সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য থাকায় তৈরি হয়েছে বোনাস বৈষম্যও। আমি আজ আপনাদের মাঝে ১০ জন কর্মকর্তা ঈদুল আযহাতে কত টাকা বোনাস পাবেন এবং ১০ জন কর্মচারী কত টাকা বোনাস পাবেন তা তুলে ধরবো। তারা একই কলোনীতে বসবাস করলে অথবা গ্রামে গেলে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের যে সকল সমস্যায় পড়তে হয় তাই তুলে ধরবো। কতটা হেনমান্যতা এবং আর্থিক দেনায় পড়ে যান সেটিই ব্যাখ্যা করবো।

আসুন ১১-২০ গ্রেডের ১০ জন কর্মচারীর ঈদ বোনাস দেখে নিই
  1. নিরাপত্তা প্রহরী ১২২৪০/-
  2. অফিস সহায়ক ১১৬৫০/-
  3. অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ১১৮৯০/-
  4. ড্রাইভার ৯৭৬০/-
  5. মালী ১৭০৬০/-
  6. টেকনিশিয়ান ১০৭১০/-
  7. সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর ১৪০৫০/-
  8. স্টোর কিপার ৯৭৭০/-
  9. উচ্চমান সহকারী ১৩৭১০/-
  10. হিসাবরক্ষক ১৩৭১০/-

একটি প্রতিষ্ঠানের ১০ জন কর্মচারীর মোট ঈদ বোনাসের পরিমাণ মাত্র ১,২৪,৫৫০ টাকা মাত্র।

আসুন ১-১০ গ্রেডের ১০ জন কর্মচারীর ঈদ বোনাস দেখে নিই
  1. নিরাপত্তা কর্মকর্তা ৩৯৩৯০/-
  2. ট্রান্সপোর্ট অফিসার ৪১,৫৬০/-
  3. আবাসিক প্রকৌশলী ৭৪,৪০০/-
  4. সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ২৪,২৬০/-
  5.  উর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়ার ৩৭,২৮০/-
  6. সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ২৫,৪৮০/-
  7. সহকারী প্রকৌশলী ২৯,৫১০/-
  8. সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ৭১,২০০/-
  9. উর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়ার ৬১,২০০/-
  10. উর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়ার- ৫১,৩০০/-

একটি প্রতিষ্ঠানের ১০ জন কর্মকর্তার মোট ঈদ বোনাসের পরিমাণ মাত্র ৪,৫৫,৫৮০ টাকা মাত্র।

কর্মচারীর ঈদ ও কোরবানি

আমরা যদি গড় হিসাব দেখি তাহলে একজন কর্মচারী ১,২৪,৫৫০/১০ = ১২,৫৫০ অর্থাৎ ১২-১৪ হাজার টাকা উৎসব ভাতা বাবদ পেয়ে থাকেন। তিনি যদি শেয়ারেও কোরবানি দেন তবে ১৫-২০ হাজার টাকা প্রতি অংশের জন্য ব্যয় হবে। তারমানে তিনি যদি কোরবানিতে অংশ গ্রহণ করেন তবে তিনি মাংস ছাড়া আর কোন কিছুই উৎসব ভাতা থেকে পাচ্ছেন না। যদি তিনি উৎসব ভাতার অর্থ দিয়ে ঈদের বাজার সদাই করেন, পরিবারের জন্য কাপড় চোপর কেনা কাটা করেন তবে কোরবানি দেয়ার নিয়ত ত্যাগ করতে হবে। এভাবে যদি ঈদের পর ঈদ পার করে দেন তিনি কোনদিনও কোরবানিতে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। তিনি যে উৎসব ভাতা পান তাতে কোরবানি দিলে ঈদ উৎসব কেনাকাটা হবে না, আর কেনা কাটা ঈদ উৎসব করলে কোনদিনই কোরবানি দিতে পারবেন না।

বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কিছুই

বাস্তবতা হচ্ছে ১১-২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীকে সমাজে সামাজিকতা টিকিয়ে রাখতে বা তার নিয়ত পূরণ করতে হলে ঋণ করে বা ধার কর্জ করেই কোরবানি দিতে হবে। এখন হয়তো অনেকে বলবেন বেতন ভাতা থেকে কি সঞ্চয় করা যায় না? এ কথার উত্তর আর কি দেব ভাই, প্রতি মাসের বেতন ভাতায় সংসার চালানোই যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে সঞ্চয় সে তো উচ্চবিলাশ মাত্র। যাহোক তাহলে একজন ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীকে কোরবানি দিতে হলে কি করতে হবে? তিনি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত খেটে ধার বা ঋণ পরিশোধ করতে হবে অথবা অসৎ পয়সায় ধার পরিশোধ করতে হবে। একজন সৎ সরকারি কর্মচারীর ভেতরের কান্না কেউ বুঝতে পারে না শুধুমাত্র তিনিই জানেন যে, কিভাবে প্রতিমাসে সংসার চালায় আর কিভাবে কোরবানির ঋণের অর্থ পরিশোধ করেন। একজন নিম্ন গ্রেডের কর্মচারী বা ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারী যদি বেতন বৈষম্যের স্বীকার না হতো তাহলে হয়তো সৎভাবে জীবনযাপন করেও কোন এক সময় উৎসব ভাতার অর্থ দিয়ে কোরবানিতে অংশগ্রহন করতে পারতো। ২০ গ্রেড থেকে ১১ গ্রেড পর্যন্ত সকল কর্মচারী যে পরিমাণ উৎসব ভাতা পায় তা দিয়ে কোরবানি করার নিয়ত করাই দূরহ হয়ে গেছে। অথচ পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন সবাই তাকিয়ে থাকে যে ওনি সরকারি চাকরি করেন, কোরবানি তো দিবেনই সাথে আমাদের আর্থিক সাহায্য সহযোগিতাও করবেন। বিষয়টি হাস্যরসের পর্যায়ের, এই ভেবে যে, আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী এমনকি পরিবার ভাবে ৪০-৫০ হাজার টাকার কম বোনাস পায় না। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন ও খুবই কষ্টের। বোনাস পাওয়ার পর একজন কর্মচারীর মুখেও হাসি দেখা যায় না। এটাই বাস্তবতা।

কর্মকর্তার ঈদ ও কোরবানি

আমরা যদি গড় হিসাব দেখি তাহলে একজন কর্মকর্তা ৪,৫৫,৫৮০/১০ = ৪৫,৫৫৮ অর্থাৎ ৪৫ হাজার টাকা উৎসব ভাতা বাবদ পেয়ে থাকেন। আপনি হয়তো বলবেন একজন সদ্য চাকরিতে ঢোকা বিসিএস কর্মকর্তা ১১-২৫ হাজার টাকা বোনাস পান মাত্র। হ্যাঁ আপনার সাথে একমত। তিনি মাত্র ৫ -৬ বছরেই তিনি ৩৫৫০০ টাকার স্কেলে ৬ষ্ঠ গ্রেডে চলে যান। তাছাড়া চাকরির শুরুতে যারা ২৫ হাজার বোনাস পান তখনও তিনি ব্যাচেলর। তিনি যদি শেয়ারেও কোরবানি দেন তবে ১৫-২০ হাজার টাকা প্রতি অংশের জন্য ব্যয় হবে। তব তারমানে তিনি যদি কোরবানিতে অংশ গ্রহণও করতে পারেন এবং পরিবারের জন্য কেনাকাটাও করতে পারবেন এবং অবশিষ্ট অর্থ ডিপোজিট রাখতে পারেন। অর্থাৎ একজন কর্মকর্তা ৪০-৪৫ হাজার টাকা বোনাস পেয়ে কোরবানিতে অংশগ্রহণ করেও তিনি ভালভাবে উৎসব করতে পারবেন আবার কেউ চাইলে গরুর অর্ধাংশও নিজেই দিতে সক্ষম। তাতেও ধার কর্জ করতে হবে না। পরিবারি নিয়ে সুন্দর ভাবে ঈদ উদযাপনের জন্য ভাল মানের একটি বোনাস।

বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কিছুই

বাস্তবতা হচ্ছে ১-১০ গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা তার প্রাপ্ত বোনাস দিয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানিতে অংশ গ্রহণ করেন। খুব কম কর্মকর্তাই আছেন যারা পুরো অর্থ ব্যয় করে কোরবানিতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন। বোনাস দিয়ে তারা সামাজিকতা রক্ষাও করতে পারে আবার পরিবার নিয়ে আনন্দ করে হইহুল্লোর করে কেনা কাটাও করতে পারেন। কেউ কেউ কোরবানি, কেনাকাটা করেও বোনাসের অর্থ ব্যাংকে ডিপোজিট রাখেন। বোনাসের আনন্দটা কেবল কর্মকর্তারাই অনুভব করতে পারেন।

ক্রিটিক্সদের আলোচনা

এত কম টাকা বোনাস পেয়ে কর্মচারীদের কোরবানি দিতে হবে কেন? ভাল করে শুনুর যদি কর্মচারীরা কোরবানি না দেয় তবে কোরবানিতে সমাজে গরীবেরা ঈদ করার জন্য মংসই পাবেন না। কর্মকর্তাদের কোরবানির দিকে তাকিয়ে থাকা সমাজের মানুষ কোনভাবে কোরবানির ঈদ আনন্দ ভরে করতে পারবে না। কেউ বলবেন এগুলো মেনেই তো চাকরি নিয়েছেন তাই না? কর্মচারীরাতো সামাজেরই অংশ তাদেরকে সমাজেই বসবাস করতে হয়, তাই ইসলামিক নির্দেশনা, সামজিকতা রক্ষা ও বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়িকদের পাশাপাশি সরকারি ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদেরও কোরবানিতে অংশ গ্রহণ করতে হয়। কোরবানিতে অংশ গ্রহণের কথা তাদেরও মাথায় রাখতে হয় পরিবার ও সামাজের কাছে যাতে হেয় প্রতিপন্ন না হতে হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। কর্মচারী বলে তাদেরকি আত্মসম্মান বোধ থাকতে নেই? তাদের কি ইচ্ছা বিকেবোধ ও আত্ম মর্যাদা থাকতে নেই? মূল বেতন অনুসারে বোনাসের প্রাপ্যতার রীতি অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক। তাছাড়া বেতন বৈষম্য দূর হলে বোনাস বৈষম্যও দূর হবে। ব্রিটিশ আইন এবং রীতিনীতিগুলো এখনও সরকারি দপ্তরগুলোতে বিদ্যমান রয়েছে এগুলোর সংস্কার হওয়া জরুরী।

বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী, দেশনেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এ সমাস্যা আশু সমাধান করা সম্ভব। পে স্কেলটি সংশোধনের মাধ্যমে কর্মচারীদের ঈদ বোনাস নাম এই লজ্জার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে তিনি আমাদের দেশ দরদী সরকার প্রধান। তিনি হস্তক্ষেপ করলেই কেবল আমলাতান্ত্রিক এ জটিল সমস্যার সমাধান হতে পারে।

admin

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

admin has 2985 posts and counting. See all posts by admin

3 thoughts on “বোনাস বৈষম্য ২০২৪ । কেউ পায় ৮,২৫০ টাকা, কেউ পায় ৭১,২০০ টাকা।

  • আমি এখনো টাকা পাইনি আমার বিকাশ নাম্বার 01701611946

  • এখনো আমি পাই নাই
    এটা আমার নগদ নাম্বার, 01834386096

  • অপেক্ষা করুন পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *