সরকারি কর্মচারীদের নিজ অফিসে নিয়মিত উপস্থিতির বিষয়ে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করছে সরকার। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালা- ২০১৯ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে। মূলত ‘গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ, ১৯৮২’ পরিমার্জন করে নতুন বিধিমালা করা হচ্ছে। খসড়া বিধিমালাটি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠিয়ে মতামত নিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিধি) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, কিছু বিধিমালা না হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন এখনও বাস্তবায়নে যায়নি সরকার। সংশ্লিষ্ট বিধিগুলো প্রণীত হলে এ আইন বাস্তবায়নে যাবে সরকার। উপস্থিতি বিধিমালা তেমনই একটি বিধিমালা। ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’ এর আওতায় সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
খসড়ার বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হচ্ছে জানিয়ে যুগ্ম সচিব আরো বলেন, ‘সবার মতামত নিয়েই এটি চূড়ান্ত করা হবে। ১৯৮২ সালের গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ ছিল, সেটি আদালতের রায় অনুযায়ী বাতিল হয়েছে। এখন ওই অধ্যাদেশটি যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে।’
যুগ্ম সচিব বলেন, আশা করি নতুন বিধিমালা সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিতে আরও সহায়ক হবে।
খসড়া নীতিমালায় যা আছে: সরকারি কর্মচারীর অফিসে যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিতে প্রত্যেক অফিসে নির্ধারিত হাজিরা বইতে স্বাক্ষর গ্রহণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ হাজিরা বই সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অফিস সময় শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে উপস্থাপন করতে হবে। বিলম্বে উপস্থিত কর্মচারীর নামের পাশে লাল কালি দিয়ে বিলম্ব উপস্থিতি চিহ্নিত করতে হবে। এ ব্যবস্থার পাশাপাশি বা বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল হাজিরা ব্যবস্থা চালু করা যাবে। সেক্ষেত্রে উপস্থিতি নিশ্চিতে অফিসপ্রধান এক বা একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োজিত করতে পারবেন।
এতে আরো বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী ছুটিতে যেতে বা নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সার্টিফিকেট ও দুর্ঘটনার বিষয়ে যথাযথ সাক্ষ্যপ্রমাণের মাধ্যমে সমর্থিত হলে গুরুতর এবং আকস্মিক অসুস্থতা বা হঠাৎ দুর্ঘটনার জন্য অননুমোদিত অনুপস্থিতি সন্তোষজনক বলে গ্রহণযোগ্য হবে।
কোনো কর্মচারী অনুমতি ছাড়া অফিসে অনুপস্থিত থাকলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর যুক্তিসংগত সুযোগ দিয়ে কর্মচারীর প্রতিদিনের অনুপস্থিতির জন্য একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কেটে নিতে পারবেন বলে খসড়া বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী অফিস ত্যাগ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, জরুরি প্রয়োজনে অফিস ত্যাগের ক্ষেত্রে সহকর্মীকে অবগত করে নির্ধারিত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। নির্ধারিত রেজিস্টারে কর্মচারীর নাম, পদবি, অফিস ত্যাগের কারণ, অফিস ত্যাগের সময় ও আসার সম্ভাব্য সময় লিপিবব্ধের ব্যবস্থা থাকবে।’
বিধিমালা অনুযায়ী, পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী অফিস ত্যাগ করলে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে প্রতিক্ষেত্রের জন্য ওই কর্মচারীর একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটতে পারবে।
কোনো সরকারি কর্মচারী যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া দেরিতে অফিসে উপস্থিত হতে পারবেন না উল্লেখ করে বিধিমালায় বলা হয়েছে, এ বিধান লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে প্রতি দুদিনের বিলম্বে উপস্থিতির জন্য একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটা যাবে।
এছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী ৩০ দিনের মধ্যে একাধিকবার বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ ও দেরিতে অফিসে উপস্থিত হলে ওই কর্মচারীর আরও অতিরিক্ত সাতদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটা যাবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারীর বেতন কাটা হলে তিনি তিন কার্যদিবসের মধ্যে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। পুনর্বিবেচনার কোনো আবেদন করা হলে, আদেশ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে শুনানির যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দিয়ে, বেতন কর্তনের আদেশ সংশোধন বা বাতিল বা বহাল রাখতে পারবে। পুনর্বিবেচনার আবেদন শুনানির ক্ষেত্রে সাক্ষ্যের সংক্ষিপ্তসার, প্রাপ্ত তথ্যাদি ও সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করতে হবে।
দণ্ডের অর্থ কর্তন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীর মাসিক বেতন বিল থেকে দণ্ডের অর্থ কেটে আদায় করতে হবে। ওই কর্মচারী নিজের বিল নিজে উত্তোলনকারী হলে, তাকে বেতন বিল থেকে দণ্ডের অর্থ কাটার নির্দেশ দিতে হবে। নির্দেশের কপি নিরীক্ষা অফিসে পাঠাতে হবে। ওই কর্মচারী বেতন বিল থেকে দণ্ডের অর্থ কর্তন না করলে নিরীক্ষা অফিস তা কেটে বিল পাস করবে বলে সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র: বিডি-জার্নাল