সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের ফেসবুক ব্যবহারে মাউশির কঠোর সতর্কতা

দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৪ ডিসেম্বর এক জরুরি পরিপত্রের মাধ্যমে এই নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে।

মাউশির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বিশেষভাবে ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)’ এবং নতুন কার্যকর হওয়া ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনার মূল বিষয়সমূহ:

বিজ্ঞপ্তিতে মূলত যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে তা হলো:

  • আচরণবিধি মেনে চলা: শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ফেসবুক অ্যাক্টিভিটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোনো ব্যক্তি যদি নির্দেশিকা বা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ অমান্য করেন, তবে তা সরাসরি ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন’ (Violation of Code of Conduct) হিসেবে গণ্য হবে।

  • নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ: জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। এছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এমন কোনো পোস্ট, ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

  • জাতীয় নিরাপত্তা: চিঠিতে সতর্ক করা হয়েছে যে, অপ্রাসঙ্গিক বা উসকানিমূলক পোস্ট কেবল বিভাগীয় অপরাধই নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

  • শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নজরদারি ও বাস্তবায়ন:

মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন থেকে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের ওপর বিশেষ নজর রাখা হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা তাদের অধীনস্থ কেউ এই সাইবার অপরাধের সাথে জড়িত না হয় তা নিশ্চিত করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রের বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ালে কোনো ধরনের শিথিলতা দেখানো হবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)’ এবং সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুসারে কি কি করা যাবে না?

সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)’ এবং ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী যে সকল কাজ করা যাবে না, তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

১. সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ) অনুসারে যা করা যাবে না:

এই নির্দেশিকা মূলত সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি। এর অধীনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ:

  • রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা: সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করা যাবে না।

  • জাতীয় ঐক্য ও চেতনা বিরোধী কাজ: জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না।

  • ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত: কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এমন কিছু প্রচার করা যাবে না।

  • মানহানি ও হেয় প্রতিপন্ন করা: জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো পেশাকে হেয় করে এমন পোস্ট দেওয়া যাবে না।

  • লিঙ্গ বৈষম্য: লিঙ্গ বৈষম্য সৃষ্টি করে বা এ সংক্রান্ত কোনো বিতর্কমূলক তথ্য প্রচার করা যাবে না।

  • জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি: জনমনে অসন্তুষ্টি বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এমন কোনো বিষয় লেখা বা শেয়ার করা যাবে না।

  • অসত্য ও অশ্লীল তথ্য: ভিত্তিহীন, বানোয়াট, অসত্য এবং অশ্লীল তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।

  • বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক: অন্য কোনো রাষ্ট্র বা বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য বা পোস্ট দেওয়া যাবে না।

২. সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুসারে যা করা যাবে না:

২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইন রহিত করে এই নতুন অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে। এর অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য বিষয়গুলো হলো:

  • বেআইনি প্রবেশ (Hacking): অনুমতি ছাড়া কোনো কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে প্রবেশ করা যাবে না।

  • ধর্মীয় উস্কানি: সামাজিক মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য বা সহিংসতা ছড়াতে পারে এমন কনটেন্ট প্রচার করা যাবে না।

  • হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল: অনলাইনে কাউকে ব্ল্যাকমেইল করা, যৌন হয়রানি করা বা মানহানিকর তথ্য ছড়িয়ে অপদস্থ করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

  • সাইবার জালিয়াতি: ই-ট্রানজেকশন বা ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো প্রকার আর্থিক জালিয়াতি বা প্রতারণা করা যাবে না।

  • এআই (AI) এর অপব্যবহার: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা ডিপফেক (Deepfake) কন্টেন্ট তৈরি করা নিষিদ্ধ (এটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এই আইনে যুক্ত করা হয়েছে)।

  • অনলাইন জুয়া: অনলাইনে যেকোনো ধরনের জুয়া খেলা বা জুয়ার প্রচারণা চালানো অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

  • জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা: দেশের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খল বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কোনো সাইবার কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া যাবে না।

সতর্কতা: নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনো কর্মচারী বা শিক্ষার্থী যদি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকেও এ ধরনের কাজ করেন, তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও সাইবার আইনের অধীনে মামলা দায়ের করা হতে পারে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *