সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

স্কুল সরকারীকরণ প্রক্রিয়া ২০২৫ । যশোর জেলার ‘জি জে আই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ হলো সরকারি!

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সরকারি হলো যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলাধীন ‘জি জে আই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

গত ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (২৯ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ) তারিখে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন (স্মারক নম্বর: ৩৭.০০.০০০০.০৬২.১৪.০১২.২০-১২৬৭) অনুযায়ী, বিদ্যালয়টিকে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

📜 প্রজ্ঞাপনের মূল কথা

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলাধীন ‘জি জে আই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ হতে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে নামকরণ করা হলো। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারীগণকে আত্মীকরণের বিষয়ে পরবর্তীতে বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তবে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর কর্তৃক আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক/কর্মচারীরা অন্যত্র বদলি হতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করার আদেশ জারি করা হয়েছে।

🧑‍💻 সুফল পাবে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা

এই সরকারিকরণের ফলে বিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সরকারের অধীনে আসায়, এর শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে, এটি এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নতমানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনবে।

✍️ সিনিয়র সহকারী সচিবের স্বাক্ষর

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফাহমিদা ইয়াসমিন-এর স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পাঠানো হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/ কর্মচারীদের আত্মীকরণ প্রক্রিয়া কি?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারীদের আত্মীকরণ প্রক্রিয়া হলো একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যখন সরকারি করা হয়, তখন সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদেরকে সরকারি বিধি ও শর্তানুযায়ী সরকারি সেবার আওতায় নিয়ে আসার বা সরকারি কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, শিক্ষক ও কর্মচারীদের চাকরি সরকারিকৃত প্রতিষ্ঠানের আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়।

আত্মীকরণ প্রক্রিয়ার মূল দিকগুলো:

মূল বিষয়ব্যাখ্যা
আত্তীকরণ বিধিমালাসরকার কর্তৃক প্রণীত ‘সরকারিকৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা’ অনুসারে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই বিধিমালায় পদ, যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা, চাকরির শর্ত ইত্যাদি নির্ধারণ করা থাকে।
শিক্ষক/কর্মচারীর মর্যাদাসরকারিকরণের পর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মচারীরা সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য হন। তবে, তাদের আত্তীকরণ বা অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলির আগ পর্যন্ত তাদের চাকরির শর্তাবলী উক্ত বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
পদের পরিবর্তন/সৃষ্টিবেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান পদগুলোর বিপরীতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সমমানের পদ সৃষ্টি বা নির্ধারণ করা হয়। যদি কোনো শিক্ষক/কর্মচারীর পদে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য যোগ্যতা না থাকে, তবে তাদের জন্য সাময়িকভাবে ভিন্ন পদ বা শর্ত আরোপ হতে পারে।
যোগ্যতা যাচাইশিক্ষক ও কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য শর্ত সরকারি চাকুরির বিধিমালার আলোকে যাচাই করা হয়। যারা সকল শর্ত পূরণ করেন, তাদের চাকরিই সাধারণত আত্মীকৃত হয়।
জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণআত্তীকৃত শিক্ষক/কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতা সাধারণত আত্তীকরণের তারিখ থেকে গণ্য করা হয়, তবে ক্ষেত্র বিশেষে বিধিমালায় বিশেষ বিধান থাকতে পারে।
বেতন ও ভাতাদিআত্তীকরণের পর তারা সরকারের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হন।

কোন আইন অনুসারে স্কুল সরকারিকরণ করা হয়?

স্কুল সরকারিকরণ সাধারণত কোনো একক আইন-এর মাধ্যমে হয় না, বরং এটি সরকারের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, নীতিমালা এবং পরবর্তীতে জারি করা বিধিমালা-র মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। নিম্নোক্ত নীতি ও বিধিমালাগুলো এই প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত:

১. সরকারিকরণের মূল ভিত্তি: প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা

বেসরকারি স্কুলকে সরকারি করার প্রধান ভিত্তি হলো সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত সাধারণত নিম্নলিখিত নীতির ভিত্তিতে নেওয়া হয়:

  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি: অধিকাংশ ক্ষেত্রে, যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি স্কুল ছিল না, সেসব উপজেলায় একটি করে স্কুল সরকারিকরণের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।
  • নীতিমালা (যেমন: সরকারিকরণের জন্য নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্বাচন নীতিমালা): এই নীতিমালায় স্কুল নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম যোগ্যতার সূচক নির্ধারণ করা হয়। যেমন: শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পাবলিক পরীক্ষার ফল, এমপিওভুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা, অবকাঠামো, এবং অবস্থানগত অবস্থা (উপজেলা সদরে অবস্থিত কিনা) ইত্যাদি।

২. আত্তীকরণ বিধিমালা: শিক্ষক/কর্মচারীদের জন্য প্রধান আইনি কাঠামো

স্কুল যখন সরকারি হিসেবে গেজেট-এ প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত হয়, তখন সেই স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের চাকরি সরকারি করার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধিমালা ব্যবহার করা হয়।

  • সরকারিকৃত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা, ২০২৪: স্কুল সরকারিকরণের পর শিক্ষক ও কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণ (সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্তিকরণ) করার জন্য এই বিধিমালাটিই বর্তমানে প্রধান আইনি কাঠামো।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: এই বিধিমালা অনুসারে, সরকারিকৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয় (যার মধ্যে নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও অন্তর্ভুক্ত)-এর শিক্ষক ও কর্মচারীরা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর অধীনে সরকারি কর্মচারী হিসেবে আত্তীকৃত হন।


৩. প্রজ্ঞাপন (গেজেট): চূড়ান্ত ঘোষণা

উপরে উল্লিখিত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা অনুসরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই প্রজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বেসরকারি স্কুল সরকারি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আপনি প্রশ্নে যে তথ্য দিয়েছেন (জি জে আই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ) সেটিও এই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমেই হয়েছে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *