পে স্কেল নিউজ ২০২৫ । ছয় মাসের আগেই নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত হবে এমনটি জানান কমিশন চেয়ারম্যান?
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত ছয় মাসের আগেই চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান। রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ কথা জানান।–পে স্কেল নিউজ ২০২৫
মূল্যস্ফীতি-জিডিপির সঙ্গে বেতনের অসঙ্গতি ঠিক হবে? হ্যাঁ। সাবেক অর্থসচিব ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, গত এক দশকে দেশের মূল্যস্ফীতি এবং জিডিপি বৃদ্ধি পেলেও তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়েনি। এই অসঙ্গতি দূর করতে কমিশন একটি সময়োপযোগী বেতন কাঠামো প্রণয়নের কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, কমিশন শুধু বেতন বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং বিশেষায়িত চাকরির জন্য আলাদা বেতন কাঠামো গঠন, আয়কর পরিশোধের ওপর ভিত্তি করে বেতন কাঠামো নির্ধারণ, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিরূপণ, এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি নিয়েও কাজ করছে।
কর্ম মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেতন ও অন্যান্য সুপারিশ করবে? হ্যাঁ। জাকির আহমেদ খান জানান, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের মান মূল্যায়নের ভিত্তিতে একটি নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা হবে। এছাড়া, টেলিফোন, গাড়ি ও মোবাইল ফোন-সংক্রান্ত আর্থিক সুবিধা এবং রেশন-সুবিধা যৌক্তিকীকরণ করা হবে। বেতন গ্রেড ও ইনক্রিমেন্টে কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা দূরীকরণেও সুপারিশ করবে কমিশন। তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছি। ছয় মাসের সময়সীমা থাকলেও আমরা তার আগেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশা করছি।”
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা: স্বাস্থ্যবীমা ও যৌক্তিক বেতন কাঠামো হবে? বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি যৌক্তিক বেতন কাঠামো নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন, যা বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তিনি কর্মকর্তাদের জন্য স্বাস্থ্যবীমার গুরুত্বের ওপর বিশেষ জোর দেন। ইউনূস বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেতন বাড়ালেও দেখা যায় এক অসুখেই অনেকে সম্বল হারিয়ে ফেলেন। ইন্স্যুরেন্স থাকলে পরিবার নিশ্চিন্তে থাকে। এ ধরনের কিছু মডেল প্রতিবেশী দেশগুলোতেও আছে।”
বীমা সুবিধার কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন? হ্যাঁ, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য স্বাস্থ্যবীমার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, বেতন বাড়লেও এক অসুখেই অনেকে সম্বল হারিয়ে ফেলেন, তাই ইন্স্যুরেন্স থাকলে পরিবার নিশ্চিন্তে থাকে।
এক দশক পর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের লক্ষ্যে এই জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে। আজকের বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

Caption: Proposed Pay Scale 2025
১:৪ বেতন কাঠামো ২০২৫ । নবম পে-স্কেল প্রণয়নের আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই সরকারি কর্মচারীরা বিভিন্ন ফোরামে তাঁদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন। বেতন কমিশনের কাছে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই তাঁদের দাবি-দাওয়া জানাচ্ছেন। মূলত, কর্মচারীরা এমন একটি বেতন কাঠামো চান যা বর্তমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে সহায়ক হবে। তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা হলো
- গ্রেড ও বেতন অনুপাত: কর্মচারীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে যে, বিদ্যমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১০ থেকে ১২টি গ্রেড করা হোক। একইসঙ্গে, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত ১:৪ বা ১:৫ করা হোক, যাতে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে।
- বেতন বৃদ্ধি ও ইনক্রিমেন্ট: তারা প্রতি বছর ১০% হারে ইনক্রিমেন্ট চান। এছাড়া, পদোন্নতি না হলে প্রতি ৫ বছর পর উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছেন, যাতে বেতন বৃদ্ধি থেমে না যায়।
- বাড়িভাড়া ও অন্যান্য ভাতা: বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের অন্তত ৬০% করার দাবি উঠেছে। একইসঙ্গে, গ্রাম ও শহরের জন্য একই হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যাতে কর্মচারীরা শহরে থাকার জন্য অতিরিক্ত চাপ অনুভব না করেন। পাশাপাশি, চিকিৎসা, যাতায়াত ও অন্যান্য ভাতাগুলোও সময়োপযোগী করার দাবি রয়েছে।
- মহার্ঘ ভাতা: নতুন পে-স্কেল কার্যকর হওয়ার আগে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের দাবিও কর্মচারীদের মধ্যে বেশ জোরালো। বিশেষ করে, ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা মহার্ঘ ভাতা পেলে উপকৃত হবেন বলে মনে করেন।
- সব মিলিয়ে, কর্মচারীদের মূল লক্ষ্য একটি বৈষম্যহীন ও যৌক্তিক বেতন কাঠামো যা শুধু বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাকেও বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত করবে।
গতানুগতিক পে স্কেল কর্মচারীরা চায় না?
না, কর্মচারীরা আর গতানুগতিক বা পুরোনো ধাঁচের পে-স্কেল চান না। তারা এমন একটি বেতন কাঠামো চাইছেন যা বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আগের পে-স্কেলগুলোতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বেতন বৃদ্ধি করা হতো, কিন্তু জীবনযাত্রার খরচ যে হারে বাড়ে, তার সঙ্গে এই বেতন বৃদ্ধির কোনো কার্যকর সমন্বয় ছিল না। কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী, তাদের প্রত্যাশাগুলো এখন আরও সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবমুখী। যেমন: মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় তারা এমন একটি পদ্ধতি চান যেখানে প্রতি বছর মূল্যস্ফীতির হার অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন সমন্বয় হবে। বেতন বৈষম্য কমানো উচ্চপদস্থ এবং নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের বেতনের মধ্যে যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে, তা কমানোর জন্য গ্রেড কমানোর দাবি উঠেছে। ভাতা বৃদ্ধি শুধু মূল বেতন নয়, বরং বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতার মতো সুযোগ-সুবিধাগুলোও যেন বাস্তবসম্মতভাবে বাড়ে, সেদিকেও তারা নজর দিচ্ছেন। এসব কারণেই কর্মচারীরা কেবল বেতন বৃদ্ধির পরিবর্তে একটি সামগ্রিক ও আধুনিক বেতন কাঠামো চাইছেন, যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
সরকারি কর্মচারীরা কোন মাসের মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর চায়?
| নতুন পে-স্কেল কার্যকরের বিষয়ে সরকারি কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কোনো নির্দিষ্ট মাসের কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন তাদের দাবিতে “দ্রুত” নবম পে-স্কেল কার্যকর করার কথা বলে আসছে। | কিছু সংবাদ প্রতিবেদন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট তারিখের কথা বলা হলেও, এগুলো কর্মচারীদের আনুষ্ঠানিক দাবি বা সরকারের ঘোষিত সময়সীমা নয়, বরং আলোচনা বা প্রত্যাশার অংশ। উদাহরণস্বরূপ, কিছু জায়গায় ৩ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন চাওয়ার কথা উঠে এসেছে। | অন্যদিকে, জাতীয় বেতন কমিশনকে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। কমিশন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন যে, তারা এই নির্ধারিত সময়ের আগেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন। |



