ফোজদারি মামলা কি? কোন আদালতে পরিচালিত হয় ।
সাধারন ভাষায় কোন ব্যক্তিকে যখন মারামারি, চুরি, ডাকাতি, খুন, যখম, প্রতারনা, দস্যুতা, রেইপ, অপহরণ, বে-আইনি সমাবেশ, ইভ-টিজিং, জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্যদান প্রভুতি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্বে মামলা দায়ের করা হয় তাকে বলে ফৌজদারি মামলা ক্রিমিনাল কেস।
পেনাল কোডে অপরাধ এবং এর শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ আছে কিন্তু কিভাবে অপরাধিকে শাস্তি দেয়া হবে তার কথা উল্লেখ আছে কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ বা ফৌজদারি কার্যবিধিতে।
ব্যাপক ভাবে ক্রিমিনাল আদালত তিনভাগেবিভক্ত: (ধারা-৬) ব্যক্তির অধিকার ও সম্পত্তির অধিকার ব্যতিত যেকোনো অপরাধ ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হাঙ্গামা, ব্যক্তির জীবন হরণ, অর্থসম্পদ লুটপাট ও যৌন হয়রানির অপরাধে ফৌজদারি মামলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। এক কথায় চুরি, ডাকাতি, খুন, জখম, প্রতারণা, দস্যুতা, লুটপাট, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, অপহরণ, বেআইনি সমাবেশ, যৌন হয়রানি, জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান প্রভৃতি অপরাধে যেসব মামলা দায়ের করা হয় তাকে ফৌজদারি মামলা বলা হয়। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে জেল জরিমানা, যাবজ্জীবন এবং মৃত্যুদণ্ড হয়ে থাকে।প্রকৃতপক্ষে ফৌজদারী মামলাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়, একটি আমলযোগ্য মামলা, অন্যটি আমল অযোগ্য মামলা। আবার আমলযোগ্য মামলাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়, একটি জি আর বা পুলিশী মামলা অন্যটি সি আর বা নালিশী মামলা।
১) আমলযোগ্য মামলা: আইন মোতাবেক কিছু অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন। এসব অপরাধে যে মামলা হয় তাই আমলযোগ্য মামলা। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪(১) উপধারায় ক্লজ চ-এ আমলযোগ্য মামলা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
২) আমল অযোগ্য মামলা: কিছু অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করতে পারে না। অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে প্রসিকিউশন রিপোর্ট বা নন-এফআইআর মামলা আদালতে দাখিল করে। এগুলো আমল অযোগ্য মামলা। এধরনের অপরাধের মামলা কোর্টের নন-জিআর রেজিস্টার ভুক্ত হয়ে পরিচালিত হয় হয় বলে এ মামলাকে নন-জিআর মামলা বলা হয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪ (১) উপধারার ক্লজ ঢ-এ আমল অযোগ্য মামলা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
নালিশী বা সিআর মামলা: ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সরাসরি গিয়েও কোর্ট ফি দিয়ে বিচার প্রার্থনা করা যায়। এক্ষেত্রে কা:বি: ২০০ ধারায় শপথ নিয়ে আবেদনের উল্টো পিঠে জবানবন্দি রেকর্ড করতে হয়। কোর্ট রেজিস্টারে মামলা এন্ট্রি হয়ে পরিচালিত হওয়ার কারণে এগুলোকে সিআর মামলা বলা হয়।
পুলিশী মামলা: থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে এজাহার দায়েরের মাধ্যমে যে মামলা শুরু হয় তাই পুলিশী মামলা নামে পরিচিত। পুলিশী মামলাকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা হয়:
ক) জি আর মামলা:থানায় কোন আমলযোগ্য অপরাধ ঘটার খবর পেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কা:বি: ১৫৪ ধারা অনুসারে মামলা করে আদালতে এফআইআর দাখিল করে কা:বি: ১৫৬ ধারা অনুসারে মালার তদন্ত শুরু করেন। এটিই জি আর মামলা। থানা থেকে এফআইআর আদালতে আসার পর কোর্ট ইন্সপেক্টর/সাব-ইন্সপেক্টর বা জিআরও (জেনারেল রেজিস্টার অফিসার) উক্ত এফআইআর-টি মামলা হিসেবে কোর্টের জেনারেল রেজিস্টারে এন্ট্রি করে তা দ্রুত ম্যাজিস্ট্রেট এর নজরে আনেন।
