বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

Next Pay Scale 2024 । সরকারি নিম্নগ্রেডের কর্মচারীদের অসহায়ত্বের কথা শোনার কি কেউ নেই?

পূর্বের পে স্কেলগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রায় ৫ বছর অন্তর অন্তর নতুন পে স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে-মূল্যস্ফিতি এবং পূর্বের পে স্কেলের সংস্কারের জন্য ৯ম পে স্কেল অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে–Next Pay Scale 2024

মূল্যস্ফিতি বিবেচনায় কি নতুন পে স্কেল দেওয়া জরুরি? চলুন এটি নিয়েই আলোচনা করা যাক।৮ম পে-স্কেল দেওয়া হয় ২০১৫ সালে। সুতরাং সেই সময়ের ছোট একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরি; ডলার রেট ছিলো- ৭৭/- (+/-), স্বর্ণের ভরি ছিলো- ৪০ হাজার (+/-) ২১ ক্যারেট, গরুর মাংস প্রতিটি কেজি- ৩৮০-৪০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি- ৫৫০-৫৭০ টাকা, বাকি কিছু আর উল্লেখ করলাম না। এবার আসি বর্তমান অর্থাৎ ২০২৪ সালের হিসেবে ডলার রেট- ১১৭/-(+/-), স্বর্ণ প্রতি ভরি- ১০৬০০০/-(+/-) ২১ ক্যারেট, গরুর মাংস প্রতি কেজি- ৭৫০/-(+/-), খাসির মাংস প্রতি কেজি- ১১০০-১১৫০ টাকা। স্বর্ণের হিসাব আনলাম পার্থক্য বুঝতে যাতে সহজ হয় সেই জন্য। দৈনন্দিন জীবনে সবসময় আমাদের স্বর্ণের প্রয়োজন নেই, কিন্তু মা, বোন, স্ত্রী এবং মেয়ে সন্তান হলে তাদের জন্য গহনার প্রয়োজন আছে।

এবার আসি মূল কথায়, উপরের পার্থক্য দেখলে সহজেই বোঝা যায় সরকারি চাকরিজীবীদের বর্তমান বেতনের অবস্থা কোথায়! ২০১৫/২০১৬ সালে মোটামুটি একজন ৯ম/১০ম গ্রেডের চাকরিজীবী সংসার খরচ চালিয়েও প্রতি মাসে ভালো একটা অংশ সঞ্চয় করতে পারতো। যেটা দিয়ে বাবা-মায়ের চিকিৎসা, সন্তানের আবদার, নিজেদের ভ্রমণ এবং ভবিষ্যতের জন্য স্থাবর সম্পদ গড়তে পারতো। ২০১৫/২০১৬ সালের দিকে মোটামুটি ৩ মাসের সঞ্চয় দিয়ে আমাদের এলাকায় ১ শতক জমি কেনা সম্ভব ছিলো, কিন্তু বর্তমানে ১ বছরের পুরো বেতন দিয়েও কেনা সম্ভব নয়! ৭/৮ বছর আগেও সমগ্রেডে চাকরি করে যেভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব হতো, এখন সেটা কোনোভাবেই সম্ভব না। বরং অনেক কিছু কাউকে বলা সম্ভব হয় না! বড় চাকরি, বড় বড় আশা সবার! কিন্তু ভিতরের খবর কেউ রাখে না! সুতরাং, সময়ের প্রয়োজনেই এখন ৯ম পে-স্কেল জরুরি।

