বেতনের অনুপাত নিয়ে কর্মচারীদের হুঁশিয়ারি ২০২৫ । ডিসেম্বরে গেজেট হলেও ‘১:৪’ না পেলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি!
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) নিয়ে গুঞ্জন ও দাবি-দাওয়ার মধ্যেই কর্মচারীদের একাংশের পক্ষ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। তাদের দাবি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশিত হলেও, যদি বেতন কাঠামোতে ১:৪ অনুপাত কার্যকর না হয়, তবে আন্দোলন আরও জোরদার হবে। একইসঙ্গে তারা সতর্ক করেছেন যে, দাবি আদায়ে সকলে মাঠে না নামলে ‘জায়গা মতো বাঁশ’ এবং শেষ পর্যন্ত ১:৮ অনুপাত মেনে নিতে হবে।
কর্মচারী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন ফোরাম ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই হুঁশিয়ারি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মূল উদ্বেগ, পে-কমিশন বিদ্যমান ১:১০ অনুপাত থেকে সামান্য পরিবর্তন এনে সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৮-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে। এটি হলে নিম্ন ও মধ্যম গ্রেডের কর্মচারীদের প্রত্যাশিত বৈষম্য নিরসন হবে না।
মূল হুঁশিয়ারি: ‘মাঠে না নামলে ১:৮ ধরিয়ে দিবে’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত কর্মচারীদের একজন নেতা বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই গেজেট হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু সরকার যদি নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষা করে এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে, তবে আমাদের জন্য চরম দুর্ভাগ্য অপেক্ষা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ১৭ তারিখের (আন্দোলনের পরবর্তী ধাপের তারিখ) কর্মসূচিতে যদি সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে উপস্থিত না হই, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন, সরকার বা পে-কমিশন ঠিকই ১:৮ অনুপাত হাতে ধরিয়ে দেবে। তখন আর বৈষম্য নিয়ে অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না। তাই ১:৪ অনুপাত এবং সর্বনিম্ন বেতন বৃদ্ধির দাবি আদায় করতে হলে এখনই উপযুক্ত জায়গায় নিজেদের শক্তি দেখাতে হবে।”
১৭ তারিখের কর্মসূচিই কি শেষ ভরসা?
কর্মচারীরা মনে করছেন, বেতন বৈষম্য নিরসনের সুযোগ একবার হাতছাড়া হলে তা আর সহজে ফিরিয়ে আনা যাবে না। বর্তমানে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন যেহেতু গ্রেড সংখ্যা কমানো এবং বেতন অনুপাত যৌক্তিক করার বিষয়ে কাজ করছে, তাই চাপ সৃষ্টি করার এটাই সেরা সময়।
তাদের মতে, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ২০টি গ্রেড রয়েছে এবং সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত প্রায় ১:১০। জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সর্বনিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা (১১ থেকে ২০ গ্রেড) চরম আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। তাই গ্রেড কমিয়ে ১২টি করা এবং ১:৪ অনুপাত কার্যকর হলে কেবল তখনই এই বৈষম্য দূর হবে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১:৪ অনুপাত বাস্তবায়ন করা হলে সরকারের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় অনেক বাড়বে। তবে কর্মচারীদের একাংশের এই কঠোর মনোভাব এটাই প্রমাণ করে যে, নতুন পে-স্কেল নিয়ে তাদের মধ্যে বিপুল প্রত্যাশা রয়েছে এবং বৈষম্য নিরসনই তাদের প্রধান লক্ষ্য। ডিসেম্বরে গেজেট প্রকাশের আগেই এই বিতর্কিত দাবি কীভাবে সমাধান করা হয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
সরকারি কর্মচারীদের চরম সতর্কতা: ‘১:৪’ অনুপাত পেতে কঠোর আন্দোলনই শেষ ভরসা!
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেলকে কেন্দ্র করে নিম্ন ও মধ্যম গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ এখন চরম হুঁশিয়ারিতে রূপ নিয়েছে। তাদের স্পষ্ট দাবি, সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪-এ নামিয়ে আনার দাবি মানতে হলে কঠোর আন্দোলন ও জনসমাবেশ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কর্মচারীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, প্রথম শ্রেণির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট তাদের নিজেদের স্বার্থে অন্যথায় পে-কমিশনের মাধ্যমে ১:৮ অনুপাত-এর বৈষম্যপূর্ণ কাঠামোই কার্যকর করবে।
সিন্ডিকেট ভাঙতে জনসমাবেশের ডাক
আন্দোলনকারী কর্মচারীদের ফোরামগুলো প্রকাশ্যে এই বার্তা দিচ্ছে যে, আমলাতান্ত্রিক সিন্ডিকেট অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে বেতন অনুপাতকে ১:৮ থেকে ১:১০ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা চালাবে। কর্মচারী নেতৃবৃন্দ মনে করেন, বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে ১২টি করার প্রাথমিক আলোচনা চলছে বটে, কিন্তু ১:৪ অনুপাত-এর মতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হলে শুধুমাত্র দাপ্তরিক আলোচনার ওপর ভরসা রাখা যাবে না। তাদের মতে, উচ্চপদের কর্মকর্তারা বেতন কাঠামোতে নিজেদের সুবিধা ধরে রাখতে সবসময়ই সচেষ্ট থাকেন। এই সিন্ডিকেটকে ভাঙতে হলে একমাত্র কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে জনসমাবেশ ঘটিয়ে সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
‘অংশগ্রহণ না করলে ১:৮ মেনে নিতে হবে’
কর্মচারীদের মধ্যে এই বিষয়ে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে যে, আসন্ন আন্দোলনের কর্মসূচিতে যদি সব স্তরের সরকারি কর্মচারী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ না করেন, তবে তাদের দাবি পূরণ হবে না। কর্মচারী সংগঠনের একজন মুখপাত্র এই প্রসঙ্গে বলেন, “এটি এখন একটি জীবন-মরণের প্রশ্ন। আমাদের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার শেষ সুযোগ এটি। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে না নামি, তাহলে সিন্ডিকেট ঠিকই তাদের পছন্দের ১:৮ অনুপাত ধরিয়ে দেবে। তখন আর অনুপাত নিয়ে আপস করার বা অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না। তাই দাবি আদায়ে আমাদের সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনসমাবেশ সফল করতে হবে।”
উল্লেখ্য, কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী ১:৪ অনুপাত কার্যকর হলে, যদি সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা হয়, তবে সর্বোচ্চ বেতন হবে ১,৪০,০০০ টাকা। অন্যদিকে, যদি ১:৮ অনুপাত কার্যকর হয়, তবে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা হলেও সর্বোচ্চ বেতন হতে পারে ২,৮০,০০০ টাকা, যা আবারও বিপুল বৈষম্য সৃষ্টি করবে। এখন দেখার বিষয়, কর্মচারীদের এই কঠোর হুঁশিয়ারি ও আন্দোলনমুখী মনোভাব জাতীয় বেতন কমিশন এবং সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।



