সরকারি কর্মচারীদের প্রতিনিধি সমাবেশ ২০২৫ । ডিসেম্বরের মধ্যে পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে?
ঢাকা, ১২ নভেম্বর ২০২৫: ডিসেম্বরের মধ্যে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের জোরালো দাবিতে আগামী ১৪/১১/২০২৫ তারিখ রোজ শুক্রবার এক প্রতিনিধি সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ।
সংগঠনটির এক ঘোষণার প্রেক্ষিতে জানা যায়, তাদের দাবির ভিত্তিতে এবং হল প্রাপ্তি সাপেক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হবে।
সমাবেশের বিবরণ:
- সংগঠন: বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ
- দাবি: ডিসেম্বরের মধ্যে পে-স্কেল বাস্তবায়ন
- তারিখ ও সময়: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, বিকাল ৩ ঘটিকা
- স্থান: জাতীয় প্রেসক্লাবের নিচতলার হল রুম
দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার মধ্যে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিটি একটি প্রধান ইস্যু হিসেবে রয়েছে। পূর্বের বিভিন্ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় এই প্রতিনিধি সমাবেশের ঘোষণা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈষম্যহীন পে-স্কেল বাস্তবায়ন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল, এবং কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট পদ ও স্কেল বৈষম্য নিরসনসহ তাদের সাত দফা দাবি নিয়ে এই সমাবেশে আলোচনা হতে পারে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদানের দাবিও তাদের মূল এজেন্ডায় রয়েছে।
অর্থনৈতিক চাপ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারি কর্মচারীরা বিশেষত নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা (১১-২০ গ্রেড) বেশ কঠিন সময় পার করছেন। এই সমাবেশ তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সমাবেশে সারাদেশ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মচারী প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এই সমাবেশে সকল সরকারি কর্মচারীকে উপস্থিত থাকার জন্য আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

পে স্কেলের দাবীতে কেন সরকারী কর্মচারীদের জমায়েত হতে হচ্ছে?
বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের জন্য সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নতুন পে-স্কেল ঘোষণার নিয়ম থাকলেও, সর্বশেষ পে-স্কেলটি ছিল ২০১৫ সালে। এরপর প্রায় এক দশক পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নতুন পে-স্কেল (নবম পে-স্কেল) বাস্তবায়ন করা হয়নি। এই দীর্ঘ ব্যবধান কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। পূর্বে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন বছরের শুরুতে (২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে) নতুন পে-স্কেল কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করেছেন যে পে-স্কেল বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্বাচিত সরকার নেবে, যা কর্মচারীদের ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে।
১. মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি
- বাস্তব আয় হ্রাস: গত প্রায় দশ বছরে দেশের মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) অনেক বেড়েছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুসারে বেতন পাচ্ছেন (যদিও বার্ষিক ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়)। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের বাস্তব ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, বিশেষত নিম্ন গ্রেডের (১১-২০ গ্রেড) কর্মচারীরা আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
- দাবি: এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা বেতন ৭০% থেকে ১০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদানের দাবি করছেন।
২. বেতন বৈষম্য ও অসঙ্গতি
- গ্রেডভিত্তিক বৈষম্য: বর্তমান বেতন কাঠামোতে বিদ্যমান গ্রেডভিত্তিক বৈষম্য এবং অন্যান্য আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধা নিয়ে কর্মচারীদের বিভিন্ন ফোরামের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তারা বিদ্যমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে এনে বৈষম্যহীন একটি নতুন বেতন কাঠামো তৈরির দাবি জানাচ্ছেন।
- অন্যান্য ভাতা: নতুন পে-স্কেলের পাশাপাশি তারা বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা ভাতা, এবং ঝুঁকি ভাতাসহ অন্যান্য ভাতাদি বাড়ানোরও দাবি করছেন।
৩. সরকারের আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ
- অর্থনৈতিক চাপ: অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের সীমিত আর্থিক সক্ষমতা, রাজস্ব ঘাটতি, এবং ঋণ পরিশোধের চাপ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে দ্বিধা করছে।
- আন্দোলনের কারণ: এই অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার অজুহাতে পে-স্কেল বাস্তবায়নে বিলম্ব বা সিদ্ধান্ত পরবর্তী সরকারের ওপর ঠেলে দেওয়ায় সরকারি কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য সরকারকে চাপে রাখতে জমায়েত হতে বাধ্য হচ্ছেন।
সংক্ষেপে, দীর্ঘদিন ধরে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নে বিলম্ব, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সরকারের সিদ্ধান্তহীনতাই সরকারি কর্মচারীদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে বা জমায়েত হতে বাধ্য করছে।


