সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ২০২৫ । ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি কিভাবে?

৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা অর্থাৎ প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের জন্য প্যানেল প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই প্যানেল প্রস্তুতের জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা সংগ্রহ করা হবে।– বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ২০২৫

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ হবে? হ্যাঁ। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের প্যানেল প্রস্তুত করা হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পদমর্যাদা কি থাকবে?

প্রিজাইডিং অফিসার: সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণির বা প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার কর্মকর্তা। ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাও এ পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ/সমমানের মাদ্রাসার শিক্ষক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বীমা ও কর্পোরেশনের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারাও এই পদের জন্য বিবেচিত হবেন। প্রয়োজনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বেসরকারি ব্যাংক-বীমার কর্মকর্তাদেরও এ পদে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার: সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বা সমমানের পদমর্যাদার কর্মকর্তারা।

পোলিং অফিসার: সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।

জাল ভোট ধরা পড়লে প্রিজাইডিং অফিসারের সুনির্দিষ্ট আইনি ক্ষমতা ও দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, জাল ভোট (Impersonation) প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জাল ভোট ধরা পড়লে প্রিজাইডিং অফিসার কি করবে? যদি কোনো ব্যক্তি জাল ভোট দিতে আসে বা অন্য কোনো ব্যক্তির পরিচয় ব্যবহার করে ভোট দিতে চায়, প্রিজাইডিং অফিসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করবেন। প্রিজাইডিং অফিসার ওই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করবেন। যদি প্রমাণিত হয় যে সে অন্য কোনো ব্যক্তির পরিচয়ে ভোট দিতে এসেছে, তবে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। প্রিজাইডিং অফিসার তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি একটি লিখিত নথিতে রেকর্ড করবেন এবং সেখানে উপস্থিত পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষর নেবেন। এই নথিতে জাল ভোট প্রদানকারীর নাম-ঠিকানা এবং কেন তাকে আটক করা হয়েছে তার বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৮৭ ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো ব্যক্তির পরিচয় ব্যবহার করে ভোট দেয় বা দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার আটককৃত ব্যক্তিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন যাতে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

Caption: নির্বাচনী নির্দেশনা পিডিএফ ডাউনলোড

একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এর দায়িত্ব কি? সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার (Assistant Presiding Officer) এর প্রধান দায়িত্ব হলো প্রিজাইডিং অফিসারের কাজে সহায়তা করা। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সূত্র অনুযায়ী, একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের মূল দায়িত্বগুলো হলো:

  1. ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের প্রস্তুতি ও পরিচালনা: ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত কক্ষ বা বুথ প্রস্তুত করা। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রিজাইডিং অফিসারের অনুপস্থিতিতে বা তার নির্দেশে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করা।
  2. ভোটার শনাক্তকরণ ও ব্যালট পেপার/ইভিএম প্রদান: ভোটারের পরিচয়পত্র এবং ভোটার তালিকার সাথে ভোটারের পরিচয় যাচাই করা।শনাক্তকরণের পর ভোটারকে ভোটদানের জন্য ব্যালট পেপার অথবা ইভিএম সরবরাহ করা। প্রতিটি ব্যালট পেপার/ইভিএম-এর রেকর্ড সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা।
  3. ভোটকেন্দ্রে শৃঙ্খলা রক্ষা: ভোটগ্রহণ চলাকালীন কেন্দ্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রিজাইডিং অফিসারকে সহায়তা করা। কোনো অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করা।
  4. নির্বাচনী সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ: প্রিজাইডিং অফিসারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, ইভিএম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সরঞ্জাম নিরাপদে রাখা। ভোটগ্রহণ শেষে ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত সকল সরঞ্জাম ও কাগজপত্র প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া। 
  5. প্রিজাইডিং অফিসারের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন: যদি কোনো কারণে প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে না পারেন বা দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, তবে রিটার্নিং অফিসারের লিখিত আদেশ সাপেক্ষে তিনি প্রিজাইডিং অফিসারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মূলত ভোটকেন্দ্রের একটি নির্দিষ্ট অংশের সার্বিক দায়িত্বে থাকেন এবং প্রিজাইডিং অফিসারের নির্দেশে তার ওপর অর্পিত সকল কাজ সম্পন্ন করেন।

কতজন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে? ?

নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনকে সফল করার জন্য প্রায় ১০ লাখেরও বেশি প্রিজাইডিং-পোলিং অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেবে। ইসি সচিবালয় জানিয়েছে যে, অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার তুলনামূলকভাবে নতুন ও ‘ফ্রেশ’ কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। এই প্যানেল তৈরির জন্য রিটার্নিং অফিসারদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তালিকা প্রস্তুত করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অথবা রোজার আগেই ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন।

জাল ভোট দেয়ার শাস্তি কি?

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৮৭ ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো ব্যক্তির পরিচয় ব্যবহার করে ভোট দেয় বা দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার আটককৃত ব্যক্তিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন যাতে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

ব্যালট পেপার বাতিল: যদি জাল ভোট প্রদানকারীকে ব্যালট পেপার দেওয়ার পর ধরা পড়ে, তবে সেই ব্যালট পেপারটি বাতিল করে আলাদা একটি খামে সীল করে রাখতে হবে।

 

 

ভোটার তালিকার মার্কিং: যে ভোটারের পরিচয় ব্যবহার করে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তার নামের পাশে ভোটার তালিকায় একটি বিশেষ চিহ্ন দিয়ে সতর্কতামূলক মন্তব্য লিখে রাখতে হবে। এটি করা হয় যাতে আসল ভোটার ভোট দিতে এলে তার বিষয়টি যাচাই করা যায়।প্রিজাইডিং অফিসার হলেন ভোটকেন্দ্রের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে শান্তি-শৃঙ্খলা, সুষ্ঠু ভোটদান প্রক্রিয়া এবং যেকোনো অনিয়ম প্রতিরোধের জন্য তিনিই চূড়ান্তভাবে দায়ী। জাল ভোট একটি গুরুতর অপরাধ এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া তার প্রধান দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *