দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি কর্মচারিগণ বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলন সরকার আমলে না নিলেও সময় কিন্তু থেকে নেই, সময়ের সাথে সাথে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বর্তমান বাজার মূল্য আকাশ চুম্মী ৮২৫০ টাকা বেতন হতে বাড়ি ভাড়া ভতুর্কী, শিক্ষা, চিকিৎসায় ভর্তুকী দিয়ে মাসের বাজার করার যে অর্থ অবশিষ্ট থাকছে তা দিয়ে কোন ভাবেই বেচেঁ থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
দফায় দফায় বাড়তে থাকা ব্রয়লার মুরগি গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০টাকা। এক মাসে আগে যা তিনি কিনেছেন ১২০ টাকায়। আর সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। গতকাল এটি বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা কেজি। মুরগির বাজারের এমন উর্দ্ধগতি দেখে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের দম বন্ধ হয়ে আসে।
তাছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও যারা চাকরি করেন করোনায় তাদের বেতন-ভাতা কমে গেছে। কোন মতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় টিকে আছে কেউ কেউ। তাদের কপাল থেকে গরু, খাসির মাংস অনেক আগেই উঠে গেছে। মাসে এক-দুদিন পরিবার নিয়ে মাংস-ভাত খাবে এখন তার উপায়ও নেই। সোনালী মুরগির কেজি ৩২০ টাকা হয়ে গেছে। এতদাম দিয়ে সন্তানদের মুরগি কিনে খাওয়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে। এজন্য অনেকেরই খালি হাতেই বাসায় ফিরতে হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বুধবার থেকে আবারো রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে পরিমাণ নিত্যপণ্য প্রয়োজন তা সরবরাহ করতে পারছে না টিসিবি। তাই টিসিবির ট্রাকের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ।
স্বল্প আয়ের মানুষেরা বলছেন, কম দামে পাই বলে নিয়মিত টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনি। কিন্তু দিনদিন ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। টিসিবির ট্রাক থেকে আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষরা বাজারের চেয়ে কম দামে তেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ কিনতে পারতাম। সারা বছর এটা চালু রাখলে আমরা বাঁচতে পারি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, ওই দামে কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ১১-২০ গ্রেডের নিম্ন উল্লিখিত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন ছাড়া সরকারি কর্মচারিদের মধ্যে স্বস্থি আনা সম্ভব নয়।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ বিশ্লেষণ ও উচ্চপদস্থদের বেতন ভাতাদি তথ্য ঘাটলে দেখা যায়, বর্তমানে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মূল বেতন ৮২ হাজার টাকা। এছাড়াও তিনি বাসা ভাড়া হিসেবে পাচ্ছেন ৪১ হাজার টাকা। গাড়ী রক্ষণাবেক্ষনের জন্য পাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা। রান্না করার জন্য বাবুর্চির বেতন এবং দারোয়ানের জন্য পাচ্ছেন ১৬ হাজার করে। টেলিফোন বিল এবং সভার সম্মানিসহ মাসে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা পাচ্ছেন তিনি। বছরে তিন থেকে পাঁচটি বিদেশ সফরে পান অতিরিক্ত কয়েক লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০ তম গ্রেডের একজন কর্মচারী সর্বসাকুল্যে বেতন পাচ্ছেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই তাকে বাড়ীভাড়া, খাবারসহ সব ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎবিল, গ্যাসবিলসহ সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে ৭ হাজার টাকা। এর পর পুরো মাসের খরচ চালানোর জন্য তার হাতে থাকে মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তাকে পুরো মাসের সংসারের খরচ, পরিবারের কাপড়সহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হয়। এর বাইরে তার আয়ের আর কোনো উৎস নেই। বেতনের আকাশ পাতাল বৈষম্য থাকলেও দৈনন্দিন খরচে নেই খুব বেশি পার্থক্য। ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের মাসের ১৫ দিন না অতিবাহিত হতেই শুরু হয় টানাটানি।
২০ থেকে ১১তম গ্রেডের কর্মচারীদের মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকায় শুরু হয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় শেষ হয়। এই ১০টি গ্রেডের বেতন স্কেলের মোট পার্থক্য ৪২৫০ টাকা। পাশাপাশি ১০ থেকে প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে ৭৮ হাজার টাকায় শেষ হয়। এই ১০টি গ্রেডের পার্থক্য ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে গাড়ি, আবাসনসুবিধা, সুদমুক্ত গাড়ির ঋণসহ নানাবিধ সুবিধা। অথচ প্রত্যেকে একই বাজারব্যবস্থার কাঠামোর আওতায় জীবন ধারণ করেন, এতে শ্রেণী বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে নানাভাবে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সরকারি কর্মচারীরা। তারা পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বহুবার। মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন দীর্ঘদিন।এমন প্রেক্ষাপটে এ বছরের শুরু থেকে সারা দেশের কর্মচারীরা ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম, বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস) ব্যানারে টানা আন্দোলন করেন।