এমপিও শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন ২০২৫ । এটি প্রত্যাখ্যান, ১২ অক্টোবর থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট। জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, প্রজ্ঞাপনটি সঠিক বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেলেও, তারা এই সামান্য বৃদ্ধি মানতে নারাজ।
জোটের সভাপতি ও বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজি এবং সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই প্রত্যাখ্যানের কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১৩ আগস্ট এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের নেতৃবৃন্দের সাথে শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার ভিত্তিতে ২০% বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫% উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপনের দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলনে নামছেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, এই দাবিতে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের শতাংশ (পার্সেন্টেজ) অনুযায়ী বাড়ি ভাড়ার ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব জনাব সাইেয়দ এ. জেড. মোরশেদ আলী।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের নেতৃবৃন্দ এই নতুন ফাইল প্রেরণের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েও, তাদের দাবিকৃত পূর্ণাঙ্গ প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকদের ‘৫০০ টাকার ভিক্ষা’ প্রত্যাখ্যান: বাড়তি বাড়ি ভাড়ায় মন্ত্রণালয়ের ‘মজা লোয়া’র অভিযোগ? বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে মাত্র ১৫০০ টাকা করার সরকারি সিদ্ধান্তটি শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে এই সামান্য বৃদ্ধিকে উপহাস হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, এটি ‘মানবিক বিবেচনায় ৫০০ টাকার ভিক্ষা’ ছাড়া আর কিছুই নয়, যা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়ে ‘মজা লোয়া’র শামিল।
দীর্ঘদিন ধরে মূল বেতনের শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া প্রদানের দাবি জানিয়ে আসা শিক্ষকরা এই নামমাত্র বৃদ্ধিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা সরকারি কর্মীদের মতো মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার দাবি করে আসছেন। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করায় তা এখন ১,৫০০ টাকায় উন্নীত হবে।
শিক্ষকদের দাবি কেন প্রত্যাখ্যান?
শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, ৫০০ টাকা বৃদ্ধি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত অপ্রতুল। রাজধানীতে বা অন্যান্য শহরে যেখানে একটি বাড়ির সর্বনিম্ন ভাড়াই কয়েক হাজার টাকা, সেখানে মাত্র ১,৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়া শিক্ষকদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। তাদের মূল আপত্তি নির্দিষ্ট অঙ্কের এই বৃদ্ধিতে, কারণ এতে উচ্চ গ্রেডের শিক্ষকরা কম সুবিধা পান এবং ভবিষ্যতে আর কোনো বৃদ্ধির সুযোগ থাকে না।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটসহ অন্যান্য শিক্ষক সংগঠন বারবার বলে আসছে, নির্দিষ্ট অঙ্কের পরিবর্তে শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বাড়ালে তা সকল স্তরের শিক্ষকদের জন্য সমানভাবে সুফল বয়ে আনবে এবং বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাতাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
শিক্ষক নেতারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাদের মূল দাবি, অর্থাৎ মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বাস্তবায়ন না হলে তারা সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানবেন না। এই ‘উপহাসমূলক’ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষকরা বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচির পথে হাঁটার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাদের মতে, শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া শিক্ষকদের প্রতি সরকারের এই বৈষম্যমূলক আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।
শিক্ষক সংগঠনের এক নেতা মন্তব্য করেন, “১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা করা মানে শুধু তামাশা করা। সরকার কি জানে না, একজন শিক্ষককে সংসার চালাতে কত কষ্ট করতে হয়? এই ৫০০ টাকা দিয়ে কি কোনো শহরে বাড়ির ভাড়া মেটানো সম্ভব?”
শিক্ষকদের এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এখন সরকারি মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এমপিও শিক্ষকদের জীবনমানের উন্নতির জন্য সরকার শেষ পর্যন্ত শতাংশ হারে বাড়ি ভাতার দাবি মেনে নেয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। See less