খ) নন জি আর মামলা:আবার থানায় আমলযোগ্য মামলা সংঘটিত হওয়ার সংবাদ পেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেটিকে এজাহার হিসেবে গণ্য না করে পুলিশ প্রবিধান এর প্রবিধি ৩৭৭ অনুসারে জিডি এন্ট্রি করে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন রিপোর্ট দায়ের করতে পারেন। এগুলো নন-জিআর মামলা নামে পরিচিত। ফৌজদারি মামলা পরিচালিত হয় যে আদালতে ফৌজদারি মামলাগুলো সাধারণত চারটি আদালতে পরিচালিত হয় তা হলো
১। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২। হাইকোর্ট বিভাগ ৩। দায়রা জাজ আদালত ৪। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
জেলা পর্যায় যে বা যারা ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেন তাদের সেশন কোট বা দায়রা আদালত বলে। এই আদালতের বিচারকরা হলেন :১। দায়রা জজ : যিনি জেলা পর্যায়ে ক্রিমিনাল মামলার প্রধান বিচারক।২। অতিরিক্ত দায়রা জজ৩। যুগ্ম দায়রা জজ। দায়রা জজ আইন আরোপিত সব ধরনের শাস্তি দিতে পারেন। শুধু ডেথ পেনাল্টির কার্যকর করার ক্ষেত্রে হাইকোটের অনুমতি লাগবে। যুগ্ম দায়রা জজ ডেথ পেনাল্টি বা ১০ বছরের বেশি কারাদণ্ডাদেশ দিতে পারবেন না।
মেট্রোপলিটন এলাকার ম্যাজিস্ট্রেটের শ্রেণি বিভাগ নিম্নরূপ :১। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম)২। অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। অন্যদিকে মেট্রোপলিটন বা মহানগর এলাকার বাইরের ম্যাজিস্ট্রেটরা বা জেলা আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত :
১. চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট,২. অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রটদের মধ্যে রয়েছেন :১. মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট,২. প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট,৩. দ্বিতীয় শ্রেণির মেজিস্ট্রেট ও৪. তৃতীয় শ্রেণির মেজিস্ট্রেট। প্রথম শ্রেণির মেজিস্ট্রেট নির্জন কারাবসসহ পাঁচ বছরের অনধিক কারাদণ্ড দিতে পারবেন এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন।
দ্বিতীয় শ্রেণির মেজিস্ট্রেট নির্জন কারাবাসসহ তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন। তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট অনধিক দুই বছরের সাজা এবং দুই হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন। কোনো আসামি যদি জরিমানার টাকা দিতে না চান সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের টাকা অনাদায়ের জন্য আসামিকে দণ্ডদানের যে ক্ষমতা রয়েছে তার এক-চর্তুথাংশের বেশি দিতে পারবেন না।
অর্থাৎ কারো কারাদণ্ড যদি ২ বছরের হয় এবং এর সঙ্গে অর্থদণ্ডও হয় সে ক্ষেত্রে আসামি যদি অর্থ দিতে না পারে তাহলে মেজিস্ট্রেট বাড়তি আরো সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দিতে পারবেন। সূত্র: (বাংলাদেশ আইনগত অধিকার – একটি অনলাইন ভিক্তিক আইন সেবা পেইজ। যে কোনো আইনি প্রতিকার সম্পর্কে জানতে আমাদেরকে মেসেজ করুন। )
- A Challan bd 2025 । আমদানি রপ্তানি শুল্ক এখন এ চালানে মূহুর্তেই জমা হবে?
- এ চালান- অটোমেটেড চালান সিস্টেম ২০২৫ । অনলাইনে চালান জমা ও ফরম পূরণ করার নিয়ম কি?
- GPF Calculation by AG Office 2025 । এজি অফিস যে সূত্রগুলো ব্যবহার করে জিপিএফ মুনাফা নির্ণয় করে?
- Bank Officer Loan Ceiling 2025 । ব্যাংক কর্মকর্তাদের গৃহ নির্মাণ ঋণ সিলিং ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা?
- Interest Free Govt. Loan 2025 । বিনা সুদে ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ সুবিধা চান সরকারি কর্মচারীরা?