সঞ্চয়পত্র খবর । ক্রয় সীমা । নগদায়ন

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর । সঞ্চয়পত্র কি, প্রকারবেধ, কোথায়, কে ও কিভাবে কেনা যায় যাবে?

সাধারণত নিম্ন বা মধ্যবিত্ত পরিবারের আয় কম ফলে তাদের সঞ্চয়ও সমান্যই। কিন্তু এই সামান্য টাকাও উপযুক্ত উৎসে বিনিয়োগ করলে ভাল মুনাফা পাওয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০,০০০ টাকারও পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। আজ আমরা সঞ্চয়পত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

সঞ্চয়পত্র কী? সঞ্চয়পত্র সেভিংস সার্টিফিকেট বা সেভিংস ইন্সট্রুমেন্টস নামেও পরিচিত। সঞ্চয়পত্র হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত একটি বিনিয়োগ প্রকল্প যা হতে সময়ে সময়ে (মাসিক/ত্রৈমাসিক/মেয়াদান্তে) মুনাফা এবং মেয়াদান্তে আসল পরিশোধ করা হয়ে থাকে। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বিক্ষিপ্তভাবে থাকা জনগণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় একত্রিতকরণের ফলে সরকারের ঘাটতি বাজেট অর্থায়নে সহায়ক হয়। এছাড়াও, দেশের স্বল্প আয়ের জনগণের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি, দেশের বিশেষ জনগোষ্ঠী যেমন- মহিলা, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় আনয়ন, বৈদেশিক নির্ভরতা হ্রাস এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সঞ্চয়পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে ৷

সঞ্চয়পত্র কোথায় কিনতে পাওয়া যায় এবং সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের যোগ্যতা কি?  ৪টি প্রতিষ্ঠান হতে সঞ্চয়পত্র কিনতে পাওয়া যায় । বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল অফিস (সদরঘাট ও ময়মনসিংহ অফিস ব্যতীত); খ. শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যতীত সকল তফসিলি ব্যাংক; গ. জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সকল সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং ঘ. ডাকঘরসমূহে ( Post Office)। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র উল্লিখিত সব প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে পাওয়া যায় না। সঞ্চয়পত্রের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুধুমাত্র জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘সঞ্চয় ব্যুরো’ কর্তৃক পরিচালিত হয়।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র কি সবাই কিনতে পারে? না।  অটিস্টিকদের জন্য প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা যে সকল প্রতিষ্ঠান অটিস্টিকদের সহায়তায় কাজ করে। তবে শর্ত থাকে যে, মুনাফার অর্থ অটিস্টিকদের সহায়তা কাজে ব্যয় হবে মর্মে সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজ সেবা অফিস হতে প্রত্যয়নকৃত হতে হবে। সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পিআরএল ভোগরত/ অবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজীবী পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে।

সঞ্চয়পত্র মুনাফার হার । বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র । সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নতুন নিয়ম

৫-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র তিনটি স্কিমের বিপরীতে সমন্বিত বিনিয়োগের উর্ধ্বসীমা একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা অথবা যৌথ নামে সর্বোচ্চ ১(এক) কোটি টাকা ।সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর উৎসে কর কর্তনের পর অর্থাৎ নীট প্রাপ্য নিম্নোক্ত কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়ে থাকে ।


সঞ্চয়পত্র মুনাফার হার
বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
সঞ্চয়পত্র ২০২২
সঞ্চয়পত্র প্রজ্ঞাপন
সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নতুন নিয়ম

সঞ্চয়পত্র বিষয়ে প্রশ্নোত্তর । চলুন দেখি সঞ্চয়পত্র যখন তখন ভাঙ্গানো যায় কিনা?

  • সঞ্চয়পত্র কখন ভাঙ্গালে মুনাফা পাওয়া যায় না ? সকল প্রকার সঞ্চয়পত্রে ১ বছর পূর্তির পূর্বে নগদায়ন/ভাঙ্গালে কোন মুনাফা পাওয়া যায় না ।
  • সকল প্রকার সঞ্চয়পত্র কি পুনঃবিনিয়োগ যোগ্য ? না, শুধুমাত্র পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পরবর্তী ১(এক) মেয়াদের জন্য স্বয়ংক্রিয় পুনঃবিনিয়োগযোগ্য।
  • সঞ্চয়পত্রে নমিনি করার প্রয়োজনীয়তা কি? উঃ ভবিষ্যতে সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা/মালিক মারা গেলে আসল ও মুনাফা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে সঞ্চয়পত্র ক্রয়কালে ক্রয় ফরমে এক বা একাধিক (সর্বোচ্চ তিন জন পর্যন্ত) ব্যক্তিকে অথবা কোন একটি প্রতিষ্ঠানকে শতকরা হারে নমিনি মনোনয়ন করা বাঞ্ছনীয়।
  • নাবালক/নাবালিকাকে নমিনি করা যায় কি ? হ্যাঁ, করা যায়।
  • সঞ্চয়পত্রের মূল মালিক মারা গেলে কে ভাঙ্গাতে পারবে ? নমিনি। নমিনি উল্লেখ না থাকলে আইনানুগ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি/ ব্যক্তিবর্গ ।
  • নমিনি না করে সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা/মালিক মারা গেলে, কে এগুলো ভাঙ্গাতে/নগদায়ন করতে পারবে ? ক্রেতা বা মালিকের মৃত্যুর তিন মাসের মধ্যে কোর্ট হতে Succession Certificate সংগ্রহ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার অনুমোদিত বা প্রদত্ত আইনানুগ ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি/উত্তরাধিকারী(Successor) এগুলো ভাঙ্গাতে পারবে।
  • বিনিয়োগকারী ও নমিনি উভয়ে মারা গেলে কে ভাঙ্গাতে পারবে ? Succession Certificate-এর বিপরীতে আইনানুগ উত্তরাধিকারী ভাঙ্গাতে পারবে।
  • সঞ্চয়পত্র কোথায় ভাঙ্গানো/নগদায়ন করা যায় ? বর্তমানে ক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল মেয়াদপূর্তিতে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে EFT-এর মাধ্যমে জমা করা হচ্ছে। মেয়াদপূর্তির পূর্বে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের প্রয়োজন হলে যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা হয়।

মুনাফা কি পোস্ট অফিসে গিয়ে তুলতে হবে?

না ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে আপনাকে আর পোস্ট অফিসে গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে ইন্টারেস্ট বা মুনাফা তুলতে হবে না। বয়স্ক মানুষদের লাইনে দাড়িয়ে টাকা না তুলে ব্যাংক হতে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। যদি ব্যাংক হতে সঞ্চয়পত্র করা হয় তবে প্রতি মাসে মুনাফার অর্থ ব্যাংক হিসাবে চলে আসবে। গ্রাহক যে কোন ব্যাংক ব্রাঞ্চ অথবা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে এ মুনাফা তুললে পারবেন।

সঞ্চয়পত্র কি, প্রকারবেধ, কোথায়, কে ও কিভাবে কেনা যায় যাবে বিষয়ে জানতে PDF ফাইলটি সংগ্রহ করুন: ডাউনলোড

সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে যে সকল ডকুমেন্টস লাগবে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *