টিফিন ভাতা নাকি ভিক্ষা ভাতা ২০২৫ । সরকারি কর্মচারীদের টিফিন ভাতা ন্যূনতম মাসিক ১০০০ টাকা হওয়া উচিত?
জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ অনুসারে সকল নন- গেজেটেড বেসামরিক কর্মচারী মাসিক ১৫০.০০ (একশত পঞ্চাশ) টাকা টিফিনভাতা প্রাপ্য হইতেন। বেতন ও ভাতাদি আদেশ, ২০১৫ জারি হওয়ার পর এ টিফিন ভাতা ১১-২০ তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য। যা মাত্র ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে যা বিগত ৫ বছর ধরে এই হারে বলবৎ রয়েছে-সরকারি কর্মচারীদের জন্য হাস্যকর ভাতা ২০২৫
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটি কিভাবে যুগপোযোগী টিফিন ভাতা হয়? বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর এর জাতীয় পে স্কেল বাস্তবায়ন কমিটি কিভাবে দৈনিক ৬.৬৬ পয়সা হারে ৩০ দিনের জন্য ২০১৫ সালে এসেও ২০০ টাকা টিফিন ভাতা নির্ধারণ করতে পেরেছেন আমার নিকট বোধগম্য নয়। যেখানে ফরাস উদ্দিন নিজে দেখেছেন ব্যাংকগুলোর জন্য ২০০ টাকা টিফিন ভাতা নির্ধারণ করা থাকলেও কোন প্রকার সরকারি আদেশ ছাড়াই লাঞ্চ ভাতা হিসাবে দৈনিক ২০০ টাকা নিচ্ছেন। নীতি নির্ধারকগণ এটি পান না বলে সাধারণ বিবেচনার মধ্যেও রাখতে পারেন নি যে, ৬.৬৬ পয়সায় দৈনিক কিভাবে একজন ১০-২০ গ্রেডের কর্মচারী টিফিন কাজ সম্পন্ন হতে পারে। টিফিন ভাতা ছাড়াও মাসিক যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা এবং কাপড়চোপর ধোলাই ভাতা ১০০ টাকা যা আজও পুন:নির্ধারণ হয়নি।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান লাঞ্চ ভাতা দৈনিক ২০০ টাকা? হ্যাঁ। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সহ অন্যান্য অনেক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ১১-২০ তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ১৫০-২০০ টাকা লাঞ্চ ভাতা নির্ধারণ করছেন। সেখানে সরকারি কর্মচারীদের নামে মাত্র টিফিন ভাতা প্রদান করে কেন বিভিন্ন মহলে হাসির পাত্র বানানো হচ্ছে। একজন সরকারি কর্মচারী সাধারণ জনগণের নিকট মুখে বলতেও লজ্জাবোধ করেন যে, তিনি প্রতি মাসে টিফিন ভাতা বাবদ ২০০ টাকা বেতনের সাথে আহরন করে থাকেন। বর্তমান সরকারের নিকট বিনীত অনুরোধ যে পে স্কেল যখনই দেওয়া হোক না কেন, ২০০ টাকার সামান্য টিফিন ভাতাকে একটি যোক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা হোক।
বিগত ৫ বছরে যে সকল ভাতা বা সুবিধা সমূহ পুন: নির্ধারণ করা হয়েছে-
১১-২০ তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য টিফিন ভাতা ছাড়া বেশ কিছু ভাতা পুন: নির্ধারণ করা হয়েছে। টিফিন ভাতাকে কোন বিবেচনায় আনা হয়নি। নিচে তুলে ধরা হলো যুগপযোগী পুন: নির্ধারণ করা ভাতা ও সুযোগ সুবিধাগুলো।
২০০ টাকা টিফিন ভাতা নিয়ে কর্মচারীগণ পত্র প্রেরণের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন
বৈষমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। মাসিক টিফিন ভাতা ২০০ টাকা! মানে দৈনিক ৬.৬৬ টাকা। বর্তমান বাজারে এক কাপ চায়ের দাম ১০ টাকার বেশি। সেখানে ৬.৬৬ টাকা দিয়ে কি করবেন? এমন হাস্যকর টিফিন ভাতা কেউই চায় না। তাই, হয় সম্মানজনক ভাতা দেওয়া হোক, না হয় এই ভাতা দেওয়া বন্ধ করা হোক। এমন মন্তব্যই জুড়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চৌধুরী রিন্টু।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য ভিক্ষা ভাতা ২০২৫ । সরকার কেন টিফিন ভাতা পুন: নির্ধারণ করেনি?
