সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

‘A+BY’ মডেলে বেতন কাঠামো সংস্কারের দাবি ২০২৫ । বৈষম্য কমাতে কেইনসের ভোগ তত্ত্বের ভিত্তিতে নতুন পে-স্কেলের প্রস্তাবনা?

সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় বিদ্যমান বৈষম্য কমাতে এবং একটি যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত পে-স্কেল প্রণয়নের লক্ষ্যে কেইনসের বহুল পরিচিত ভোগ তত্ত্বের (C = a+bY) কাঠামো অবলম্বনে একটি নতুন বেতন কাঠামোর প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই অভিনব মডেলে, বেতনকে মৌলিক ভোগ (a) এবং প্ররোচিত ভোগ (bY) এর সমষ্টি হিসেবে বিবেচনা করে, গ্রেড অনুযায়ী বেতনের অনুপাত নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কেইনসের ভোগ তত্ত্ব (Keynesian Consumption Theory) হলো একটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব যা ব্যাখ্যা করে যে, ভোক্তার ভোগ ব্যয় মূলত তার বর্তমান ব্যবহারযোগ্য আয়ের উপর নির্ভর করে, যা স্বায়ত্তশাসিত ভোগ ও প্ররোচিত ভোগের সমন্বয়ে গঠিত। এই তত্ত্ব অনুসারে, আয় বাড়লে ভোগ বাড়ে, কিন্তু আয়ের তুলনায় ভোগ বৃদ্ধির হার কম হয় এবং গড় ভোগ প্রবণতা (APC = C/Y) হ্রাস পায়।

মূল ধারণা
  • স্বায়ত্তশাসিত ভোগ (Autonomous Consumption): এটি হলো সেই ভোগ ব্যয় যা আয়ের স্তর নির্বিশেষে ঘটে থাকে, যেমন – বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ। 
  • প্ররোচিত ভোগ (Induced Consumption): আয়ের সাথে সাথে এই ভোগের পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। আয় বাড়লে প্ররোচিত ভোগ বাড়ে। 
  • ভোগ অপেক্ষক (Consumption Function):
    এটি ভোগ ব্যয় (C) (close paren open paren )( Y) মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। এর সূত্রটি হলো: C = C_a + cY, যেখানে C_a হলো স্বায়ত্তশাসিত ভোগ এবং c হলো প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা। 
  • প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা (Marginal Propensity to Consume – MPC): আয় পরিবর্তনের ফলে ভোগের যে পরিবর্তন হয় তার অনুপাতকে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা বলা হয়। 
  • গড় ভোগ প্রবণতা (Average Propensity to Consume – APC):মোট ভোগকে মোট আয় দিয়ে ভাগ করলে গড় ভোগ প্রবণতা পাওয়া যায়।
  • আইন: কেইনসের মতে, আয় বাড়লে গড় ভোগ প্রবণতা (APC),(close paren comma open paren),(MPC) 0 থেকে 1 এর মধ্যে থাকে।
  • সমষ্টিক অর্থনীতি – BOU E-Bookদেখা যাচ্ছে, আপনার কাংখিত ভোগ ও প্রকৃত ভোগ ভিন্ন হচ্ছে। বিভিন্ন কারণে এটা ঘটতে পারে ৷ ঠিক তেমনি একটি দেশের প্রকৃত ভোগব্যয় কাংখিত বা পরিকল্পিত ভোগব্যয় থেকে ভিন্ন হতে পারে ।

প্রস্তাবিত এই মডেলে, বেতন (Salary) হবে a+bY, যেখানে:

  • a (স্বয়ম্ভূত ভোগ): এটি হলো একটি নির্দিষ্ট, সমান পরিমাণ, যা সকল গ্রেডের কর্মচারীর জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে স্থির রাখা হয়েছে। প্রস্তাবনায় এর মান ২০,০০০ টাকা ধরা হয়েছে, যা বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
  • bY (প্ররোচিত ভোগ): এটি গ্রেড অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে এবং সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন অনুপাত ১:১০ নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি মূলত কর্মচারীর পদমর্যাদা ও দায়িত্ব অনুযায়ী ভোগের মাত্রা নির্ধারণ করে।

প্রস্তাবক মনে করেন, বর্তমানে প্রচলিত বেতন স্কেলে বৈষম্যের যৌক্তিক ব্যাখ্যা অনুপস্থিত, কিন্তু এই মডেলে বেতনের প্রতিটি উপাদানের একটি অর্থনৈতিক ভিত্তি রয়েছে।

প্রস্তাবিত ৯ম পে-স্কেল (২০২৫) কাঠামো:

