একজন সরকারি কর্মচারীর চাকরিকালে তার চাকরি সংক্রান্ত তথ্য একটি বইয়ে সংরক্ষণ করা হয় সেটিকে বলা হয় সার্ভিস বুক বা চাকরির খতিয়ান বই। খতিয়ান বই কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, কে সংরক্ষণ করবেন, কি সংরক্ষণ করবে এবং এর ভুল ক্রটির জন্য কে দায়ী তাই আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস অর্থাৎ BSR এর পার্ট-১ এর পরিশিষ্ট-৮ অনুসারে সার্ভিস বুক সংরক্ষণ করতে হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
প্রথমে জানবো সার্ভিস বুক সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা:
কর্মকর্তা/ কর্মচারীর অবসর ভাতা নির্ণয়, মূল বেতন, চাকরির কাল, ছুটির হিসাব, বেতন বিবরণী তৈরি ইত্যাদি কারণো সার্ভিস বুক সংরক্ষণ করতে হয়।
কে সংরক্ষণ করবে এবং কিভাবে:
গেজেটেড কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে হিসাব রক্ষণ বা অডিট অফিস চাকরির বিবরণী বা বৃত্তান্ত সংরক্ষণ করবেন। অন্য দিকে কর্মচারী তথা নন-গেজেটেড কর্মচারীদের সার্ভিস বই বা মূল খতিয়ান বহি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অফিস প্রধান সংরক্ষণ করবেন।
কি তথ্য সংরক্ষণ করতে হয় এবং পদ্ধতি কি?
ক) দুই কপি: নন গেজেটেড কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সার্ভিস বুই দুই কপি সংরক্ষণ করতে হয়। এক্ষেত্রে নিজ খরচে কর্মচারী তার নিজের কাছে একটি কপি সংরক্ষণ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধানের নিকট এক কপি সংরক্ষণ করবেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি লিপিবদ্ধ সংম্পন্ন করে অফিস প্রধান কর্তৃক দু’কপিই সত্যায়ন করতে হবে।
খ) তথ্যাবলী: তথ্যাবলী সঠিক ও সুশৃঙ্খল, তারিখ ওয়াইজ সংরক্ষণ করতে হবে। কোন ভাবে এলোমেলো ভাবে সার্ভিস বুকে তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে না।
গ) ৫ আঙ্গুলের ছাপ: সার্ভিস বুকের প্রতিটি বইয়ে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ, জন্মতারিখ, যোগদানের তারিখ, স্থায়ী ঠিকানা সঠিক ও নিয়মিত ভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
ঘ) জন্ম তারিখ: সার্ভিস বুকে জন্ম তারিখ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি কোন ভাবেই কাটাকাটি বা ওভাররাইটিং গ্রহণ যোগ্য নয়। এটি পরিবর্তন যোগ্য নয়। তাই এটি লিপিবদ্ধকরণে সতর্ক থাকতে হবে।
ঙ) নিয়োগের রেফারেন্স, পদবী, বেতন স্কেল, মূল বেতন, যোগদানের তারিখ: চাকরির খতিয়ান বইয়ে নিয়োগের রেফারেন্স সংরক্ষণসহ লিপিবদ্ধ করতে হবে, পদবী লিপিবদ্ধ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, বেতন স্কেল, মূল বেতন , যোগদানের তারিখ ইত্যাদি সুষ্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে কিনা। এ সংক্রান্ত ভুল ত্রুটির জন্য অফিস প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী অর্থাৎ যার সার্ভিস বুক তিনিও দায়ী থাকবে।
চ) কর্মজীবনের প্রতিটি ধাপ লিপিবদ্ধ: কর্মচারী জীবনের প্রতিটি ধাপ সার্ভিস বইতে সংরক্ষণ করতে হবে। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে অফিস প্রধান কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে। সত্যায়ন করতে হবে তৎকালীন অফিস প্রধান কর্তৃক।
ছ) বদলি, পদোন্নতি, ডিমোশন, চাকরির বিরতিকাল: কোন কর্মচারী বদলি হলে বদলি সংক্রান্ত তথ্য লিপিবদ্ধ থাকতে হবে, পদোন্নতি বা ডিমোশন হলেও তা সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দপ্তর প্রধানের স্বাক্ষর থাকা বাঞ্চনীয়। অসাধারণ ছুটি বা কোন কারণে সার্ভিস কালে বিরতি থাকলে তা লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।
জ) চারিত্রিক প্রত্যয়ন: সার্ভিস বুকে চারিত্রিক প্রত্যায়ন করতে হবে অবশ্যই বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি লাগবে। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষে অনুমতি ব্যতিত সার্ভিস বুকে চারিত্রিক প্রত্যয়ন করা যাবে না।
ঝ) ওভার রাইটিং: কর্মচারীদের সার্ভিস বুক এ কোন ক্রমেই কাটাকাটি বা ওভার রাইটিং করা যাবে না। যদি ওভার রাইটিং হয়েই যায় তবে তা এক টানে কেটে লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে অফিস প্রধান কর্তৃক সত্যায়ন করতে হবে।
ঞ) যাচাই: অফিস প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী অর্থাৎ যাহার সার্ভিস বুক তিনি নিজে বাৎসরিকভাবে ন্যুনতম একবার সার্ভিস বুক যাচাই করে দেখবে। অফিস প্রধান সার্ভিস বুক যাচাই করে প্রত্যায়ন করবেন। অন্য দিকে সংশ্লিষ্ট কর্মচারি যদি সার্ভিস বই যাচাই করে দেখতে চান তবে অফিস প্রধান বরাবর আবেদন করে নিতে পারবেন এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে জমা দিবেন।
চ) সত্যায়ন: যেখানেই সত্যায়ন করা হোক না কেন অবশ্যই সিল থাকা বাধ্যতামূলক।
চাকরির খতিয়ান বহি হারিয়ে গেলে করণীয় কি?
নতুনভাবে চাকরির বই খুলতে হবে। হিসাবরক্ষণ অফিসে আলোচনা করতে হবে। তার সাথে যোগদানকৃত কর্মচারীর তথ্য অনুসরণ করতে হবে এবং অফিস প্রধান সেটি সত্যায়ন করবে।
পেনশন গ্রহণের পর সার্ভিস বই ফেরত নেয়া যায় কি?
পেনশন গ্রহনের পর হিসাব রক্ষণ অফিসে আবেদন করে নিজ সার্ভিস বুক ফেরত নেয়ার বিধান রয়েছে। বিএসআর-১ এর পরিশিষ্ট ৮ অনুসারে একজন কর্মচারী চাকরি শেষে তার সার্ভিস বুক ফেরত নিতে পারবে।
তথ্য সূত্র: হিসাবরক্ষণ অফিস (মৌখিক)