১৯৮৫ সালের পে স্কেলে কি ছিল? গ্রেড-১ এবং গ্রেড-২-এর বেতন যথাক্রমে ৩০০০ টাকা (নির্ধারিত) এবং ২৮৫০ টাকা (নির্ধারিত) থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল যথাক্রমে ৬০০০ টাকা (নির্ধারিত) এবং ৫৭০০ টাকা (নির্ধারিত)। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১০০ ভাগ। গ্রেড-৩-এর পে-স্কেল ২৩৫০-২৭৫০ টাকার পরিবর্তে নির্ধারিত হয়েছিল ৪৭৫০-৫৫০০ টাকা। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১০২ শতাংশ। নবম গ্রেডের বেতন স্কেল ৭৫০-১৪৭০ টাকার স্থলে নির্ধারিত হয়েছিল ১৬৫০-৩০২০ টাকা। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১২০ শতাংশ। গ্রেড-১৯-এর কর্মচারীদের পে-স্কেল ২৪০-৩৪৫ টাকার স্থলে নির্ধারিত হয়েছিল ৫৫০-৯৬৫ টাকা। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১২৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন গ্রেডে (গ্রেড-২০) পে-স্কেল ২২৫-৩১৫ টাকার স্থলে নির্ধারিত হয়েছিল ৫০০-৮৬০ টাকা। বেতন বৃদ্ধির হার ছিল ১২২ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো গ্রেডেই বেতন ১০০ ভাগের কম বাড়েনি।

সুপারিশকৃত পে স্কেলের শুধুমাত্র ঐ অংশই বাস্তবায়িত হয়েছে যা উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য আর্থিক সুবিধা বয়ে আনে । কিছু ভাতা যা বাজারের সাথে কোনভাবে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং বাস্তবসম্মত নয়।

জাতীয় পে স্কেল ২০১৫ একটি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৈষম্যমূলক পে স্কেল-যেখানে ১১-২০ তম গ্রেডে প্রতিটি স্কেলের ধাপ দূরত্ব গড়ে ৪% অপর দিকে ১-১০ নম্বর গ্রেডে প্রতিটি স্কেলে ধাপ দূরত্ব গড়ে ২০% । যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন দেশে এ চরম বৈষম্য দেখা যায় না। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে এত ফারাক পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের পে স্কেল ঘাটলে এমন বৈষম্য খুজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ বলেই এ বৈষম্য সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের বর্তমান পে স্কেলে রয়েছে মোট ২০টি গ্রেড, যেখানে সর্বনিম্ন গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৮২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৭৮০০০ টাকা নির্ধারিত। সে হিসাবে এ পে স্কেল কে ১:১০ মাত্রার পে স্কেল বলা যায়। যেখানে আন্তর্জাতিক মান ১:৪ নির্ধারিত রয়েছে।

জাতীয় পে স্কেল ২০১৫ একটি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৈষম্যমূলক পে স্কেল-যেখানে ১১-২০ তম গ্রেডে প্রতিটি স্কেলের ধাপ দূরত্ব গড়ে ৪% অপর দিকে ১-১০ নম্বর গ্রেডে প্রতিটি স্কেলে ধাপ দূরত্ব গড়ে ২০% । যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন দেশে এ চরম বৈষম্য দেখা যায় না। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে এত ফারাক পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের পে স্কেল ঘাটলে এমন বৈষম্য খুজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ বলেই এ বৈষম্য সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের বর্তমান পে স্কেলে রয়েছে মোট ২০টি গ্রেড, যেখানে সর্বনিম্ন গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৮২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৭৮০০০ টাকা নির্ধারিত। সে হিসাবে এ পে স্কেল কে ১:১০ মাত্রার পে স্কেল বলা যায়। যেখানে আন্তর্জাতিক মান ১:৪ নির্ধারিত রয়েছে।

আজকের বৈষম্য মূলক পে-স্কেলের পেছনের ইতিহাস।

৯ম পে স্কেল জরুরি কেন । নতুন পে স্কেলে কি কি বিষয় জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন্য