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ১২টি গ্রেডে সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন বেতনের মোট অনুপাত দাঁড়ায় ১:৪.৩৭৫, যা বর্তমানে প্রচলিত অনুপাতের চেয়ে অনেক কম এবং বৈষম্য হ্রাসকে নির্দেশ করে।

গ্রেডসূত্র (20,000+1,20,000×Factor)প্রস্তাবিত বেতন (টাকা)
১ম20,000 + 1,20,000×1.00১,৪০,০০০
৭ম20,000 + 1,20,000 ×0.50৮০,০০০
১২শ20,000 + 1,20,000 × 0.10৩২,০০০

বিশেষ বিশ্লেষণ:

এই মডেলের প্রধান সুবিধা হলো নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি বেতন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

  • ১২শ গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি: নতুন মডেলে (32,000) এবং ১০ম পে-স্কেলের সর্বনিম্ন মূল বেতন (8,250) বিবেচনা করলে বৃদ্ধির হার প্রায় ৪৫.৪৫%
  • ১ম গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি: নতুন মডেলে (1,40,000) এবং ১০ম পে-স্কেলের সর্বোচ্চ মূল বেতন (78,000) বিবেচনা করলে বৃদ্ধির হার প্রায় ৭৯.৪৮%

তবে, প্রস্তাবক প্রথম গ্রেডের জন্য 1,20,000 বিবেচনা করে বেতন বৃদ্ধির হার ৫৩.৮৫% উল্লেখ করেছেন, যা বর্তমান স্কেলের সর্বোচ্চ ধাপের বিপরীতে নতুন স্কেলের প্রারম্ভিক বেতনের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে।

মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা এবং ভবিষ্যৎ সংস্কার:

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতিজনিত কারণে যদি ৫০% বেতন বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, তবে পরবর্তী সংস্কারে a এবং Y উভয়কেই একই হারে বৃদ্ধি করে (a × 150% + (Y ×150%) × b = Salary) একটি যৌক্তিক কাঠামো বজায় রাখা সম্ভব।

প্রস্তাবক জোর দিয়ে বলেছেন, একবার এই অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলে, ভবিষ্যৎ বেতন সংস্কারে কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো আপত্তি বা অসন্তোষ সৃষ্টি হবে না এবং তা ন্যায়সঙ্গত বলে বিবেচিত হবে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, সরকারের উচিত অর্থনীতিবিদদের এই ধরনের সৃজনশীল প্রস্তাবনাগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা, যা কেবল বৈষম্যই কমাবে না, বরং একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বেতন কাঠামো নিশ্চিত করবে।

বেতন বৈষম্য কমাতে কেইনসের ভোগ তত্ত্বের ভিত্তিতে (C=a+by) ৯ম পে -স্কেল 2025 । a+bY=salary (basic) 12টি গ্রেডে, সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন অনুপাত a=1:1 (যা ফিক্সড ) bY=  1:10  (গ্রেড অনুসারে ) a+bY=1:4.375 (মোটের উপর)

  1. ১ম গ্রেড 20,000+1,20,000×1=1,40,000
  2. ২য় গ্রেড 20,000+1,20,000×0.90=1,28,000
  3. ৩য় গ্রেড 20,000+1,20,000×0.82=118400
  4. ৪র্থগ্রেড 20,000+1,20,000×0.74=1,08800
  5. ৫ম গ্রেড 20,000+1,20,000×0.66=99,200
  6. ৬ষ্ঠ গ্রেড 20,000+1,20,000×0.58=89,600
  7. ৭ম গ্রেড 20,000+1,20,000×0.50=80,000
  8. ৮ম গ্রেড 20,000+1,20,000×0.42=70400
  9. ৯ম গ্রেড 20,000+1,20,000×0.34=60800
  10. ১০ম গ্রেড 20,000+1,20,000×0.26=51,200
  11. ১১ম গ্রেড 20,000+1,20,000×0.18=41,600
  12. ১২ম গ্রেড 20,000+1,20,000×0.10=32,000

এক্ষেত্রে, 12তম গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি পায় (12,000-8250)÷8250= 45.45% । ১ম গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি পায়(1,20,000-78,000)÷78,000= 53.85% । ১০ম পে -স্কেলে মুদ্রাস্ফীতির বিবেচনায় (ধরি 50% বেতন বৃদ্ধি প্রয়োজন) তখন a×150%+(Y150%)×b = salary । এভাবে একবার সংস্কার হলে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা না। ন্যায় সঙ্গত হবে আশা করা যায় এখানে a= ২০,০০০ টাকা স্বয়ম্ভূত ভোগ যা সকলের সমান এবং bY= ১,২০,০০০b প্ররোচিত ভোগ, b=প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা অর্থাৎ যার আয় যেমন সে ততোটুকু ভোগ করবে।

ক্রেডিট: Md Khalilur Rahman

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *