সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য ২০২৫ । পে কমিশনের নিকট কর্মচারীদের চাওয়া কি?
পে কমিশন (Pay Commission) হলো একটি কমিটি যা মূলত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পর্যালোচনা ও নতুন কাঠামো নির্ধারণের জন্য গঠন করা হয়। এটি সাধারণত নির্দিষ্ট সময় পরপর গঠিত হয়, যেমন ভারতে প্রতি ১০ বছর পর পর একটি নতুন পে কমিশন গঠন করা হয়– সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য ২০২৫
পে কমিশনের মূল কাজ কি? বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা যে বেতন ও ভাতা পাচ্ছেন, তা জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, তা যাচাই করে থাকে। সরকারের কাছে একটি নতুন বেতন কাঠামো, বিভিন্ন ভাতা (যেমন – বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত ভাতা) এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সুপারিশ পেশ করেন। বিভিন্ন গ্রেডের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য হ্রাস করে একটি যৌক্তিক ও ন্যায্য কাঠামো তৈরি করেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা নিয়েও কমিশন সুপারিশ দিয়ে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন পে কমিশন গঠন করেছে। এটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এর মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করা হয় এবং এটি দেশের অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলে।
পে কমিশনের নিকট কর্মচারীদের মূল চাওয়া সাধারণত কয়েকটি বিষয় ঘিরে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীরা সাধারণত যে দাবিগুলো করে থাকেন তা হলো—
✅ কর্মচারীদের প্রধান চাওয়া
- বেতন বৃদ্ধি
- বাজারদর, মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল বেতন বাড়ানো।
- ভাতা সমন্বয়
- গৃহভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা ভাতা, যাতায়াত ভাতা ইত্যাদি বাস্তব খরচ অনুযায়ী সমন্বয় করা।
- পদোন্নতি ও গ্রেড বৈষম্য দূরীকরণ
- একই ধরনের কাজের জন্য বিভিন্ন ক্যাডার/কর্মচারীর মধ্যে গ্রেড বা স্কেলের বৈষম্য দূর করা।
- পদোন্নতির ক্ষেত্রে সময়মতো সুযোগ নিশ্চিত করা।
- পেনশন ও অবসর সুবিধা
- অবসরের পর নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য পেনশন ও গ্র্যাচুইটির হার বৃদ্ধি।
- চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষা আরও শক্তিশালী করা।
- চাকরির নিরাপত্তা ও সুযোগ বৃদ্ধি
- চুক্তিভিত্তিক বা অস্থায়ী নিয়োগের পরিবর্তে স্থায়ী পদে নিয়োগ।
- কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও পদোন্নতির ন্যায্য সুযোগ।
- বৈষম্যহীন জাতীয় বেতন স্কেল
- ক্যাডার ও নন-ক্যাডার, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের মধ্যে বৈষম্যহীন একটি একীভূত স্কেল।
👉 সহজভাবে বললে, কর্মচারীরা চান ন্যায্য, বৈষম্যহীন ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন ও ভাতা, যাতে তারা সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।
সরকারি কর্মচারীগণ একটি মান সম্মত জীবন যাপন করতে যুক্তিসঙ্গত পে স্কেল চাই / কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন গ্রেড বৈষম্য দূর করতে হবে।
পে কমিশনকে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়সীমাটি কমিশন গঠনের তারিখ থেকে গণনা করা হবে। সম্প্রতি গঠিত পে কমিশনের ক্ষেত্রে, গত ২৭ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ২২ সদস্যের এই কমিশন গঠন করা হয়। সেই হিসেবে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে কমিশনকে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
Caption: Slogan Card bangladesh
সরকারি কর্মচারীদের দাবীর পক্ষে স্লোগান ২০২৫ । পে কমিশনের নিকট কর্মচারীদের চাওয়াগুলো স্লোগান আকারে তুলে ধরলাম—
- বাজারদরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন চাই!
- বৈষম্য নয়, সমান মর্যাদার স্কেল চাই!
- মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে, বেতনও বাড়াতে হবে!
- চিকিৎসা-শিক্ষা-ভাতা বাস্তব খরচ অনুযায়ী চাই!
- একই কাজের জন্য একই গ্রেড চাই!
- সময়মতো পদোন্নতি চাই, সুযোগে বৈষম্য চাই না!
- অবসর জীবনে নিশ্চয়তা চাই—পেনশন বাড়াতে হবে!
- স্থায়ী নিয়োগ চাই, অস্থায়ী নিয়োগ নয়!
- ন্যায্য ও বৈষম্যহীন জাতীয় বেতন স্কেল চাই!
- কর্মচারীর সম্মান রক্ষা করো, ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করো!
মার্চ ২০২৬ মাসে কি ৯ম পে স্কেল জারি হতে পারে?
যেহেতু পে কমিশনকে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে, এবং কমিশনটি গঠিত হয়েছে ২৭ জুলাই, ২০২৫ তারিখে, তাই ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যেই তাদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। তবে, মার্চ ২০২৬-এ নবম পে স্কেল জারি হওয়ার সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে কমিশনের সুপারিশ এবং সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত, পে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সরকার তা পর্যালোচনা করে এবং বাজেট ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। অতএব, মার্চের মধ্যে এটি জারি হতে পারে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে, নতুন পে স্কেল কার্যকর হয় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কিছু মাস পরে, তবে এর সুবিধা কার্যকর হয় সাধারণত পূর্ববর্তী তারিখ (retrospective effect) থেকে কিছু মাস লাগে তাই মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
📊 প্রস্তাবিত ১০ গ্রেডের বেতন স্কেল (সর্বনিম্ন ২৫,০০০ টাকা ভিত্তিক)
গ্রেড | ন্যূনতম বেতন (টাকা) | সর্বোচ্চ বেতন (টাকা) | বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট (টাকা) |
---|---|---|---|
১০ | ২৫,০০০ | ৩৫,০০০ | ১,০০০ |
৯ | ৩০,০০০ | ৪২,০০০ | ১,২০০ |
৮ | ৩৬,০০০ | ৫০,০০০ | ১,৪০০ |
৭ | ৪৩,০০০ | ৬০,০০০ | ১,৭০০ |
৬ | ৫১,০০০ | ৭২,০০০ | ২,০০০ |
৫ | ৬০,০০০ | ৮৫,০০০ | ২,৫০০ |
৪ | ৭০,০০০ | ১,০০,০০০ | ৩,০০০ |
৩ | ৮৫,০০০ | ১,২৫,০০০ | ৩,৫০০ |
২ | ১,০০,০০০ | ১,৫০,০০০ | ৪,০০০ |
১ | ১,২০,০০০ | ১,৮০,০০০ | ৫,০০০ |
আমি বর্তমানে ৬ষষ্ঠ গ্রেডে ৬০০০০ টাকা বেসিক পাচ্ছি। ৫ম গ্রেডে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্ত হলে আমার বেসিক কতো হবে ? প্রস্তাবিত স্কেলে ৫ম গ্রেড দেখাচ্ছে ৬০০০০/- টাকা থেকে শুরু হবে । অথচ ৬ষষ্ঠ গ্রেডে থাকলে আমার সর্বোচ্চ ধাপ ৭২০০০/- হওয়ার কথা। এই আর্থিক ক্ষতি কিভাবে পূরণ করবে?
নতুন পে স্কেল ঘোষিত হলে এসব সমস্যা দূর হবে আশা করছি।
ক্যাডার, নন ক্যাডার, কর্মচারী , কর্মকর্তা এজাতীয় বৈষম্যমুলক ও নেতিবাচক শব্দ পরিহার করে সবার জন্য সম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করে একটি বৈষম্যৃুমুক্ত বেতনকাঠামো চাই যেখানে থাকবেনা ঔপনিবেশিক শক্তির সৃষ্ট কোন একটি শ্রেনীর আধিপত্য। আর্থিক বেনিফিট সকল সার্ভিসের সমান থাকবে।