সারা দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার জন। এসব বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণী, যারা উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। অর্ধশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৪০ শতাংশ। জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
এ পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরি হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ, চাকরির পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় টেকে থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাশ করেও ১১-২০ তম গ্রেডে চাকরি নিতে হচ্ছে এক রকম বাধ্য হয়েই। কেউ বা বেচে থাকার কারণে আবার কেউ বা আর্থিক দৈন্য দশায় ১১-২০তম গ্রেডে চাকরি করে যাচ্ছে বিসিএস বা উচ্চতর চাকরি পাওয়ার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও, কেউ বা সিদ্ধান্ত না নিতে পেরে দেশের বাহিরে খুজে নিচ্ছে তার জীবিকা। একজন ১১-২০ তম গ্রেডের চাকরিজীবী চাকরি নেওয়ার পর পরিবার ও আত্মীয় স্বজন আনন্দে আত্নহারা থাকে এই ভেবে যে, ছেলে সরকারি চাকরি করেন।
একজন চাকরিজীবীর আত্মজীবনী তুলে ধরা হলো যা পড়ে আপনি নিজেকে খুজে পাবেন:
১১-২০ গ্রেডের কর্মচারী:
বাড়ি গাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক হতে চাই না।
চাই প্রিয় মানুষদের মুখে এক চিলতে উষ্ণ হাঁসি থাকুক এটিই কাম্য।
এমণ চাকরি করি যে, প্রতিনিয়ত আমাদের প্রিয় মানুষদের সাথে দূরত্ব বেড়েই চলেছে।
মা বাবা, ছোট ভাই গ্রামের বসবাস করে সামর্থের অভাবে শহরে নিজের কাছে এনে রাখতে পারিনা।
কেন? কিভাবে? আসুন দেখে নেয়া যাক:-
১। ছোট ভাই-য়ের মাসিক প্রাইভেট খরচ ২,৫০০/-
২। ছোট ভাইয়ের মাসিক হাত খরচ ৫০০/-
৩। মাসিক ডিশ বিল ১৫০/-
৪। মাসিক বিদ্যুৎ বিল ৩০০/-
৫। হবু বউয়ের হাত খরচ ১,০০০/-( বউ তুলে আনা হয়নি)
৬। নিজ ও বাসার সবার ফ্লেক্সিলোড সব মিলিয়ে মোবাইল বিল প্রায় ২,০০০/-
৭। জিপিএফ জমা মাসিক ২,০০০/-
৮। মাসিক ডিপিএস ৫০০/- (ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত তাই কিছু জমানো)
৯। বাড়ি-ঘর মেরামত ঋণের কিস্তি পরিশোধ মাসিক ২,৫০০/-
১০। নিজের কমপক্ষে হাত খরচ ১,৫০০/-
____________________________________________
সর্বমোট:- ১২,৯৫০/- টাকা মাত্র।
বর্তমান মূল বেতন ১২,৭০০/-
সর্বসাকুল্যে বেতন ২০,০০০/- এর আস পাশ
তাহলে বাড়িতে সর্বোচ্চ ৭৩০০/- পাঠানো যায়।
এই টাকা দিয়ে এই বাজারে ৩ জনের (মা বাবা ছোট ভাই) কিভাবে ঔষুধপত্র ও বাজারঘাট করা সম্ভব???
