বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি ২০২৫ । প্রতি বছর ১০ দিনের বাধ্যতামূলক বার্ষিক ছুটি বিধান রয়েছে?
কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি ও বাধ্যতামূলক বার্ষিক ছুটি প্রদান সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে দেশের শাখাগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রতি বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০ (দশ) দিনের বাধ্যতামূলক ছুটি (Recreation Leave) ভোগ করা আবশ্যক করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সার্কুলারটি ২০ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জারি করা হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, শাখাগুলোতে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতি বছর একবার নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০ দিনের বাধ্যতামূলক ছুটি নিতে হবে। তবে এই ছুটির জন্য কোনো বিনোদন ছুটি বা যাতায়াত ছুটি মঞ্জুর করা হবে না। কর্মকর্তাদের বছরে একবার এ ছুটি নেওয়া নিশ্চিত করার জন্য শাখা প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, বদলি সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং প্রধান কার্যালয়ের সংবেদনশীল বিভাগগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান কার্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান এবং সমমর্যাদার কর্মকর্তা এবং বিশেষ বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতীত) এক শাখা থেকে অন্য শাখায় পর্যায়ক্রমে বদলি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, শাখাগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে তাদের বাধ্যতামূলক বার্ষিক ছুটি বা বাধ্যতামূলকভাবে প্রদত্ত ছুটিকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার-কর্মচারীর অপ্রত্যাশিতভাবে পূর্বের কার্যদিবসে সম্পাদিত সকল কার্যক্রম পরিস্থিতি এবং তাদের তত্ত্বাবধানে রক্ষিত নথিপত্র এবং সম্পদের সুরক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের মানদণ্ড যাচাই করে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মানব সম্পদ বিভাগ ও প্রধান কার্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করতে হবে।
কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই পদক্ষেপ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, কাজের প্রতি নতুন মনোযোগ সৃষ্টি এবং কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এটি কর্মীদের সুস্বাস্থ্য ও সামগ্রিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বার্ষিক ১০ দিন ছুটি কি বিশ্রামের জন্য দেয়া হয়?
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১০ দিনের যে বাধ্যতামূলক বার্ষিক ছুটি (বাধ্যাতামূলক ছুটি) প্রবর্তিত হয়েছে, সেটির মূল উদ্দেশ্য শুধু বিশ্রাম নয়, বরং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও এর সাথে জড়িত।
প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে এর উদ্দেশ্য উল্লেখ না থাকলেও, এই ধরণের বাধ্যতামূলক ছুটি বা ‘কম্পালসারি লিভ’-এর প্রধান কারণগুলো হলো:
১. স্বচ্ছতা ও নিরীক্ষা (Audit and Transparency): এটি এই ছুটির অন্যতম প্রধান কারণ। যখন একজন কর্মকর্তা দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ থেকে দূরে থাকেন, তখন অন্য একজন তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময়কালে, পূর্বের কর্মকর্তার ফাইল, নথিপত্র, হিসাব এবং দায়িত্বের অধীনে থাকা সম্পদের একটি নিরীক্ষা বা যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি বা অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা উদ্ঘাটন করা সহজ হয়। প্রজ্ঞাপনের শেষ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ছুটির সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পূর্বের কার্যদিবসে সম্পাদিত সকল কার্যক্রম পরিস্থিতি এবং তত্ত্বাবধানে রক্ষিত নথিপত্র ও সম্পদের সুরক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের মানদণ্ড যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে হবে।
২. বিশ্রাম ও নতুন মনোযোগ (Rest and Rejuvenation): যদিও এটি প্রাথমিক কারণ নয়, তবে এটি একটি সহায়ক উদ্দেশ্য। নিরবচ্ছিন্ন ছুটি কর্মীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে সতেজ করে কর্মক্ষেত্রে নতুন উদ্যম নিয়ে ফিরতে সাহায্য করে।
৩. কর্তৃত্ব বিকেন্দ্রীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি (Cross-training and Skill Development): কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে অন্য কর্মীকে সাময়িকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে অন্য কর্মীদেরও বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ে এবং একজনের অনুপস্থিতিতেও যাতে কাজ থেমে না যায়, তা নিশ্চিত হয়।
সংক্ষেপে: যদিও বিশ্রাম একটি আনুষঙ্গিক সুবিধা, তবে কর্মক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, নিরীক্ষা এবং অনিয়ম প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই এই বাধ্যতামূলক ১০ দিনের ছুটির প্রধান ও মৌলিক উদ্দেশ্য।



