বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মাসিক ভাতা বৃদ্ধি: ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নতুন সুপারিশ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার?
সামাজিক সুরক্ষা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য বিভিন্ন খাতে মাসিক ভাতার হার বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি মাননীয় উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এক সভায় এই সুপারিশগুলো করা হয়। এতে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি সহ বিভিন্ন খাতে ভাতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে – বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মাসিক ভাতা বৃদ্ধি
গরীবের বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি? হ্যাঁ। বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা: বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের জন্য ভাতার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতা ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ভাতা হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য মাসিক ভাতা ৬৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিক্ষা উপবৃত্তি বৃদ্ধি? হ্যাঁ। শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে, যা শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির পরিমাণ প্রাইমারি স্তরে ৭০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১০০০ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। হিজড়া, বেদে, ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এই তিন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির হার প্রাইমারি স্তরে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন হবে? চা শ্রমিকদের শিক্ষার্থীদের জন্যও একই হারে উপবৃত্তি বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে প্রাইমারি স্তরে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১২০০ টাকা। এই সুপারিশগুলো অনুমোদিত হলে তা সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই প্রস্তাবিত বর্ধিত ভাতার হার সমাজের দুর্বল অংশগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ২০২৫ । শুধু ভাতার পরিমাণ বাড়ানোই যথেষ্ট নয়, বরং নিশ্চিত করতে হবে যে এই অর্থ প্রকৃত অভাবী মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। এর জন্য কার্যকর বিতরণ ব্যবস্থা এবং নজরদারি প্রয়োজন।
বাস্তবসম্মত ভাতার জন্য করণীয় কি? প্রয়োজন-ভিত্তিক মূল্যায়ন ভাতার হার নির্ধারণের আগে দ্রব্যমূল্যের বর্তমান সূচক এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় মাসিক খরচের একটি বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন করা উচিত। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় ভাতার হারকে নিয়মিতভাবে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে এর ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস না পায়।

Caption: New Vata Rate bangladesh
প্রস্তাবিত এই ভাতা বৃদ্ধি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার প্রতিফলন হলেও, তা বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। জীবনযাত্রার ব্যয় এবং মুদ্রাস্ফীতির হার বিবেচনা করে আরও বড় পরিসরে ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে এটি সত্যিই তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
- বয়স্ক ভাতা: ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা।
- বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা: ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা।
- প্রতিবন্ধী ভাতা: ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা।
- হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ভাতা: নতুন করে ৬৫০ টাকা করার প্রস্তাব।
- শিক্ষা উপবৃত্তি বৃদ্ধির প্রস্তাবিত তালিকা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী: প্রাইমারি স্তর: ৭০০ টাকা
- উচ্চ মাধ্যমিক স্তর: ৯০০ টাকা
- উচ্চতর স্তর: ১০০০ টাকা
- হিজড়া, বেদে, ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী: প্রাইমারি স্তর: ৭০০ টাকা
- মাধ্যমিক স্তর: ৮০০ টাকা
- উচ্চ মাধ্যমিক স্তর: ৯০০ টাকা
- উচ্চতর স্তর: ১২০০ টাকা
- চা শ্রমিকদের সন্তান: প্রাইমারি স্তর: ৭০০ টাকা
- মাধ্যমিক স্তর: ৮০০ টাকা
- উচ্চ মাধ্যমিক স্তর: ৯০০ টাকা
- উচ্চতর স্তর: ১২০০ টাকা
কেন ভাতাগুলো বাস্তবসম্মত নয়?
বাংলাদেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, সবজিসহ অন্যান্য মৌলিক পণ্যের দাম গত কয়েক বছরে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায়, প্রস্তাবিত ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বৃদ্ধি খুবই সামান্য। একজন মানুষের মাসিক খাদ্যের খরচই যেখানে কয়েক হাজার টাকা, সেখানে মাত্র ৬৫০-৭৫০ টাকার ভাতা তাদের জীবনযাত্রায় তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না। চিকিৎসা ও অন্যান্য খরচ শুধু খাবার নয়, বাসস্থান, চিকিৎসা, পোশাক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামও অনেক বেড়েছে। বয়স্ক, বিধবা বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য নিয়মিত খরচ থাকে, যা এই সামান্য ভাতা দিয়ে মেটানো অসম্ভব। সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশকে অর্থনৈতিকভাবে সুরক্ষা দেওয়া। যদি ভাতার পরিমাণ এতটাই কম হয় যে তা ন্যূনতম জীবনযাত্রার ব্যয়ও মেটাতে পারে না, তাহলে এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তাবিত উপবৃত্তি বৃদ্ধিও বর্তমান বাজারের তুলনায় যথেষ্ট নয়। প্রাইমারি থেকে উচ্চতর স্তরে যে উপবৃত্তি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, তা দিয়ে একজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার খরচ, যেমন বই-খাতা, যাতায়াত, বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মেটানো খুবই কঠিন।
প্রস্তাবিত ভাতা বৃদ্ধির বিশ্লেষণ
| খাত | বর্তমান হার (৳) | প্রস্তাবিত হার (৳) | বৃদ্ধির হার | মন্তব্য |
|---|---|---|---|---|
| বয়স্ক ভাতা | 600 | 650 | ~8.3% | দৈনন্দিন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির তুলনায় এটি তুলনামূলক কম। এক সপ্তাহের বাজার খরচও পূরণ হবে না। |
| বিধবা/স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা | 500 | 650 | 30% বৃদ্ধি | ভালো বৃদ্ধি, তবে শহর বা গ্রাম – উভয় জায়গাতেই টিকে থাকার জন্য পর্যাপ্ত নয়। |
| প্রতিবন্ধী ভাতা | 600 | 750 | ~25% | ইতিবাচক পদক্ষেপ, তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও সহায়ক যন্ত্রপাতির খরচ অনেক বেশি – তাই আরও বাড়ানো যুক্তিযুক্ত হতে পারে। |
| হিজড়া জনগোষ্ঠী ভাতা | 0 / কম | 650 | নতুন সংযোজন | অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ, তবে আয় সৃষ্টিকারী কর্মসূচির সাথে সমন্বয় দরকার। |



