বর্তমানে সাধারণ মানুষের নিকট পড়ে থাকা অলস অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্র দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিটে বার্ষিক ৪-৫% হারে ইন্টারেস্ট দিচ্ছে। ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারছে না বলে, ব্যাংকগুলো অতিমাত্রায় অলস আমানত পড়ে আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক অলস অর্থের অপব্যবহার রোধে ব্যাংকগুলোর নিকট পড়ে থাকা অর্থ ১.৬%-১.৮% সুদে কুক্ষিগত করছে।

সঞ্চয়পত্র কিনলে কর ছাড় পাওয়া যায়। একজন করদাতা বর্তমানে বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে তার বিপরীতে ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পেয়ে থাকেন। এর বেশি কিনলেও তা রেয়াতযোগ্য হিসাবে গণ্য করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তির বার্ষিক আয় চার লাখ টাকা থাকলে এক লাখ বিনিয়োগ কর রেয়াতযোগ্য হিসাবে গণ্য হবে। সে হিসাবে তিনি ১৫ হাজার টাকা কর ছাড় পাবেন।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র শুধু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী/স্ত্রী/সন্তান কিনতে পারবেন। একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। তিন মাস অন্তর ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে মুনাফা দেওয়া হয়। অবশ্য সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে যে মুনাফা দেওয়া হয়, তা থেকে উৎসে কর হিসাবে ৫-১০ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয়।

সাধারণ মানুষের জন্য ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্রই একমাত্র ভরসা। বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এখন আর ব্যাংক থেকে ক্রয় করা যাবে না। আজ আমরা মূলত ৩ অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র প্রসঙ্গে আলোচনা করবো।

পরিবার সঞ্চয়পত্র- পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এখন এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার সাড়ে ৯ শতাংশ।

৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা / ৫ লক্ষ টাকার উর্ধ্বে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা

টিন সার্টিফিকেট ব্যতীত ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যাবে / মোট সঞ্চয়পত্র ক্রয় দুই লক্ষ টাকার অধিক হলেই টিন লাগবে।

পরিবার সঞ্চয়পত্র

ছবি: সঞ্চয়পত্র মুনাফা হার / মুনাফার উপর আয়কর কর্তনের হার

সঞ্চয়পত্র স্ল্যাবভিত্তিক মুনাফা ২০২৪ । সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের উপর ট্যাক্স ও সর্বোচ্চ ক্রয়ের পরিমান

  1. ৫ বছরে ৫ লক্ষ টাকা ৫% উৎসে কর কর্তন বাদে বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ১১.২৮ শতাংশ হারে মেয়ান্তে ৫৩৫৮০ টাকা মুনাফা পাওয়া যাবে।
  2. ৩ বছরে ১ লক্ষ টাকায় ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১.০৪ শতাংশ হারে প্রতিমাসে ত্রৈমাসিক ২৬২২ টাকা পাওয়া যাবে।
  3. ৫ বছরে ১ লক্ষ টাকায় পরিবার সঞ্চয়পত্র ১১.৫২ শতাংশ হারে প্রতি লাখে মাসে ৯১২ টাকা পাওয়া যাবে।
  4. ৫ বছরে ১ লক্ষ টাকায় পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১.৭৬ শতাংশ হারে প্রতি ত্রৈমাসিক ২৯৪০ টাকা পাওয়া যাবে।
  5. যদি বর্তমান বিনিয়োগ ৩টি স্ল্যাবে ভাগ করা হয়েছে। ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১১.৫২% মুনাফা, ১৫ লক্ষ হতে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০% মুনাফা এবং ৩০ লক্ষ টাকা উপরের বিনিয়োগ অংশে ৯.৫% হারে মুনাফা প্রযোজ্য হইবে।

পুরুষ মানুষ ১ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনলে কত পাওয়া যাবে প্রতিমাসে?

একজন পুরুষ মানুষ পরিবারি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কিনতে হবে। এ সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে ১ লক্ষ টাকা প্রতি তিন মাস পর পর ২৬২২ টাকা মুনাফা দেওয়া হয়। এটি ৫ বছরের জন্য রাখতে হবে। চাইলে আপনি ৫ বছরের আগেও ভাঙ্গাতে পারবেন সেক্ষেত্রে মুনাফা কর্তন হবে। সাধারণ ছেলেদের জন্য প্রতিমাসে মুনাফা প্রাপ্তির কোন সঞ্চয় স্কিম নাই।

লাখপ্রতি মুনাফা

এখন মুনাফার হিসাব কিভাবে করে?

প্রারম্ভিক জমা ও চাঁদা স্থিতির উপর স্লাবভিত্তিক মুনাফা নির্ণয় পদ্ধতি- প্রথম ধাপ: ১৫ লক্ষ টাকার উপর ১৩% হার প্রযোজ্য হইবে সে হিসাব অনুযায়ী ১৫,০০,০০০*১৩% = ১,৯৫,০০০ টাকা। দ্বিতীয় ধাপ: ১৫ লক্ষ টাকা অর্থাৎ ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১২% হারে ১৫,০০,০০০*১২% = ১,৮০,০০০ টাকা। তৃতীয় ধাপ: ৪২ লক্ষ টাকা অর্থাৎ ৩০ লক্ষ তদুর্ধ্ব পর্যন্ত ১১% হারে ৪২,০০,০০০*১১% = ৪,৬২,০০০ টাকা। চতুর্থ ধাপ: ২ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা অর্থাৎ ক্রম স্থিতির উপর ১১% হারে ২,১৩,০০০*০.৮৪৫ = ১৫,০৪১ টাকা।

স্ল্যাব ভিত্তিক জিপিএফ মুনাফার নির্ণয় করার নিয়ম ২০২২