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার অন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুমোদনের নিমিত্ত ভবন নির্মাণের নকশা দাখিলকালে;
- কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ প্রদানকালে:
- আয়কর আইনে নির্দিষ্ট করা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট পণ্য বা সেবা সরবরাহকালে;
- হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহের লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নে:
- সামাজিক অনুষ্ঠান, করপোরেট প্রোগ্রাম, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রশিক্ষণসহ সমজাতীয় যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল বা সমজাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান হতে ভাড়া বা অন্য যেকোনো সেবা গ্রহণকালে;
সরকারি কর্মচারীদের রিটার্ন দাখিল কি বাধ্যতামূলক নয়?
না। যাদের বেতন ১৬০০০ টাকা ক্রস করেছে তাদেরই রিটার্ণ দাখিল করতে হবে না। ০৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা একই অর্থ বছরে আয় ক্রস করলেই ন্যূনতম আয়কর দিতে হবে না। রিটার্ণ দাখিল মানেই আয়কর প্রদান নয়, শুন্য রিটার্ণ দাখিলের ক্ষেত্রে কোন ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয় না, শুধুমাত্র রিটার্ণ অর্থাৎ আয় ব্যয় ও সম্পদ, দায়ের হিসাব দিতে হয়। এখন ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের প্রতি বছর রিটার্ন দাখিলের ঝামেলা থাকলো না।