সরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই জানে না যে, চাকরির খতিয়ান বহি বা চাকরির রেকর্ড কিভাবে সংরক্ষণ করিতে হয়, কোন বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করিতে হইবে এবং বিষয়গুলো প্রতিস্বাক্ষর করিতে হইবে তাহা সম্পর্কে অবগত নয়। সার্ভিস বুক রক্ষণাবেক্ষণ এবং ভুলের জন্য কে দায়ী তাও জানি না। নিচের সার্ভিসবুক সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিচের প্রদান করা হলো।
চাকরির রেকর্ড সংরক্ষণ সম্পর্কে বিএসআর পার্ট-১ এর পরিশিষ্ট-৮ এর সন্নিবেশিত নিয়মাবলী নিম্নরূপ:
১। গেজেটেড কর্মকর্তার চাকরির রেকর্ড মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃক নির্ধারিত নিরীক্ষা অফিসে নির্ধারিত ফরমে সংরক্ষিত হইবে। অনু-(৩৬)
২। নন গেজেটেড কর্মচারীদের চাকরি বহি মহা হিসাব নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে সংরক্ষণ করিতে হইবে। অনু-(৩৭)
৩। দুই কপি চাকরি বহি সংশ্লিষ্ট কর্মচারী প্রথম নিয়োগের সময় নিজস্ব ব্যয়ে সংগ্রহ করিবেন। এই চাকরি বহি কর্মরত অফিসের অফিস প্রধান প্রধানের হেফাজতে থাকিবে এবং বদলির ক্ষেত্রে বদলিকৃত কর্মস্থলে সংরক্ষণ করিতে হইবে। অনু-(৩৮)
৪। কর্মজীবনের প্রতিটি ধাপ চাকরি বহিতে অর্ন্তভূক্ত হইবে এবং তাহা অফিস প্রধান কর্তৃক সত্যায়িত হইতে হইবে। অফিস প্রধান লক্ষ্য রাখিবেন যেন প্রতিটি অন্তর্ভূক্তি যথাযথভাবে লিপিবদ্ধকরণ ও সত্যায়িত হয় এবং কোন কাটাকাটি বা ওভার রাইটিং না হয় এবং ভুল সংশোধন যেন পরিস্কারভাবে করা হয় ও তাহা যেন স্বাক্ষর দ্বারা সত্যায়িত হয়।
বৎসরের প্রারম্ভে একটি নির্দিষ্ট সময়ে অফিস প্রধান বা এই উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চাকরি বহি যাচাই করিয়া নিশ্চিত হইবেন যে, সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর চাকরি সংক্রান্ত তথ্য যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হইয়াছে এবং তিনি এই মর্মে চাকরি বহিতে প্রত্যয়ন লিপিবদ্ধ করিবেন, “চাকরি…………তারিখ হইতে……….পর্যন্ত যাচাই করা হইল।”
যাচাইকৃত চাকরি পেনশন গণনায় ধরা হইবে। অনু-(৩৯)
৫। সাময়িক বরখাস্তের সময় এবং চাকরির মধ্যবর্তী অন্যান্য বিরতীকালের সময় মেয়াদের পূর্ণ বিবরণসহ চাকরি বহির পৃষ্ঠায় আড়াআড়িভাবে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে এবং সত্যায়নকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তাহা স্বাক্ষর দ্বারা সত্যায়িত করিতে হইবে। অবিলম্বে যেন লিপিবদ্ধ করা হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা সত্যায়নকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব। অনু-(৪০)
৬। বিভাগীয় প্রধানের নির্দেশ না থাকিলে চাকরি বহিতে কর্মচারীর ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে কোন প্রত্যয়ন লিপিবদ্ধ করা যাইবে না। তবে পদাবনত করা হইলে, উহার কারণ সংক্ষিপ্তভাবে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে। অনু-(৪১)।
৭। পেনশনের জন্য চাকরি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যেন কোন জটিলতার সৃষ্টি না হয়, সেই অনু-(৩৯) এর নির্দেশ অনুযায়ী চাকরি বহি যথাযথভাবে সংরক্ষিত হইতেছে কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক কর্মচারীর দায়িত্ব। কোন কর্মচারী যে কোন সময় চাকরি বহি পরীক্ষা করিয়া দেখার ইচ্ছা ব্যক্তি করিলে, অফিস প্রধান অবশ্যই অনুমতি দিবেন। অনু -(৪২)
৮। নন-গেজেটেড কর্মচারী স্থায়ীভাবে বা সাময়িকভাবে অন্য অফিসে বদলি হইলে, বদলির প্রকৃতি চাকরি বহিতে লিপিবদ্ধ করিয়া ঐ সময় পর্যন্ত চাকরি যাচাইপূর্বক অফিস প্রধান কর্তৃক বা এই উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত করিয়া বদলিকৃত কর্মস্থলের অফিস প্রধানের নিকট প্রেরণ করিবেন এবং উক্ত অফিস প্রধান তাহার অফিসে উহা রক্ষণাবেক্ষণ করিবেন। অনু-(৪৩)
