বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

১১-২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের আল্টিমেটাম ২০২৫ । সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা ও নবম পে-স্কেলের দাবি?

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে বৈষম্যহীন নবম পে-স্কেল ঘোষণা এবং বেতন কাঠামো সংস্কারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ’। সংগঠনটি ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণসহ ১২টি গ্রেডে বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।

মূল দাবি ও সময়সীমা স্মারকলিপিতে কর্মচারীরা আগামী ৩০ নভেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে পে-কমিশনের রিপোর্ট পেশ এবং ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে নবম পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। তাদের দাবিকৃত পে-স্কেলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভাতা বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছে:

  • চিকিৎসা ভাতা: ১,৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫,০০০ টাকা।

  • যাতায়াত ভাতা: ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,০০০ টাকা।

  • টিফিন ভাতা: ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,০০০ টাকা।

  • শিক্ষা সহায়ক ভাতা: সন্তান প্রতি ৫০০ টাকার স্থলে ৩,০০০ টাকা।

  • বাড়ি ভাড়া: মূল বেতনের ৪০-৪৫ শতাংশের পরিবর্তে ৮০ শতাংশ।

  • ঝুঁকি ভাতা: ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিতদের মূল বেতনের ৩০ শতাংশ।

  • উৎসব ভাতা: বৈশাখী ভাতা ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১০০ শতাংশ এবং বিজয় দিবস ভাতার প্রচলন।

এছাড়া চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণের দাবিও জানানো হয়েছে।

বেতন ও পদবি বৈষম্যের অভিযোগ স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে ১ থেকে ১০ গ্রেডের বেতন স্কেলের মোট পার্থক্য ৬২,০০০ টাকা, যেখানে ১১ থেকে ২০ গ্রেডের পার্থক্য মাত্র ৪,২৫০ টাকা। একে ‘চরম বৈষম্য’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, একজন কর্মচারীর পক্ষে ৮,২৫০ টাকা মূল বেতনে ৬ সদস্যের পরিবার চালানো অসম্ভব।

নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করছে, কিন্তু ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের কোনো সুরাহা হচ্ছে না। সচিবালয়ের কর্মচারীদের পদনাম ও গ্রেড পরিবর্তন করা হলেও, সচিবালয়ের বাইরের দপ্তর ও অধিদপ্তরের কর্মচারীরা ৫৩ বছর ধরে একই বৈষম্যের শিকার।

প্রতিক্রিয়া সংগঠনটির মুখ্য সমন্বয়ক মো: ও আরেছ আলী এবং সমন্বয়ক মো: মহিদুল হাসান স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচীতে যাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। তারা প্রশ্ন তোলেন, “কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি, বাবুর্চি, গার্ডসহ নানা সুবিধা থাকলেও নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য কেন এই বিমাতাসুলভ আচরণ?”

স্মারকলিপিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখে বলা হয়, তিনি যেমন গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করেছেন এবং দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন, তেমনি ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের এই মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি দিতে তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

সরকারি কর্মচারীদের একদফা দাবী কি?

‘বৈষম্যহীন ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়ন’

এই মূল দাবির ভিত্তি হিসেবে তারা সুনির্দিষ্ট ৩টি শর্ত উল্লেখ করেছেন: ১. সর্বনিম্ন বেতন: ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা। ২. গ্রেড কাঠামো: বর্তমান ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে ১২টি গ্রেডের ভিত্তিতে বেতন কাঠামো তৈরি করা। ৩. বেতন অনুপাত: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ রাখা (বর্তমানে এটি ১:১০, যা বৈষম্যমূলক বলে তারা দাবি করেছেন)।

সময়সীমা: দাবি আদায়ে তারা দুটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন:

  • ৩০ নভেম্বর ২০২৫: এর মধ্যে পে-কমিশনের রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টার নিকট পেশ করা।

  • ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫: এর মধ্যে ৯ম পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ করা।

মূলত, জীবনযাত্রার ব্যয় ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সম্মানজনক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা পেতেই তারা এই একদফা দাবিতে আন্দোলন করছেন।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *