জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অন্য যে কোন ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ থেকে লাভজনক। আপনি আপনার মোট বিনিয়োগের ন্যূনতম ৫-১০% অর্থ নিশ্চিন্তে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন-Sanchaypatro Profit Rate 2024
৬ লাখ বিনিয়োগ করেছেন ৯১২ টাকা মাসে পাচ্ছেন না? হ্যাঁ। আপনার টোটাল টাকা ৫লাখ ক্রস করেছে তাই প্রথম ১৫লাখের স্লট হিসেবে এখন থেকে ৮৬৪টাকাই পাবেন ৷ তারপর যখন ১৫লাখ ক্রস করবে তখন ১৫এর পর যত লাখ তার জন্য পাবেন ৭৮৭ করে ৷ এটাই হিসাব বিজ্ঞান ৷ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতেই সরকার সঞ্চয়পত্রে স্ল্যাভ ধার্য করে দিয়েছে।
সাধারণ মহিলাদের জন্য পরিবার সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। পুরুষগণ ০৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও ০৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি মহিলা এবং পুরুষ কর্মচারীগণ (অবসরপ্রাপ্ত) উপরোক্ত সঞ্চয়পত্র ছাড়াও পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। পেনশনারগণের পরিবারের সদস্যগণও পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন।
সঞ্চয়পত্র মুনাফার হার ২০২৪ । এক লক্ষ টাকায় ৯১২ নাকি ৮৬৪ টাকা দেয় প্রতিমাসে?
পরিবার সঞ্চয়পত্রে প্রতি লাখে ৯১২ টাকা মুনাফা
আপনি যদি মহিলা হয়ে থাকেন বা আপনার স্ত্রীর নামে ০৫ বচর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র কিনেন তবে ভাল মুনাফা পাবেন। একক নামে সর্বমোট বিনিয়োগ ০৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলে প্রতিমাসে মুনাফা বাবদ ৯১২ টাকা পাবেন এবং এতে ১১.৫২% বার্ষিক সরল হারে মুনাফা প্রযোজ্য । উৎসে করসহ মুনাফা আসবে ৯৬০ টাকা। ৫% উৎসে কর বাদ দিয়েই আপনার ব্যাংক হিসাবে প্রতিমাসে ৯১২ টাকা ঢুকবে। তবে বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার কম থাকতে হবে। ৫ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৮৬৪ টাকা করে মাসে একাউন্টে ঢুকবে কিন্তু করসহ পরিশোধ দেখানো হবে ৯১২ টাকা।
সঞ্চয়পত্রে ৮৬৪ টাকা কখন?
আপনার একক নামে সর্বোমাট বিনিয়োগ ৫,০০,০০১-১৫ লক্ষ পর্যন্ত হলে প্রতি লাখে ভ্যাট বাদে মাসিক ৮৬৪ টাকা করে পাওয়া যাবে। এটি অবশ্যই ৫ লক্ষ পরবর্তী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মুনাফা। আপনার বিনিয়োগ যদি আরও বেশি হয় অর্থাৎ ১৫ লক্ষ ১ টাকা হতে ৩০ লক্ষ পর্যন্ত হয় তবে প্রতিমাসে লাখে ৭৮৭.৫০ টাকা পাবেন এবং মুনাফা রেট ১০.৫%। এ মুনাফা ১৫ লক্ষ টাকার উপরের বিনিয়োগের টাকার উপর প্রযোজ্য। বিনিয়োগ যদি ৩০ লক্ষ টাকা ক্রস করে তবে ৩০ লক্ষ টাকার উপরের বিনিয়োগের জন্য ৭১২.৫০ হারে প্রতিমাসে এ লক্ষ টাকা হারে পাবেন এবং মুনাফা রেট ৯.৫%। আপনি পরিবার সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। ৪৫ লক্ষ টাকার অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন মুনাফা পাওয়া যাবে না। বিনিয়োগ যত বাড়বে মুনাফার হার তত কমবে।
বিনিয়োগ বাড়লে মুনাফা কমবে । মুনাফা যদি স্ল্যাবভিত্তিক হিসাব করা হবে
১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বের মুনাফা প্রযোজ্য হইলেও বর্তমানে স্ল্যাবভিত্তিক মুনাফা নির্ধারণ করা হয়েছে। মুনাফার হার যেহেতু নিম্নগামী তাই ৩০ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ কোনভাবেই করা ঠিক নয়। বিনিয়োগ আপনি বিভিন্ন এসেটে করতে পারবেন। তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ এক্ষেত্রে বিনিয়োগ ১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে থাকতে হবে। সেটি এখন ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। আর এই সঞ্চয়পত্রে যাদের বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকার বেশি তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ৯ শতাংশ হারে।
৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে প্রতি লাখে ২৬২২ টাকা মুনাফা
তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই বিনিয়োগ করতে পারে। একক নামে সর্বমোট বিনিয়োগ ০৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলে প্রতি লাখে ৩ মাস পর পর ২৬২২ টাকা পাওয়া যাবে ৫% আয়কর কর্তন করার পর এবং মুনাফার হার ১১.০৪%। বিনিয়োগ যদি ৫লক্ষ টাকা অতিক্রম করে অতিক্রমকৃত বিনিয়োগের উপর প্রতি লাখে ৩ মাস পর পর পাওয়া যাবে ২৪৮৪ টাকা এবং মুনাফা রেট ১০% প্রযোজ্য হইবে। বিনিয়োগ আরও বেড়ে ৩০ লক্ষ টাকা অতিক্রম করলে লাখে তিন মাস পর পর পাওয়া যাবে ২০২৫ টাকা এবং মুনাফা রেট ৯%। যদিও মুনাফা ধরা হবে বিনিয়োগের স্ল্যাব অনুসারে।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে প্রতি লাখে ২৯৪০ টাকা মুনাফা
পেনশনার সঞ্চয়পত্রের শুধু অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারী বিনিয়োগ করতে পারে। এক্ষেত্রে পেনশন বই বা এ সংক্রান্ত প্রমানক প্রয়োজন পড়বে। পেনশনারের মৃত্যুতে তার পরিবারও সেই অর্থ দিয়ে পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। প্রতি তিন মাস পর পর লাখে ২৯৪০ টাকা পাওয়া যাবে এবং মুনাফার হার ১১.৭৬% এবং এটি ৫ বছরের জন্য বিনিযোগ করতে হয়। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত তাই ২৯৪০ টাকা আসে। বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার উপরের হলে অবশিষ্ট বিনিয়োগের উপর ৫% হার কর প্রযোজ্য হইবে বিনিয়োগের মুনাফা হইবে ১০.৭৫%। প্রতি ৩ মাস পর পর পাওয়া যাবে ২৬৪৬ টাকা এবং ১৫ লক্ষ অতিক্রম করলে পাওয়া যাবে ২৪১৮.৭৫ টাকা। বিনিয়োগ করা যাবে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তবে বিনিয়োগ ৩০ লক্ষ টাকা অতিক্রম করলে ৩ মাস পর পর লাখে পাওয়া যাবে ২১৯৩.৭৫ টাকা। মুনাফা হার হবে ৯.৭৫%।
৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে প্রতি লাখে মুনাফা ৫৩,৫৮০ টাকা মুনাফা
বাংলাদেশ সঞ্চয়তপ্র কেবল জেলা সঞ্চয় ব্যুরো অফিস হতে ক্রয় করা যাবে। সর্বোচ্চ বিনিয়োগ ৩০ লক্ষ পর্যন্ত করা যাবে। মেয়াদ শেষে লাখে ৫৩,৫৮০ টাকা পাওয়া যাবে ৫ বছর পর এবং মুনাফার হার ১১.২৮%। বিনিয়োগ বাড়লে মুনাফাও কমবে।
সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি
- সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নির্ধারিত আবেদন ফরম৷
- ক্রেতার ০২(দুই) কপি পাসপাের্ট সাইজ ছবি৷
- ক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- ক্রেতার ইটিন সার্টিফিকেটের ফটোকপি ((০২ লক্ষ টাকার বেশি ক্রয়ের জন্য) । ৫ লক্ষ টাকার অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রিটার্ণ দাখিলের রশিদ প্রয়োজন পড়বে। মোট বিনিয়োগ ৫ লক্ষ ক্রস করলেই আয়কর রিটার্ণ দাখিল সনদ লাগবে।
- এমআইসিআর চেকেরমাধ্যমে বিনিয়ােগের টাকা পরিশােধা (০১ লক্ষ টাকার বেশি হলে)।
- নমিনীর ০২(দুই) কপি পাসপাের্ট সাইজ ছবি এবং জাতীয় পরিচয় পত্রেরফটোকপি।
- নমিনী নাবালক হলে নমিনীর জন্মনিবন্ধন সনদ ও প্রত্যায়নকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য ক্রেতার পেনশন বই এর ফটোকপি এবং প্রাপ্ত আনুতােষিক এবং ভবিষ্য তহবিলের মঞ্জুরীপত্র।
আরও জানুন: সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ২০২৩
বি:দ্র: এককনামে সমন্বিত বিনিয়োগসীমা ৫০ লক্ষ এবং পেনশনারগণের ক্ষেত্রে একক নামে সমন্বিত বিনিয়োগ সীমা সর্বোচ্চ ০১ কোটি টাকা পর্যন্ত।
উদাহরণ হিসেবে দেখুন: সোনালী ব্যাংকে আমার পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ৮/৯ মাস হলো। আমি নিয়মিত লাখে ৯১২/- করে পাই। ফেব্রুয়ারি মাসে আরও তিন লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছি। তার মেয়াদ এখনো একমাসও পার হয়নি। চলতি মাসে আমার আগের পাঁচ লাখের লাভ ৮৬৪/- হারে দিয়েছে। কিন্তু কেন? যে অফিসার করে দিয়েছে সেতো এমন কিছু বলল না। তাছাড়া ওদের চাটে লেখা আছে ৫,০০,০০০/- টাকা পযন্ত ৯১২/- ও ৫,০০,০০১ থেকে ৮৬৪/- লাখে। চাট অনুয়ায়ী হলে আমার পরে রাখা ৩ লাখে ৮৬৪/- টাকা পাওয়ার কথা,আগের পাঁচ লাখে নয়। তাহলে আমি প্রথম পাঁচ লাখে ৮৬৪/- পেলাম কেন? জি। ঠিকমতই মুনাফা পেয়েছেন। আপনি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৫ লক্ষ ক্রস করলেই ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৮৬৪ টাকা প্রতি লাখে প্রযোজ্য।