এত অল্প টাকা বাসায় পাঠালে বাবা-মায়ের মুখে হাঁসি ফুটে না ( যদিও হাঁসি দেয়, তা শুধু ছেলে বলে)
এবার মূল কথা বলা যাক
১। গত মাসে ছোট ভাই আবদার করেছিল তাকে ১টি ক্রিকেট খেলার ব্যাট কিনে দিতে।
কমপক্ষে ১টি ব্যাট এর দাম ৮০০/-, না দেওয়াতে মুখ টা ভার।
না দিতে পেরে তাকে বুঝাতে হয়েছে তোমার সামনে পরীক্ষা ভালো করে পড়াশুনা কর ।।
২। মামা ৫,০০০/- ধার চেয়েছিল দিতে পারি নি তাই প্রায় ১মাস কথা হয় না তার সাথে ।
পরিবারের সবার কাছ থেকে কিছু খোঁচা মারা কথা শুনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
৩। বোন খুলনা থাকে বেড়াতে যেতে বলেছিল।
বরিশাল থেকে খুলনা যেতে ২জন মানুষের আসা-যাওয়া গাড়ী ভাড়া কমপক্ষে ১,৫০০/-
ছোট দুইটা ভাগ্নি তাদের জন্য কিছু খাবার কিনতে গেলেও প্রায় ১,০০০/- খরচ হয়।
খরচ মেটাবো কিভাবে তাই যেতে পারি নি। সূত্র: তাহের রাব্বি
এভাবে শুধু আমি নই, সকল ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের একই অবস্থা ঘটনা হয়তো ভিন্ন কিন্তু দশা একই। কেউ বন্ধু বন্ধবের কাছে ভীড়ে না খরচ বাড়বে বলে, কেউ বিপদে আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধবকে আর্থিক সহযোগিতা (ধার কর্জ) করতে পারে না। কেউ বা বাবা মাকে ভাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারে না, কেউ বা নিজে অসুখ থেকেও ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। কেউ গ্রামের বাড়ি যেতে চায় না বিভিন্ন রকম চাঁদা, আর্থিক সাহায্য বা সভাব সমাবেশে বাধ্য হয়ে অনুদান দেওয়ার ভয়ে।
আরও কিছু লোক আছে, প্রায়ই তাদের ধার দেনা করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে হয়, কেউ বাজারে গিয়ে ছোট মাছ খুজে, না পেয়ে বলে বাজারে আজ ভাল মাছ উঠে নাই তাই কিনতে পারিনি। কেউ দান করার মনোভাব থাকলেও মসজিদ মাদ্রাসা, ভিক্ষুক বা অসহায় মানুষদের দু’চার হাজার টাকা দান করতে পারে না। পকেট থেকে বের করতে হয় ১০-১০০ টাকা মাত্র। এভাবেই ধুকে ধুকে চলছে ১১-২০ তম গ্রেডের কর্মচারীদের চাকরি জীবন।
আওয়াজ তুলতে হবে, আমরাও কর্মক্ষেত্রে স্কুল ড্রেসের কাগড়ে শার্ট বানিয়ে পড়ে যেতে চাই না, সমাজের মানুষের ধ্যান ধারনা মত চলতে চাই। বলতে চাই সরকারি চাকরি মানেই ৪০-৫০ টাকা মাসিক বেতন না হয় পাইনা কিন্তু যা পাই তা দিয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভালভাবে বাঁচতে চাই। ১০-১২ বাজার টাকা বেতন পাই শুনলে তারা যেন আমাদের মিথ্যাবাদী বলতে না পারে, বাজারমূল্য ও সামাজিকভাবে বেঁচে থাকার মত সম্মানজনক বেতন ভাতা চাই। আপনার নিজের অধিকার আদায়ের জন্য হলেও ৭ তারিখের এ মানব বন্ধনে আপনার যোগ দেওয়া জরুরী। এটি নিজের আত্মসম্মান ও পরিবার ও সমাজের বুকে মাথা উচু করে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের অংশ। তাই দেরি না করে অবশ্যই মানববন্ধনে যোগ দিন।
বঙ্গকন্যা, দেশরত্ন অসহায়ের নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ আমলের এই বৈষম্যমূলক পে-স্কেল সংস্কার করে কর্মকর্তা কর্মচারী বেতন বৈষম্য না রেখে একটি সুন্দর ও সামঞ্জস্যপূর্ণ পে-স্কেল উপহার দিবে সেই আশায় রইলাম।