আওয়ামী লীগ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ গেজেট ২০২৫ । জনগণ নাকি সরকার রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে?
২০০৯ সালে ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও ভিন্নমতের মানুষের উপর হামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন নিপীড়নমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে-বর্তমান সরকার দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে–আওয়ামী লীগ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ গেজেট ২০২৫
আওয়ামীলীগের কি বিচার হবে? হ্যাঁ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এসব অভিযোগ দেশী ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যেহেতু উল্লেখিত অপরাধসমূহের অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের ফৌজদারি আদালতে বহুসংখ্যক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
আওয়ামীলীগ কি দেশের জনগণের জন্য হুমকীস্বরূপ? এ সকল মামলার বিচারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার লক্ষ্যে গত ০৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক গণঅভ্যূত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার উপর হামলা, উস্কানিমূলক মিছিল আয়োজন, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ এবং ভিনদেশে পলাতক তাদের নেত্রীসহ অন্য নেতাকর্মী কর্তৃক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য প্রদান, ব্যক্তি ও প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের প্রচেষ্টাসহ আইন-শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়েছে এবং যেহেতু এসকল কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, দলটি এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদী ও সাক্ষীদের মনে ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে ও এভাবে বিচার বিঘ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং সার্বিকভাবে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
কোন আইনবলে সরকার দলটি নিষিদ্ধ করিল? সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনের ন্যায় বিভিন্ন বেআইনি কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে এবং সরকার যুক্তিসংগতভাবে মনে করে সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮ (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সমীচীন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল। ইতোমধ্যে এ প্রজ্ঞাপনটি গেজেট আকাশে প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।
রাজনৈতিক দল কে নিষিদ্ধ করে?/ জনগন নয় বরং সরকার রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে
রাজনৈতিক দল জনগন নাকি সরকার নিষিদ্ধ করে? রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা সরাসরি জনগণের নেই, তবে জনগণের ভূমিকা পরোক্ষভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।সরকার যদি মনে করে যে কোনো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, জনশৃঙ্খলা বা সংবিধানের জন্য হুমকি, তাহলে তারা আইন বা নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী দলটিকে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে পারে। আদালত (High Court/Supreme Court)- কোনো দল সংবিধানবিরোধী কার্যকলাপ করলে, আদালত তার নিবন্ধন বাতিল করতে বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। উদাহরণ: জামায়াতে ইসলামী।
Caption: Gezzette Download
রাজনৈতিক দল নিষেধাজ্ঞার বিবেচ্য বিষয় ২০২৫ । একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় সাধারণত তখনই, যখন সে দলের কার্যক্রম রাষ্ট্র, সংবিধান, কিংবা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
- আইনি ভিত্তি (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে)- বাংলাদেশের সংবিধান এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, একটি দলকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে যদি তারা: রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হয়। যেমন: সশস্ত্র বিদ্রোহ, স্বাধীনতা যুদ্ধ অস্বীকার, বা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র।
- সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হয়- যদি কোনো রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, খুন বা মারধরকে উৎসাহিত করে বা তাতে অংশ নেয়।
- ধর্মীয় উগ্রতা ছড়ায় বা সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়- সংবিধানে বলা আছে, ধর্মের নামে রাজনীতি করা যাবে না (যদিও বাস্তবে এই নিয়ম মাঝে মাঝে আলগা হয়)।
- জাতীয় নিরাপত্তা বা শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে-সরকার যদি মনে করে যে কোনো দলের কার্যক্রম রাষ্ট্রের শান্তি বা জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তবে তারা সেই দলকে সাময়িক বা স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
- নিবন্ধন আইন লঙ্ঘন- নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল হিসেবে নির্দিষ্ট নিয়ম না মানলে নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।
আওয়ামীলীগ-কে কেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো?
হ্যাঁ, বর্তমানে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছে না। ২০২৫ সালের ১০ মে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বিশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সকল কার্যক্রম, অনলাইন ও অফলাইনসহ, নিষিদ্ধ থাকবে। ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বহু মানুষ নিহত হন, যার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে দায়ী করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতিত হয় এবং তিনি ভারতে নির্বাসনে যান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে এখন পুরো রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ এই নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যা দিয়েছে এবং সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী নয়; এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। বিচার শেষে আদালতের রায় অনুযায়ী দলটির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। অপরাধ প্রমানিত হলে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞায় পড়বে।
আন্তর্জাতিকভাবে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ নজির আছে কি? হ্যাঁ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিচের কারণগুলোতে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়েছে: নাৎসি মতাদর্শ প্রচার (জার্মানিতে)। গণহত্যা বা জাতিগত নিধনে ভূমিকা (রুয়ান্ডা, বসনিয়া)। বিদেশি রাষ্ট্রের হয়ে ষড়যন্ত্র (রাশিয়া, ইউক্রেইন)। উগ্র ডানপন্থী বা বামপন্থী সহিংসতা (ফ্রান্স, স্পেন)। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে সাধারণত তিনভাবে কোনো দল নিষিদ্ধ হতে পারে। সরকারি আদেশ (গেজেটের মাধ্যমে) অথবা আদালতের রায় অথবা নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল করে।
আন্তর্জাতিক উদাহরণ আছে কি?জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। | কারণ তারা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক আদর্শ প্রচার করেছিল। | তুরস্কে কয়েকটি ইসলামপন্থী দল নিষিদ্ধ হয়েছে, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রচারের জন্য। |
জার্মানিতে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, | কারণ তারা নাৎসি মতাদর্শ প্রচার করছিল। | |