  1. পে-কমিশন গঠন পূর্বক বৈষম্য মুক্ত ৯ম পে স্কেল ঘোষনার মাধ্যমে বেতন বৈষম্য নিরসনসহ বেতন স্কেলের পার্থক্য সমহারে নির্ধারন ও গ্রেড সংখ্যা কমাতে হবে, পে-কমিশনে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারি প্রতিনিধি রাখতে হবে ।
  2. যে সকল কর্মচারি মূল বেতনের শেষ ধাপে পৌছে গেছে তাহাদের বাষরিক বেতন বৃদ্ধি নিয়মিত করতে হবে।
  3. টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বেতন জ্যৈষ্ঠতা পূর্ণবহাল, ব্লক পোষ্ট নিয়মিতকরণ সহ সকল পদে পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে।
  4. বাজারমূল্যের উর্দ্ধগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সমন্বয় পূর্বক সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ ও ১১-২০ গ্রেডের চাকুরিজীবীদের রেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন অথবা ন্যায্য মূল্যে সরকারি ভাবে পন্য সরবরাহ করতে হবে।
  5. সকল সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর, অধিদপ্তরে কাজের ধরন অনুযায়ি পদনাম ও গ্রেড পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করতে হবে। সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত কর্মচারীদের গ্রাচ্যুয়িটির পরিবর্তে পেনশন প্রবর্তন সহ বিদ্যমান গ্রাচ্যুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচ্যুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে ।

উৎসবে কেন কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করতে পারে না?

আমরা যদি গড় হিসাব দেখি তাহলে একজন কর্মচারী ১,২৪,৫৫০/১০ = ১২,৫৫০ অর্থাৎ ১২-১৪ হাজার টাকা উৎসব ভাতা বাবদ পেয়ে থাকেন। তিনি যদি শেয়ারেও কোরবানি দেন তবে ১৫-২০ হাজার টাকা প্রতি অংশের জন্য ব্যয় হবে। তারমানে তিনি যদি কোরবানিতে অংশ গ্রহণ করেন তবে তিনি মাংস ছাড়া আর কোন কিছুই উৎসব ভাতা থেকে পাচ্ছেন না। যদি তিনি উৎসব ভাতার অর্থ দিয়ে ঈদের বাজার সদাই করেন, পরিবারের জন্য কাপড় চোপর কেনা কাটা করেন তবে কোরবানি দেয়ার নিয়ত ত্যাগ করতে হবে। এভাবে যদি ঈদের পর ঈদ পার করে দেন তিনি কোনদিনও কোরবানিতে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। তিনি যে উৎসব ভাতা পান তাতে কোরবানি দিলে ঈদ উৎসব কেনাকাটা হবে না, আর কেনা কাটা ঈদ উৎসব করলে কোনদিনই কোরবানি দিতে পারবেন না।

গ্রেড কমালে বৈষম্য কি কিছুটা দূর হত? পে স্কেল কমিটির সুপারিশে ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে ১৭টি গ্রেড এবং পরবর্তীতে ১৬ গ্রেডে করার প্রস্তাব করা হয়। যেখানে কমিশন বিদ্যমান বেতন স্কেলের ২০টি গ্রেড থেকে কমিয়ে ১৬টি গ্রেড করার সিদ্ধান্তেও শেষ পর্যন্ত উপনীত হয়। যদিও পে স্কেলের ধাপ বিদ্যমানের চেয়ে কমিয়ে অর্ধেক করা প্রস্তাবও কমিটিতে উঠে। গ্রেড কমানোর ব্যাপারে ৮ নং গ্রেড (১২০০০ টাকার স্কেল) এবং ৯ নং গ্রেড (১১০০০ টাকার) মিলে একটি গ্রেড এমণ ধারা বজায় রাখার প্রস্তাব রাখা হয়। ৯ গ্রেডের মূল বেতন ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে। এছাড়া বিদ্যমান স্কেলের ১১ নং গ্রেড (৬৪০০ টাকার স্কেল) এবং ১২ নং গ্রেড (৫৯০০ টাকার স্কেল) যুক্ত হয়ে একটি গ্রেডে পরিণত করা যেতে পারে বলে প্রস্তাব করা হয়।

https://bdservicerules.info/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%aa%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b2-%e0%a7%a8%e0%a7%a6%e0%a7%a7%e0%a7%ab/

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *