সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদের আহবায়ক জনাব জিয়াউল হকের নেতৃত্বে গত ১৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারক প্রেরণ করা হয়েছে। স্মারকটিতে নবম বেতন কমিশন গঠন ও গ্রেড ভেদে ৩টি থেকে ৮টি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট প্রদানের দাবি পেশ করা হয়েছে। নিম্নে স্মারকটির সারমর্ম তুলে ধরা হলো।
সরকারি কর্মচারীদের নিকট হতে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার তাদের জীবনযাত্রার মান, আয়-ব্যয়ের সংগতি ও মুদ্রাস্ফীতিসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় বেতন কমিশন কার্যকরের এক/দুই বছর পূর্বে বিভিন্ন সময় মহার্ঘ ভাতা প্রদান করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতা, অর্থ বিভাগ কর্তৃক ১৯৮২, ২০০৩, ২০০৮ ও ২০১৩ সালে সরকারি সকল কর্মচারীদের ২০% হারে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান ও ব্যয় বিবেচনা করে ২০১৫ সালে জাতীয় বেতনস্কেল জারি করা হয়। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ বেতন ভাতা নিধারণ সংক্রান্ত একটি মন্ত্রিসভা কমিটি গঠনের জন্যও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন। সে আলোকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ০৯ মে ২০১৯ তারিখের ৯৩ নং প্রজ্ঞাপনে সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ বেতন-ভাতা নির্ধারণ ও পরিবর্ধনের বিষয় পর্যালোচনার জন্য সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মহোদয়েকে আহবায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয় বলে তুলে ধরা হয়।
উক্ত কমিটির কার্যপরিধিতে- (১) কমিটির সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার এবং মুদ্রাস্ফীতির সাথে সমন্বয়করণের উপায় নির্ধারণের লক্ষ্যে সার্বিক বিষয় বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক একটি সুচিন্তিত সুপারিশমালা প্রণয়ন করিবে” (২) কমিটি আগামী ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের নিকট পেশ করিবে” মর্মে নির্দেশনা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায়, উক্ত কমিটি সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি সুপারিশমালা ২০১৮ সালের শেষের দিকে অর্থ বিভাগে পেশ করেছে মর্মে জানা যায়। এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে এতদসংক্রান্ত বিষয়ে বিধিগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ উক্ত সুপারিশমালার উপর কয়েকটি মিটিং করলেও অদ্যবধি কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে বলে উক্ত স্মারকে উল্লেখ করা হয়। ফলে, আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় বর্তমান সময়ে স্বল্প বেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক দূরদশায় পড়তে হচ্ছে।
জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ জারি হওয়ার পর প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। ইতোমধ্যে সরকার বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, কল্যাণ ফান্ড, যৌথ বীমা, পরিবহন খরচসহ অন্যান্য বিল কয়েকগুন বৃদ্ধি করেছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেসরকারি বাসা ভাড়া, পরিবহণ, ঔষদপত্র-চিকিৎসা, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অনেক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ কার্যকর হওয়ার পর থেকে অদ্যবধি মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে প্রায় শতকরা চল্লিশ ভাগ।
সরকারি কর্মচারীদের প্রতিবছর একটি বার্ষিক ইননক্রিমেন্ট হিসাবে ৫০০-১০০০ টাকা বেতন বৃদ্ধি পেলেও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায় কমপক্ষে ৫০০০ টাকা যা বর্তমানে আরও অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও বর্তমান বেতনস্কেলে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা না থাকায় স্বল্প বেতনভূক্ত কর্মচারীদের সংসার পরিচালনা করতে আরও বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের এ উর্ধ্বগতির বিষয়টি বিবেচনা পূর্বক “জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ সালে বিলুপ্তকৃত টাইমস্কেল, সিলেকশনগ্রেড, জুনিয়র -সিনিয়র বেতন সমতা ও ক্লারিক্যাল পদধারীদের দক্ষতা ভিত্তিক বিশেষ ইনক্রিমেন্ট নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে পূর্বের ন্যায় বহাল করাসহ আপাতত “নবম বেতন কমিশন” গঠন ও গ্রেড ভেদে “৩টি হতে ৮টি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট” প্রদানের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদের প্রেরিত স্মারকদের কপি দেখে নিতে পারেন: ডাউনলোড