বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

৮:১ থেকে ১০:১ অনুপাত সুপারিশে পে কমিশন ২০২৫ । নতুন বেতন কাঠামোতে ভাতা বাড়বে, বৈষম্য থাকবে?

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গঠিত নতুন পে কমিশন জানিয়েছে, আগামী বেতন কাঠামোতেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১ এর মধ্যে থাকবে। অর্থাৎ বিদ্যমান ১০:১ অনুপাত বহাল রাখা হবে। কমিশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে একই ধরনের অনুপাত বিদ্যমান থাকায় বাংলাদেশেও এই ধারা অনুসরণ করা হবে।– ৮:১ থেকে ১০:১ অনুপাত সুপারিশে পে কমিশন ২০২৫

সরকারি চাকরিতে বেতন বৈষম্য থাকবেই? হ্যাঁ। সরকারি কর্মচারীরা বর্তমান ২০ গ্রেডের পরিবর্তে ১২ গ্রেডে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের দাবি, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ১:৪ অনুপাতে নির্ধারণ করতে হবে। তবে সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ভিন্ন অবস্থান জানিয়েছেন। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৮ অথবা ১:১০ রাখা হবে, অর্থাৎ আগের মতোই থাকবে। পাশ্ববর্তী দেশগুলোতেও এই অনুপাত বিদ্যমান, তাই বাংলাদেশের কাঠামোও সেই ধারা অনুসরণ করবে।

টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড ফিরবে না? না। অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার জন্য অনলাইন জরিপ ও দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এতে কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার চেয়ে সময়সূচি ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে সরকার বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এর আগে সরকার জানিয়েছিল, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার। তবে এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই এটি বাস্তবায়ন করবে। এদিকে, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল না করে কমিশন নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করবে বলে জানা গেছে। ফলে কর্মচারীদের দাবি ও সরকারের অবস্থানের মধ্যে বড় ধরনের অমিল তৈরি হয়েছে।

গ্রেড সংখ্যা ১:৪ হবে না? না। সরকারের অবস্থান ভিন্ন। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বেতন কাঠামোর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৮ অথবা ১:১০ রাখা হবে, অর্থাৎ আগের মতোই থাকবে। তিনি যুক্তি দেখান, পাশ্ববর্তী দেশগুলোতেও এ অনুপাত বিদ্যমান এবং বাংলাদেশও একই ধারা বজায় রাখবে। অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুধু কর্মচারীদের দাবি নয়, বরং অনলাইন জরিপ ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারের মতে, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বেসরকারি খাতের প্রভাব বিবেচনায় নিয়েই কাঠামো নির্ধারণ জরুরি।এর আগে সরকার জানিয়েছিল, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার। তবে এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলা হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই এটি বাস্তবায়ন করবে। পে কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করা হবে না। পরিবর্তে নিয়মিত পদোন্নতির প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ আসবে।

সম্ভাব্য বেতন কাঠামো ২০২৫ । দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বেতন কাঠামো চূড়ান্ত হবে / সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, কর্মচারীরা যেখানে গ্রেড সংখ্যা কমানো ও বেতনের অনুপাত হ্রাসকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, সেখানে সরকার বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বাস্তবায়নের সময়সূচি ও আর্থিক সক্ষমতাকে। ফলে বেতন কাঠামো ঘিরে সরকারের সিদ্ধান্ত ও কর্মচারীদের প্রত্যাশার মধ্যে একটি অমিল থেকে যাচ্ছে।

বর্তমান সরকার ই কি পে স্কেল বাস্তবায়ন করে যাবে? হ্যাঁ, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন করবে। পূর্বে সরকার জানিয়েছিল, নতুন বেতন কাঠামো পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার বাস্তবায়ন করবে। এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলা হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই এটি কার্যকর করবে। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার কর্মচারীদের দাবির চেয়ে সময়সূচি, আর্থিক সক্ষমতা ও বেসরকারি খাতের প্রভাবকে বেশি গুরুত্ব দেবে। অর্থাৎ, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হবে, কিন্তু কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিবর্তন নয়—সরকারের শর্ত ও সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী হবে।

নতুন কাঠামো চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কর্মচারীর দাবি নয়, বরং অনলাইন জরিপ ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই এটি বাস্তবায়ন করবে।

নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে সরকারের চিন্তা ভাবনা ২০২৫ । কমিশনের সদস্য বলেন, যেমন সশস্ত্র বাহিনী ও বিচার বিভাগের জন্য আলাদা বাড়তি ভাতা আছে, তেমনি গবেষণা, ডাক্তারি ও প্রকৌশলে বিশেষ ভাতা চালুর মাধ্যমে যোগ্য জনবল ধরে রাখা যাবে।

  1. চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব: বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা চাকরির শুরু থেকে অবসরোত্তর সময় পর্যন্ত মাসে মাত্র ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। কমিশন এ ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি অবসরের পরও বাড়তি সুবিধা রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে।
    এছাড়া কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা সহায়ক ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশও করবে কমিশন। 
  2. পদোন্নতি সহজীকরণ:২০১৫ সালে ড. ফরাসউদ্দিন কমিশনের সুপারিশে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে ১০ বছর পর স্বয়ংক্রিয় পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। বর্তমান কমিশনও ওই নীতিই বহাল রেখে পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার প্রস্তাব দিতে পারে। 
  3. খাতভিত্তিক ভিন্ন কাঠামো: বর্তমানে জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায় প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিদ্যুৎ কোম্পানি, সশস্ত্র বাহিনী ও বিচারকদের আলাদা কাঠামো বিদ্যমান। কমিশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, এগুলো আলাদা কাঠামোতেই থাকবে, তবে জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সামঞ্জস্য রাখার সুপারিশ করা হবে। 
  4. বেসরকারি খাতের ওপর প্রভাব: কমিশনের আশঙ্কা, সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো বেসরকারি খাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বর্তমানে বিনিয়োগের পরিস্থিতি দুর্বল হওয়ায় আগামী অক্টোবর মাসে ব্যবসায়ী চেম্বার ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 
  5. শ্রমিকদের মজুরির সমন্বয়: সরকার ইতোমধ্যে পোশাক শিল্পসহ ৪৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে। কমিশন সুপারিশ করবে, এসব খাতের মজুরি জাতীয় বেতন কাঠামোর বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সমন্বয় করার। 
  6. বিশেষ ভাতা গবেষণা ও উদ্ভাবনে: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন কাঠামোয় বিশেষ ভাতার প্রস্তাব আসছে। কমিশনের মতে, এসব ক্ষেত্রে তরুণদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় দক্ষ জনবল সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে গবেষণা ও উদ্ভাবনে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে প্রণোদনা হিসেবে এ ভাতা দেওয়া হবে।

সরকারি কর্মচারীদের দাবী দাওয়া কি আদৌ পূরণ হবে?

সরকারি কর্মচারী চাইছেন ১:৪ অনুপাত, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা। সরকার বা অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য: অনুপাত ১:৮–১:১০, বিদ্যমান কাঠামোর মতোই রাখা হবে অর্থাৎ, কর্মচারীর মূল দাবি পূরণ হবে না। গ্রেড সংখ্যা কর্মচারী চাইছেন ২০ গ্রেড থেকে ১২ গ্রেডে হ্রাস। সরকার এখনো গ্রেড সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে না অর্থাৎ, গ্রেড হ্রাসের দাবিও পূরণ হবে না। ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা-চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি সম্ভব। গবেষণা, ডাক্তারি, প্রকৌশল ও উদ্ভাবনে বিশেষ ভাতা প্রবর্তনের সম্ভাবনা আছে অর্থাৎ, কিছু আনুষঙ্গিক সুবিধা কর্মচারীদের জন্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পদোন্নতি-টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল হবে না, তবে নিয়মিত পদোন্নতি সহজীকরণ হতে পারে। এটি কর্মচারীদের কিছু স্বল্প সুবিধা দিতে পারে, কিন্তু দাবি পূর্ণ নয়। মূল দাবি পূরণ হবে না ১:৪ অনুপাত ও গ্রেড হ্রাস। আনুষঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধি হতে পারে: ভাতা, বিশেষ প্রণোদনা, পদোন্নতি সহজীকরণ অর্থাৎ, কর্মচারীদের আশা অনুযায়ী পূর্ণ সন্তুষ্টি সম্ভব নয়, তবে কিছু আংশিক স্বস্তি পেতে পারেন।

মোটামুটি সিদ্ধান্ত

কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী ১:৪ অনুপাত বা ১২ গ্রেডের কাঠামো বাস্তবায়ন হবে না।বেতন বৈষম্য থাকবে, তবে ভাতা ও বিশেষ সুবিধা বৃদ্ধি পেতে পারে।পদোন্নতির প্রক্রিয়া সহজ করা হবে।
বিশেষ খাতে (চিকিৎসা, শিক্ষা, গবেষণা) ভাতা বৃদ্ধি ও প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে।সময়সূচি ও দেশের আর্থিক সক্ষমতা সরকারের জন্য প্রধান প্রাধান্য।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

4 thoughts on “৮:১ থেকে ১০:১ অনুপাত সুপারিশে পে কমিশন ২০২৫ । নতুন বেতন কাঠামোতে ভাতা বাড়বে, বৈষম্য থাকবে?

  • মনিরুল ইসলাম

    বৈষম্য দূর করার জন্য অনুপাত হবে ৪:১থেকে ৬:১

  • ছোট বড় সবার ক্ষেত্রে ঈদ বোনাস, বৈশাখের ভাতা সমান হওয়া প্রয়োজন। উৎসব বৈষম্য ভাঙতে হবে।
    সবাই একই বাজারে কিন্তু বাজার করে। ছোট চাকরি জীবিদের স্কেল অনুযায়ী আলাদা বাজরের ব্যবস্থা নাই, যেখানে গরু পাওয়া যায় স্কলে অনুযায়ী। তাই ভাতা সবার সমান হতে হবে তাহলে আনন্দ সামন সমান।

  • কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই বা ততোধিক বছর নিয়োগ যদি বন্ধ থাকে তাহলে নিয়োগের জন্য সংরক্ষিত শূন্য পদ , পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে, এরূপ কোনো প্রজ্ঞাপন কারো কাছে থাকলে দয়া করে জানাবেন। ধন্যবাদ। Chinmay

  • সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধি দেখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *