সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

জাতীয় যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫ । স্টার্টআপ শুরু করতে যুবকদের এটি পড়া উচিত?

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত ‘জাতীয় যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫’ প্রকাশিত হয়েছে। এই নীতিমালাটি গত ১২ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয় । যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা এই প্রজ্ঞাপনটি গেজেট আকারে ২৫ আগস্ট, ২০২৫-এর অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে – জাতীয় যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫

উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি? নীতিমালাটির প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের যুব সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে তাদের অবদান নিশ্চিত করা । ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারী, পুরুষ এবং তৃতীয় লিঙ্গের যুবকদের এই নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে । নীতিমালায় উল্লেখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো:

  • উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে তরুণদের ক্ষমতায়ন ।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুবকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো ।
  • বেকার যুবক, চাকরি হারানো মানুষ, বিদেশ-ফেরত কর্মী এবং সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা ।
  • বেকার নারী ও গৃহিণীদের নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করতে সহায়তা করা ।
  • ফ্রিল্যান্সার ও একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ কার্যক্রম চালু করা ।
  • যুব উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্বব্যাপী চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ।

উদ্যোক্তা হওয়ার মানদণ্ড কি? কোনো যুবককে উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে কিছু মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে: ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন (Tax Identification Number), বিআইএন (Business Identification Number), ন্যূনতম ২ জন কর্মী নিয়োগ, এবং বার্ষিক ৬,০০,০০০ টাকার মোট বিক্রয় নিশ্চিত করা । এই শর্তগুলো পূরণ হলে তাদেরকে একটি পরিচিতিমূলক আইডি কার্ড দেওয়া হবে । নীতিমালাটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে, যারা একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে ।

‘জাতীয় যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫’ অনুযায়ী, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে এবং একটি পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বা অন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা থেকে দক্ষতা বৃদ্ধি বা উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং মূলধন সহায়তা পাওয়া । ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে । টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) থাকতে হবে । বিআইএন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) থাকতে হবে । প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ২ জন কর্মী থাকতে হবে । প্রতিষ্ঠানের হিসাব এবং ব্যালেন্স শীট সংরক্ষণ করতে হবে । ন্যূনতম বার্ষিক মোট বিক্রয়ের (turnover) পরিমাণ ৬,০০,০০০ টাকা হতে হবে । বার্ষিক ব্যাংক হিসাব বিবরণী থাকতে হবে ।

Caption: জাতীয় যুব উদ্যোক্তাজাতীয় যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫ উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫

নীতিমালা বাস্তবায়নের কৌশল ২০২৫ । যুব উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বেশ কিছু কৌশল গ্রহণ করা হবে । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ হলো

  1. যুব উদ্যোক্তা গবেষণা ও পরিবীক্ষণ কেন্দ্র: যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে যা যুব উদ্যোক্তাদের দক্ষতা, চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা নিয়ে গবেষণা করবে ।
  2. উদ্যোক্তা মেলা: যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বার্ষিক উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করবে এবং যুবকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য ‘যুব শপ’ স্থাপন করবে ।
  3. পুঁজি সরবরাহ: উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে একটি ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল প্রতিষ্ঠা করা হবে । বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা এবং স্টার্ট-আপ মূলধনের ব্যবস্থা করা হবে ।
  4. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন: আগ্রহী উদ্যোক্তাদের তহবিল সংগ্রহ, বিপণন, ব্র্যান্ডিং, হিসাবরক্ষণ এবং আইনি বিষয়াদির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে । এছাড়া, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডিজিটাল দক্ষতা ও ই-কমার্সের মতো বিষয়েও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে ।
  5. কর সুবিধা: যুব উদ্যোক্তাদের পণ্য উৎপাদন বা রপ্তানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর ও শুল্ক অব্যাহতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে ।
  6. অন্যান্য সুবিধা: এই নীতিমালার অধীনে ট্রেড লাইসেন্স পেতে সহায়তা এবং একটি উদ্যোক্তা সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে । সফল উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কার প্রবর্তন করা হবে ।

এই আইন অনুযায়ী উদ্যোক্তা হতে হলে কত টাকা বছরে আয় করতে হবে?

জাতীয় যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫’ অনুযায়ী, উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে ন্যূনতম বার্ষিক মোট বিক্রয় (turnover) ৬,০০,০০০ টাকা হতে হবে । এই মানদণ্ড পূরণ করলে এবং অন্যান্য শর্তাবলি (যেমন: ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন, বিআইএন, ন্যূনতম ২ জন কর্মী এবং হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ) সম্পন্ন করলে একটি পরিচিতিমূলক আইডি কার্ড প্রদান করা হবে ।

যুব সমাজকে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করা, উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার “জাতীয় যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫” প্রণয়ন করেছে।নীতিমালায় বলা হয়েছে, উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ, সহজ ঋণপ্রাপ্তি, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা সহায়তা এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগের প্রসারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এছাড়া গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে সমানভাবে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে।সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে এই নীতিমালার আওতায় যুব উদ্যোক্তাদের সহায়তায় যুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে নারী ও প্রতিবন্ধী যুবকদের উদ্যোক্তা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২৫ সাল থেকে যুব উদ্যোক্তাদের জন্য একটি জাতীয় ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে এবং তাদেরকে সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প, বাজার সংযোগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যুক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।সরকার মনে করছে, এই নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে নতুন লাখো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *