৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রটি মূলত বয়স্ক পুরুষদের সামাজিক আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। যারা কোন ব্যবসা বানিজ্য বা সঞ্চিত অর্থ অন্য কোন খাতে বিনিয়োগ করতে অপারগ তাদের আর্থিক নিরাপত্তা বা অর্থ বিনিয়োগের জন্য সরকারি ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র চালু করেছে।

সর্বনিম্ন কত টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়?

তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ২০০৪ সালে চালু হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশী যে কোন নাগরিক এটি ক্রয় করতে পারেন। এটি সাধারণত ১,০০,০০০ টাকা; ২,০০,০০০ টাকা; ৫,০০,০০০ ও ১০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের হয়ে থাকে। পরিবার সঞ্চয়পত্রের মত মাত্র ১০ হাজার টাকা ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যায় না। তবে নারীরাও ক্রয় করতে পারে।

৩মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কোথায় পাওয়া যায়?

জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক শাখাসমূহ বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে ক্রয় ও নগদায়ন করা যায়। মোট কথা আপনি আপনার জেলার জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো অফিস হতে এটি ক্রয় করতে পারবেন এছাড়াও আপনি ডাকঘর বা পোস্ট অফিস হতেও এটি ক্রয় করতে পারবেন। বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেমন, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এখন ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে। আপনি যেখান থেকেই ক্রয় করেন না কেন এটি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অনুকূলে জমা হবে। ব্যাংক থেকে কিনলে সুবিধা হচ্ছে প্রতি ৩ মাসের মুনাফা লাইনে দাড়িয়েঁ তুলতে হবে না। ৩ মাস শেষে মুনাফা আপনার ব্যাংক হিসাবে এসে জমা হবে। ব্যাংক বন্ধ হলেও আপনার অর্থ হারাবে না কারণ ব্যাংক শুধু সঞ্চয়পত্র বিক্রেতা এটির অর্থ গচ্ছিত থাকে সরকারি কোষাগার অর্থাৎ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরে।

৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কয় বছরের জন্য ক্রয় করতে হয়?

৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ ৩ বছর মেয়াদে ক্রয় করা যায়। তবে আপনি চাইলে এক বছর পর ভেঙ্গে ফেলতে পারেন সেক্ষেত্রে ১ বছরে আপনি যে হারে মুনাফা পাবার কথা সেই হারেই পাবেন। বছর পূর্ণ না হলে সে বছরের মুনাফা প্রাপ্য হবেন না। যদি আপনি মাসে মাসে অর্থ উত্তোলন করে থাকেন তবে আপনার প্রকৃত জমাকৃত বিনিয়োগ থেকে উত্তোলিত মুনাফা এবং মুনাফার হার সমন্বয় করে কেটে রেখে দেওয়া হবে। মোট কথা আপনি চাইলেও ৩ বছরের কম সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন না। আবার যদি চান ৩ বছরের অধিক সময়ের জন্য বিনিয়োগ করবেন সেটিও সম্ভব নয়। ৩ বছর মেয়াদ শেষে মূল টাকা আপনার ব্যাংক হিসাবে এসে জমা হয়ে থাকবে আপনি চাইলে পুনরায় ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে আবার ৩ বছরের জন্য সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ফরম ২০২২ । বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়পত্র ফরম PDF এবং Word DOC ফাইল ফরম্যাট ২০২২

৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ফরম

সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা(গণ) এর {প্রযােজ্য ক্ষেত্রে নমিনি(গণ)/উত্তরাধিকারী(গণ)} মৃত্যুবরণ করিলে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব (Designated Bank Account) -এ Payment Stop করার জন্য লিখিতভাবে ইস্যু অফিসকে অবহিত করিতে হইবে।। প্রয়ােজনে মেয়াদপূর্তির আগেও সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করা যাইবে; তবে এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নগদায়ন করিলে কোন মুনাফা পাওয়া যাইবে না।

মুনাফার হার কেমন? কি হারে বার্ষিক মুনাফা পাওয়া যাবে?