৯। কোন কর্মচারী ফরেন সার্ভিসে বদলি হইলে মহা হিসাব নিয়ন্ত্রকের নির্ধারিত নিরীক্ষা কর্মকর্তার নিকট তাহার মূল চাকরি বহি প্রেরণ করিতে হইবে এবং ডুপ্লিকেট কপি মূল অফিসে সংরক্ষিত হইবে। ফরেন সার্ভিসকালের ছুটির প্রাপ্যতাসহ প্রয়োজনীয় বিবরণী মূল চাকরি বহিতে নিরীক্ষা কর্মকর্তা স্বাক্ষরসহ লিপিবদ্ধ করিয়া তাহা ফেরত দিবেন। উক্ত কর্মচারী পুনরায় সরকারী চাকরিতে বদলি হইলে পুন: মূল চাকরি বহি উক্ত নিরীক্ষা কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করিতে হইবে এবং নিরীক্ষা অফিসার প্রয়োজনীয় বিবরণী স্বাক্ষরসহ লিপিবদ্ধ করিয়া তাহা ফেরত দিবেন। ফরেন সার্ভিসের কর্মকালের সময়ের লিপিবদ্ধ বিবরণী নিরীক্ষা কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য কোন কর্তৃপক্ষ সত্যায়িত করিতে পারিবে না। অনু- (৪৫)
১০। (এ) শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ব্যতীত চাকরি হইতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হইলে বা পদত্যাগ করিলে, চাকরি বহি কর্মচারীকে ফেরত দেওয়া যাইবে। তবে ফেরত প্রদানের পূর্বে ফেরত প্রদানের বিষয়টি চাকরি বহিতে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে। কর্মচারীর মৃত্যুতে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাহার আত্মীয় স্বজনকে চাকরি বহি ফেরত দেওয়া যাইবে।
(বি) চাকরি হইলে বরখাস্তকৃত কোন কর্মচারী পরবর্তী পর্যায়ে চাকরিতে পুর্নবহাল হইলে অনুরোধ পত্রের ভিত্তিতে চাকরি বহি পুনর্বহালকৃত অফিসের অফিস প্রধানের নিকট প্রেরণ করিতে হইবে।
১১। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পেনশন মঞ্জুরির পর চাকরি বহি তাহাকে ফেরত দেওয়া যাইতে পারে। তবে এইক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে স্বাক্ষরসহ চাকরি বহিতে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে যে, “……অবসরে যাওয়ায় তাহার আবেদনের প্রেক্ষিতে তাহার চাকরি বহি তাহাকে ফেরত দেওয়া হইল” অনু- (৪৯) এর নোট।
সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা প্রশাসন শাখা বা হিসাব শাখায় কাজ করেন তারাই কেবল চাকরি সম্পর্কিত বিধি বিধানগুলো সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন। অবশিষ্ট ৮০% কর্মকর্তা/ কর্মচারীই সরকারি চাকরির বিধানাবলী, বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস, হালনাগাদ পেনশন রুলস, ভ্রমণ বিধি ও প্রাপ্যতা , উৎসব ভাতার প্রাপ্যতা, সরকারি কর্মচারীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা বা চিকিৎসা শেষে ব্যয় উত্তোলন, বিভিন্ন ভাতাদির প্রাপ্যতা, বিভিন্ন ধরনের অগ্রিম সুবিধা গ্রহণ, নিয়োগ ও বদলি নীতিমালা, বিভিন্ন ধরনের ছুটি কিভাবে নিতে হয়, বাসা বরাদ্দ বা বাড়ি ভাড়া প্রাপ্যতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা বা রেশন সুবিধা ইত্যাদি সর্ম্পকে ভাল ধারনা রাখেন না। এই ওয়েবসাইটটিতে উপরোক্ত বিষয়গুলো সহজ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সাধারণ কর্মচারী যাতে সহজেই ব্যাপার গুলো বুঝতে পারে এবং যদি কোন বিধি বুঝতে সমস্যা হয় তা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেউ যদি কোন বিধি বা নীতিমালা বুঝতে অসমর্থ হয় তবে আমাদের ফেসবুক পেইজ, গ্রুপ এবং ইমেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন।
প্রতিটি পোস্টের রেফারন্স পোস্টের শেষে “ডাউনলোড” নামের যে লিংক দেওয়া আছে সেখান থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন। ডাউনলোড ফাইল Google Drive or Box.com এ স্টোর করা আছে। কারও যদি ফাইলটি ডাউনলোড করতে সমস্যা হয় তবে আপনি আপনার নিজের gmail Account এ Login করে নিন। লগইন করার পর ঠিকই ফাইলটি ডাউনলোড হবে। তবুও যদি আপনি রেফারেন্স ফাইল ডাউনলোডে সমস্যায় পড়ে তবে আপনি এডমিনকে alaminmia.tangail@gmail.com এ ফাইলের নাম দিয়ে নক করুন। এডমিন আপনার ইমেইলের উত্তর দিবে।
কিছু কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের কাছে সরকারি চাকরির বিধি বিধানের কিছু বইও হয়তো সংগ্রহে আছে কিন্তু তা মূলত সংগ্রহেই মাত্র বের করে পড়ার সময় বা সুযোগ নেই। কারও সময় বা সুযোগ থাকলেও বের করে পড়া পর্যন্ত হয় না। আবার দেখা যায় যে, অসংখ্য বইয়ের মধ্যে একটি সামারি বই চাকরির বিধানাবলীই শুধুমাত্র সংগ্রহ রয়েছে। সরকারি চাকরি সংক্রান্ত অসংখ্যা বই রয়েছে যেগুলো আবার প্রতি বছরই আপডেট হয়ে থাকে আপনি যদি শুধুমাত্র এই ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত থাকেন তবে আপনি সকল আপডেট তথ্যই পেয়ে যাবেন। ব্লগটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।