জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কাজ শুরুর করার পর থেকে প্রায় ৪৯টি সভায় মিলিত হয়ে কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রণয়ন করে- কমিশনের প্রতিবেদনকে মোট ১৭টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে –সংস্কার কমিশন রিপোর্ট ২০২৫
কমিশন কি কি বিষয় বিবেচনা করেছে? দক্ষ প্রশাসনের লক্ষ্য অর্জনে প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সঠিক কৌশলগত প্রশাসনিক নেতৃত্বের বিকাশ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে উপরে উল্লিখিত চারটি লক্ষ্যকে সম্প্রসারিত করে জনপ্রশাসনকে আরো কার্যকর ও পরিষেবায় কর্মকুশল করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সার্বিকভাবে জনপ্রশাসন সংষ্কারের জন্য কমিশন নিম্নলিখিত ছয়টি লক্ষ্য বিবেচনা করেছে: ক) জনমুখী জনপ্রশাসন, (খ) স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন, (গ) জনপ্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়ন, (ঘ) নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন, ও জনপরিষেবায় কর্মকুশল প্রশাসন, এবং (চ) কার্যকর জনপ্রশাসন। কমিশন কাজ শুরুর করার পর থেকে প্রায় ৪৯টি সভায় মিলিত হয়ে কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রণয়ন করে । কমিশনের প্রতিবেদনকে মোট ১৭টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ১৪টি বিভিন্ন শিরোনামে দু’শতাধিক সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। কমিশন সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের সুবিধার্থে স্বল্প মেয়াদি (৬ মাস), মধ্য মেয়াদি (এক বছর) ও দীর্ঘ মেয়াদি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে আসার সময় হলফ নামা দিতে হবে? হ্যাঁ। সরকারি কর্মচারীদের প্রথম নিয়োগের পর কাজে যোগদানের সময় স্বল্প মেয়াদি একটি শপথবাক্য বা হলফ নামায় স্বাক্ষর করতে হবে এবং তাতে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য, দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও জবাবদিহিতার অঙ্গীকার থাকবে। সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে শিষ্টাচার ও মধ্য মেয়াদি আচরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। দশম অধ্যায়ে একই ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের পরামর্শগ্রহণের সংস্কৃতি গড়ে তোলার মধ্য মেয়াদি উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা মূল্যায়ন ব্যবস্থার সাথে মূল্যবোধ, মধ্য মেয়াদি শিষ্টাচার ও আচরণ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে । সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার বিষয়টি মধ্য মেয়াদি সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে দেয়া যেতে পারে ।
সেবা ডিজিটালাইজড করতে হবে? হ্যাঁ। সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার বিষয়টি সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো যেতে পারে। নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে জনপ্রশাসন’ শিরোনামে সংস্কারের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নাগরিক সম্পৃক্ততা, নাগরিকদের তথ্য অধিকার ও নাগরিক পরিষেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। জনসেবা ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়াতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ স্বল্প মেয়াদি গ্রহণ করতে পারে। একটি মূল কৌশল হতে পারে সরকারি সেবার ডিজিটাল রূপান্তর। সরকার একাধিক ই-গভর্নমেন্ট সেবা শক্তিশালী করতে পারে, যেমন- অনলাইন ট্যাক্স দাখিল, ডিজিটাল জমির রেকর্ড এবং ইলেকট্রনিক জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি, পাসপোর্ট ইত্যাদি। ই-সেবা সরকারি বা জনসেবার সময় ও খরচ হ্রাস করে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া এটি দূরবর্তী বা অনগ্রসর এলাকায় নাগরিকদের জন্য সেবার অভিগম্যতা (Access) বাড়াতে পারে। ই-সেবা স্বচ্ছতা বাড়াতে পারে এবং নাগরিকদের সাথে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পারে।
একইসাথে এটি খরচ সাশ্রয়ী এবং তথ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করতে পারে। ই-সেবার উন্নতির লক্ষ্যে ন্যাশনাল ই-সার্ভিস সিস্টেম।
নাগরিকরা যাতে সহজে ও অবাধে চাহিদামত সরকারি সেবা সংক্রান্ত | স্বল্প মেয়াদি তথ্য পেতে পারে সেজন্য তথ্য অধিকার আইন (Right to Information Act, 2009) এবং Official Secrets Act, 1923 পর্যালোচনা ও সংশোধন করা যেতে পারে। Right to Information Act, 2009- এর একটি সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া সংযুক্তি-৪-এ রাখা হয়েছে। নাগরিকদের তথ্য ও পরিষেবায় অভিগম্যতা সহজ করার জন্য পরবর্তী অধ্যায়েও সুপারিশ করা হয়েছে।
তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী নাগরিকদের তথ্য সরবরাহ ও তাদের সমস্যা | স্বল্প মেয়াদি অভিযোগগুলো শোনা ( Public Hearing) বাধ্যতামুলক করে সকল সরকারি দপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য যেমন সংসদীয় স্থায়ী | স্বল্প মেয়াদি কমিটি রয়েছে, তেমনিভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেনি-পেশার নাগরিকদের নিয়ে একটি করে ‘জেলা নাগরিক কমিটি ও উপজেলা নাগরিক কমিটি’ গঠন করার সুপারিশ করা হলো। উক্ত কমিটিতে ছাত্র প্রতিনিধি রাখতে হবে। ‘নাগরিক কমিটি’ সরকারি পরিষেবা সম্পর্কে চার মাস অন্তর নিজেদের মধ্যে সভা করবে এবং তার কার্যবিবরণী জেলা কমিশনারের ওয়েবসাইটে ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানের কাছে প্রেরণ করবে।
সংস্কার কমিশন রিপোর্ট ২০২৫ । সরকারের রাষ্ট্র মেরামতের ০৬টি কমিশনের রিপোর্ট ক্লিক করে ডাউনলোড করুন
- নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫-০২-০৮ pdf
- পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫-০২-০৮ pdf
- বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫-০২-০৮ pdf
- দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫-০২-০৮ pdf
- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫-০২-০৮ pdf
- সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের মূল অংশ (১ম খণ্ড)
পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে না?
না। দীর্ঘদিন থেকে ট্রেড লাইসেন্স, বিদ্যুৎ সংযোগ, স্বল্প মেয়াদি পানির লাইন, পরিবেশ ছাড়পত্র ইত্যাদি পরিষেবার জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসের’ কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর নয়। এমতাবস্থায় আউট-সোর্সিং করে এফবিসিসিআই-র অধিভুক্ত জেলা চেম্বারগুলোকে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ পাওয়ার আবেদনগুলো প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হলো। এরপর বিদ্যমান নীতিমালা ও আইনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সাথে লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে। দেশের নাগরিকদের সহজে পাসপোর্ট | স্বল্প মেয়াদি দেওয়া একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হলো। কোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে আপত্তি থাকলে তাকে বিমান বন্দরেই যাচাই করা যেতে পারে। তাছাড়া পুলিশের হাতে ফৌজদারী মামলার আসামিদের তালিকা অনলাইনে সহজলভ্য থাকতে পারে। স্থানীয় এনজিও এবং সামাজিক | মধ্য সংস্থাগুলোকে জনপরিষেবার কাজে সম্পৃক্তকরণ ও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া | মেয়াদি যেতে পারে।