এই ভাতাটি যদি কর্মকর্তা বা আমলাদের জন্য প্রযোজ্য হতো তবে এটি অনেক আগেই পুন:নির্ধারিত হতো। শুধুমাত্র কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হওয়ার কারণে সরকার নজর দেয়নি। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটিকে ভিক্ষা ভাতাও বলছেন।
আবুল কাশেম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জনাব মনিরুল হক বসুনীয়া নিম্নরূপ আবেদন করেছেন।
বরাবর,
উপজেলা শিক্ষা অফিসার
রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।
মাধ্যম: যথাযথ কর্তৃপক্ষ।
বিষয়: টিফিন ভাতা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক নিবেদন এই যে, আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী আমাকে প্রদেয় মাসিক টিফিন ভাতা ২০০/- (দুইশত) টাকা যা গড়ে প্রতিদিনে প্রায় ৬.৬৬/- (ছয় টাকা ছেষট্টি পয়সা) হারে দেয়া হয়, তা আমি ব্যক্তিগত কারণে প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি।
অতএব, আমার মাসিক ভাতা থেকে প্রদেয়া টিফিন ভাতা প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার নেক মর্জি হয়।
নিবেদক,
(মনিরুল হক বসুনীয়া)
সহকারি শিক্ষক
আবুল হাশেম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
তারিখ: ০৫/০৩/২০২০
টিফিন ভাতা প্রত্যাহারের আবেদন প্রেরণের মাধ্যমে ক্ষোপ প্রকাশ: ডাউনলোড
উপরোক্ত বিষয় ও রেফারেন্সের আলোকে বলতে চাই যে, কর্তৃপক্ষ টিফিন ভাতাকে সদয় বিবেচনা পূর্বক একটি যোক্তির হার নির্ধারণ করুন।
সরকারি কর্মচারীদের টিফিন ভাতা কত হওয়া উচিত?
সরকারি কর্মচারীদের টিফিন ভাতা কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ও দাবি উঠেছে। বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা প্রতি মাসে মাত্র ২০০ টাকা টিফিন ভাতা পান, যা দৈনিক মাত্র ৬.৬৬ টাকা। বর্তমান বাজারমূল্য এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে এই ভাতা একেবারেই অপ্রতুল। তাই, এই ভাতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি জানানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে টিফিন ভাতা ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন টিফিন ভাতা ৫০০ টাকা বা তারও বেশি করার দাবি জানিয়েছে। তাদের যুক্তি হলো, বর্তমান বাজার মূল্যে ২০০ টাকায় টিফিন করা সম্ভব নয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টিফিন ভাতা ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনা: কিছু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নতুন পে-স্কেল না হলেও টিফিন ও শিক্ষা ভাতার মতো কিছু আর্থিক সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। কোন পরিমাণ ভাতা যৌক্তিক হবে? ৫০০ টাকা। যদি টিফিন ভাতা ৫০০ টাকা করা হয়, তাহলে দৈনিক প্রায় ১৬.৬৬ টাকা টিফিন বাবদ খরচ করা যাবে। বর্তমান বাজারমূল্যে যা কিছুটা হলেও সহায়ক হতে পারে। ১০০০ টাকা। যদি টিফিন ভাতা ১০০০ টাকা করা হয়, তাহলে দৈনিক প্রায় ৩৩.৩৩ টাকা টিফিন বাবদ খরচ করা যাবে। এটি বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সাথে আরও বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। সরকারি কর্মচারীদের টিফিন ভাতা কত হওয়া উচিত, তা নির্ধারণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কমিটির সুপারিশ প্রয়োজন। এই কমিটি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বিবেচনা করে একটি যৌক্তিক ও সময়োপযোগী ভাতা নির্ধারণ করতে পারে। তবে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাসিক ২০০ টাকা টিফিন ভাতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই, এই ভাতা দ্রুত বাড়ানো প্রয়োজন।