অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারী ও দেশ বিরোধী অপরাধে চাকরি হতে বরখাস্ত হয় – অপরাধ প্রমানিত হলে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত বা ডিসমিস হয়– চাকরি হতে বরখাস্ত বা Dismissal 2023
সরকারি চাকরি একবার হলে নাকি আর যায় না? – না বিষয়টি এমন নয়। গুরুতর অপরাধ করলে চাকরি যাবে এটিই স্বাভাবিক। তবে ছোট খাট অপরাধের জন্য লঘুদন্ড হয়। বড় অপরাধের জন্য গুরু দন্ড হিসেবে চাকরি চলে যায়। তবে অপরাধ প্রমানিত হতে হয় এজন্য সরকার বিভিন্নভাবে অপরাধ তদন্ত করে থাকে।
যেহেতু সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় নাটোর জেলাধীন বিভিন্ন উপজেলায় ১২জন ইউনিয়ন সমাজকর্মী ভূয়া নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে কর্মরত আছে মর্মে জনাব মোঃ মোসলেম উদ্দিন, গ্রাম-বনবেল বরিয়া, উপজেলা-নাটোর সদর, জেলা-নাটোর এর নিকট হতে প্রাপ্ত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য জনাব রকিব আহমেদ, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-১), সমাজসেবা অধিদফতর, আগারগাঁও, ঢাকাকে আহ্বায়ক করে ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সরকারি চাকরি হতে বরখাস্ত । কি কি কারণে সরকারি চাকরি চলে যায়?
তদন্তে নাটোর জেলাধীন বিভিন্ন উপজেলার ১২জন ইউনিয়ন সমাজকর্মী ভূয়া নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে চাকরিরত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে ভূয়া নিয়োগপত্র প্রদানে জড়িত সমাজসেবা অধিদফতরে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং অন্যান্য জেলাসমূহে ভূয়া নিয়োগপত্রের মাধ্যমে আরো কোন ব্যক্তি কর্মরত আছে কিনা তা চিহ্নিত করার জন্য জনাব মোহাঃ কামরুজ্জামান, উপপরিচালক (ইউসিডি), সমাজসেবা অধিদফতর, আগারগাঁও, ঢাকাকে স্মারক নম্বর ০৬ তারিখ ২৮/01/2018 যোগে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা স্মারক নম্বর ১১৪ তারিখ 17/12/2018 যোগে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
যেহেতু প্রাথমিক তদন্তে ভূয়া নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যালয়ে নিম্নবর্ণিত ১৫ জন ব্যক্তি কর্মরত থাকার বিষয়ে জনাব মোঃ রাশেল হোসেন, ম্যাসেঞ্জার, হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়, রাজশাহী (বর্তমানে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়, লালপুর, নাটোর কর্মরত) জড়িত রয়েছেন মর্মে প্রমাণিত হয়।
অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কিনা তার প্রাথমিক তদন্ত হয় পরবর্তীতে কমিটি গঠনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত শুনানী ও বিভাগীয় তদন্ত হয়। / প্রয়োজনে ফৌজদারী আদালতে অপরাধ প্রমানিত হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, জনাব মোঃ রাশেল হোসেন চাকরি দেয়ার নাম করে জনাব বাবু চন্দ্ৰ দাস, সাং-খামার উল্লাপাড়া, ডাকঘর-সড়াতৈল, উপজেলা- বেলকুচি, জেলা-সিরাজগঞ্জ এর সাথে ০৮ লক্ষ টাকার চুক্তি করে ৪ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন।
Caption: Full order PDF Download
একাধিকভাবে ক্রস চেক করা হয় এবং আপীল করার সুযোগও থাকে । নিজের পক্ষে সাফাই বা শুনানীতে বলার সুযোগ থাকে কি?
- যেহেতু জনাব মোঃ রাশেল হোসেন বিভাগীয় মামলার জবাব প্রদান করে ব্যক্তিগত শুনানিতে আগ্রহ প্রকাশ করায় বিগত ০৯/০৪/২০১৯ তারিখ তার শুনানি গ্রহণ করা হয়। শুনানি শেষে বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য জনাব দেবাশিস সরদার, অতিরিক্ত পরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়, রাজশাহীকে চেয়ারম্যান করে ৩(তিন) সদস্যের তদন্তবোর্ড গঠন করা হয়। গঠিত তদন্ত কমিটি স্মারক নম্বর ৪১.২6.5000.000.27.20০.২২. ১২০ তারিখ ২০/০৪/২০22 যোগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
- তদন্ত প্রতিবেদনের মতামতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগী ১২ জনের অঙ্গিকারনামা গুলো সঠিক নয়। এতে প্রতীয়মান হয় জনাব মোঃ রাশেল হোসেন এই ভূয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন এবং দ্বিতীয় অভিযোগের বিষয়ে পর্যালোচনায় দেখা যায় জনাব মোঃ রাশেল হোসেন জনাব বাবু চন্দ্র দাসের নিকট হতে ০৪ লক্ষ টাকা গ্রহণের পর ০৩ লক্ষ টাকা পরিশোধের বিষয়টির সত্যতা রয়েছে। এ ছাড়াও আরো অনেকের নিকট হতে চাকুরি প্রদানের নাম করে টাকা গ্রহণ করেছেন মর্মে তদন্ত বোর্ডের নিকট প্রতীয়মান হয়। বর্ণিত কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় আনীত অভিযোগ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
- যেহেতু জনাব মোঃ রাশেল হোসেন এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার তদন্তে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) ও (ঘ) মোতাবেক ‘অসদাচরণ’ ও দুর্নীতি পরায়ণ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে উক্ত বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) ধারা মোতাবেক সরকারি চাকরি হতে বরখাস্ত (Dismissal) করা সমীচীন হবে।
- তার বিরুদ্ধে এরুপ ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না এমর্মে তাকে সমাজসেবা অধিদফতরের স্মারক নম্বর: ৪১.01.0000.014. 27.054.14.192 তারিখ ০৮/০৬/২০২২ যোগে ২য় কারণ দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলার অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী, বিভাগীয় মামলার জবাব, তদন্ত প্রতিবেদন, ২য় কারণ দর্শানো নোটিশ ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) ও (ঘ) মোতাবেক ‘অসদাচরণ ও দুর্নীতি পরায়ণ এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে উক্ত বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) ধারা মোতাবেক সরকারি চাকরি হতে বরখাস্ত (Dismissal) করা হয়েছে।
নিয়েঅগকারী কর্তৃপক্ষ কি বিভাগীয় মামলা রুজু করে?
হ্যাঁ। এ কেসে চাকরি না পেয়ে জনাব বাবু চন্দ্র দাস টাকা উদ্ধারসহ সুবিচার প্রার্থনা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, লালপুর, নাটোর বরাবরে আবেদন করেন এবং উক্ত আবেদনের অনুলিপি উপপরিচালক, নাটোর বরাবরে প্রদান করেন। এতে সমাজসেবা অধিদফতরের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়। উপরোল্লিখিত অভিযোগে জনাব মোঃ রাশেল হোসেন এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) ও (ঘ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতি পরায়ণ এর দায়ে বিভাগীয় মামলা (মামলা নং ০৩/2019 তারিখ ১১/০২/২০১৯) রুজু করা হয়।