ক্রমিক নং সঞ্চয় স্কিমের নাম মেয়াদ (উত্তীর্ণ হইলে) বিদ্যমান মুনাফার হার ক্রমিক ১-৯ এ বর্ণিত সকল সঞ্চয় স্কিমে ক্রমপুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণ:
১৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১৫,০০,০০১ টাকা হতে ৩০,০০,০০০ ৩০,০০,০০১ টাকা হতে তদূর্ধ্ব
পুনঃনির্ধারিত মুনাফার হার (%)
02 তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ১ম বছরান্তে ১০.০০% ১০.০০ ৯.০৬ ৮.১৫
২য় বছরান্তে ১০.৫০% ১০.৫০ ৯.৫১ ৮.৫৬
৩য় বছরান্তে ১১.০৪% ১১.০৪ ১০.০০ ৯.০০

মোট বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে মুনাফার হার কম বেশি হয়। আবার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে নগদায়ন করলেও মুনাফার হার কমে যাবে। উপরোক্ত সিডিউল মোতাবেক মুনাফা সমন্বয় করে অর্থ ফেরত দেয়া হবে। মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করলে উপরোক্ত ছকে উল্লেখিত হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধিত হয়ে থাকলে তা মূল টাকা হতে কর্তন করে সমন্বয়পূর্বক অবশিষ্ট মূল টাকা পরিশোধ করা হবে।

যে মুনাফা দেখানো হচ্ছে তা হতে কি অর্থ কেটে রাখা হবে?

অবশ্যই। ৫-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩-মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা পর্যন্ত সর্বমোট বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার উপর ৫% হারে এবং এর অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার উপর ১০% হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।

কে ক্রয় করতে পারবেন এবং সর্বোচ্চ কত টাকার কেনা যাবে?

যারা ক্রয় করতে পারবেনঃ সকল শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশী নাগরিক এবং অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/ অন্য যে কোন অটিস্টিক সহযোগি প্রতিষ্ঠান (যাদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা অটিস্টিকদের সহায়তায় অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে) যা সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃক প্রত্যয়নকৃত। ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমাঃ একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) লক্ষ অথবা যুগ্ম-নামে সর্বোচ্চ ৬০ (ষাট) লক্ষ টাকা।

বিশেষ কোন সুবিধা রয়েছে এ স্কিমটির?

অবশ্যই। বিশেষ সুবিধা বলতে ৩ মাস পরপরই আপনি মুনাফা হাতে পাবেন। চাইলে আপনি প্রতি তিন মাস পর পর তুলতে পারেন। না চাইলে ব্যাংক হিসাবে জাম থাকবে।

(ক) ত্রৈমাসিকভিত্তিতে মুনাফা প্রদেয়।

(খ) নমিনী নিয়োগ করা যায়।

(গ) সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনী সাথে সাথেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করে টাকা উত্তোলন করতে পারেন অথবা পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত যথারীতি প্রতি তিন (৩)মাস অন্তর মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন।

এত কিছু বুঝি না ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে তিন মাস পর পর কত মুনাফা পাবো সব কেটে কুটে?

যদি আপনি মাত্র ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে তবে আপনি প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর ২৬২২ টাকা একাউন্টে পাবেন। আয়কর কর্তন করে আপনি ২৬২২ টাকা প্রতি তিন মাসে পাবেন। বছরে ২৬২২*৪ = ১০,৪৮৮ টাকা পাবেন। এ হার ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আপনি যদি ৫ লক্ষ টাকার অধিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেন তবে আয়কর কাটবে ১০% হারে। অন্য দিকে সর্বমোট ২ লক্ষ টাকার অধিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে টিআইএন সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে।

৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ফরম ২০২৩ PDF : ডাউনলোড

অথবা আপনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হতেও ম্যানুয়ালী ফরম সংগ্রহ করতে পারেন।

 

সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম ২০২২

admin

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

admin has 2987 posts and counting. See all posts by admin

19 thoughts on “৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ফরম ২০২৩ । ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ফরম pdf

  • সঞ্চয়পত্র কেনার পর কতদিন পর হতে মাসিক মুনাফা/৩ মাসিক মুনাফা পাওয়া শুরু হবে? ধন্যবাদ

  • যে মাসে কিনবেন সে মাসেই পাবেন। ৩ মাস অন্তর মুনাফার ক্ষেত্রে কেনার ৩ মাস পরই পাবেন।

  • আমি এক লাখ টাকা সঞ্চয় পত্র কিনলে একবছর পরে যদি তা নগদায়ন করতে চাই, তখন আমি মূলধনের পাশাপাশি লাভ কত টাকা পাব? ১লাখ টাকা নাকি ১লাখ ১০হাজার ৪শত ৮৮টাকা?

  • তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, এক লাখ টাকা ক্রয় করে এক বছর পরে তা নগদায়ন করলে কি কোন লাভ পাওয়া যাবে? ১বছর পর নগদয়ন করলে কি শুধু মূলধন ১ লক্ষ টাকাই পাওয়া যাবে, নাকি বাড়তি ১০৪৮৮ টাকা ও পাওয়া যাবে?
    অর্থাৎ সহজ ভাষায়, এক বছর পরে ১লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙলে কত টাকা পাওয়া যাবে? কেবল ১লাখ টাকা নাকি ১১০৪৮৮ টাকা?

  • এক বছর পর ভাঙ্গালে ১০% হারে মুনাফা প্রযোজ্য হবে। আপনি ২৬২২ টাকা হারে ২৬২২*৪ = ১০৪৮৮ টাকা গ্রহণ করেছেন ১১.০৪% হারে মুনাফা। পূর্বের মুনাফা ১০% হারে রিকনসাইল করে এবং চার্জ রেখে ফেরত দেওয়া হবে। মোট কথা ১ লক্ষ টাকার কিছু কম পাবেন। প্রথম বছরের মুনাফা বাদ দেওয়া হবে এরকম নয়।

  • লাভ পাবেন কিন্তু ১০৪৮৮ টাকা পাবেন। পরবর্তীতে মুনাফা রিকনসাইল করে ১ লাখ হতে কিছু টাকা কম পাবেন।

  • আসসালামু আলাইকুম, আমি ৪০ লক্ষ টাকা সঞ্চয়পত্র কিনলে প্রতি তিনমাস পরপর কত টাকা করে মুনাফা তুলতে পারবো, জানালে উপকৃত হবো।

  • আপনি যদি পুরুষ হউন তবে ৩ মাস অন্তর মুনাফা সঞ্চয়পত্রে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে মুনাফার হার মেয়াদ শেষে ১১.০৪, ৩০ লক্ষ পর্যন্ত মেয়াদ শেষে ১০% এবং ৩০ লক্ষ টাকার উপরে মোট বিনিয়োগ হলে ৯% মুনাফা পাওয়া যাবে। ১০% উৎসে কর কেটে রাখা হবে।

  • আমি ৩ মাস মেয়াদী ২লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্র কিনছি ১বছর হল।এখন নগদায়ন করলে কত টাকা ফেরত পাব???

  • ১ বছর পূর্ণ হলে ঐ টাকা কেটে রাখবে না। চলতি বছরে যত টাকা গ্রহণ করেছেন শুধু সেই টাকাই কেটে রেখে মূলধন ফেরত দিবে।

  • ধরুন,আমি সোনালী ব্যাংক হতে সঞ্চয় পত্র কিনলাম। এখন সঞ্চয় পত্র থেকে যে লাভ আসবে সেটা কি ইসলামী ব্যাংকে নেয়া যাবে?

  • না। পোস্ট অফিস থেকে কিনুন। ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট দিয়ে তাহলে ইসলামী ব্যাংকে মুনাফা আসবে। অথবা আপনি জেলা সঞ্চয় ব্যুরো অফিস থেকেও কিনতে পারেন।

  • Will any savings certificate give us garantee certificate?

  • ১৮ বছরের নিচে যার NID ও Passport আছে সে কি এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে?

  • না। ১৮ বছর পূর্ণ হতে হবে।

  • জনতা ব্যাংকে কি সঞ্চয় পত্র কেনা যায়?

  • Pingback:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *