নতুন পে স্কেল নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা ২০২৫ । ডিসেম্বরে রিপোর্ট জমার আভাস, হতাশায় সরকারি কর্মজীবীরা?
অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক নবম পে কমিশন গঠনের পর সরকারি কর্মজীবীদের মনে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল, তা এখন গভীর হতাশায় রূপ নিয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা এবং কমিশনের কাজের ধীরগতিতে এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কমিশনের বর্তমান কাজের গতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরে নতুন পে স্কেল ঘোষণার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
⚠️ সরকারের অবস্থান পরিবর্তন: আশ্বাসে বড় ধাক্কা
জানা যায়, কমিশন গঠনের পরপরই অর্থ উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করবে। এই আশ্বাসে কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু সম্প্রতি উপদেষ্টা তার অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নতুন কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার। সরকারের এই অবস্থান পরিবর্তনের ফলে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।
😠 কর্মচারীদের আল্টিমেটাম: কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
বিষয়টি নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন একজোট হয়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তারা সরকারকে সময় বেঁধে দিয়ে সাফ জানিয়েছে, আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পে কমিশন তাদের সুপারিশ জমা না দিলে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।
⏳ কমিশনের কাজের গতি: মাত্র ৫০ শতাংশ সম্পন্ন
তবে কর্মচারীদের এই আল্টিমেটামের বিপরীতে কমিশনের বাস্তব চিত্র ভিন্ন। পে কমিশন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, সুপারিশ প্রণয়নের কাজ শেষ হতে এখনো অনেক সময় প্রয়োজন। সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত সুপারিশ তৈরির মাত্র ৫০ শতাংশের মতো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের মতামত গ্রহণ করার কথা রয়েছে। এরপরই কমিশন রিপোর্ট চূড়ান্তকরণের দিকে অগ্রসর হবে।
🗓️ ডিসেম্বরের শেষ দিকে রিপোর্ট জমার আভাস
নভেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমার দাবি থাকলেও কমিশনের পক্ষ থেকে ভিন্ন সময়সীমার কথা জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ আলী খান গণমাধ্যমকে বলেন:
“রিপোর্ট চূড়ান্ত করতে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশাবাদী, সব কাজ শেষ করে ডিসেম্বরের শেষ দিকে রিপোর্ট জমা দিতে পারবো।“
কমিশন সদস্যের এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, চলতি বছরের মধ্যে নতুন স্কেল ঘোষণার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এটি সরকারি কর্মচারীদের জন্য বড় দুঃসংবাদ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
🔮 ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে নতুন পে স্কেল
সংশ্লিষ্টদের মতে, কমিশনের সুপারিশ জমা দিতে যদি ডিসেম্বর মাস পেরিয়ে যায় বা এই বছর শেষ হয়ে যায়, তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বল্প মেয়াদে নতুন পে স্কেল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন ও জটিল হয়ে পড়বে। ফলে নতুন পে স্কেলের ভবিষ্যৎ এখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে।
সরকারি কর্মচারীরা পে স্কেল কবে বাস্তবায়ন চায়?
সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। তাদের প্রধান দাবিগুলো নিম্নরূপ:
📅 কর্মচারীদের প্রধান দাবি ও সময়সীমা
বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে পে স্কেল সংক্রান্ত কাজ শেষ ও গেজেট প্রকাশের জন্য একাধিক সময়সীমার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে:
| ধাপ | প্রত্যাশিত সময়সীমা (আল্টিমেটাম) | বাস্তবায়নের লক্ষ্য | সংগঠন |
| কমিশনের সুপারিশ জমা | ৩০ নভেম্বর (চলতি বছর) | এই সময়ের মধ্যে পে কমিশনকে তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। | বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন |
| গেজেট প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর (চলতি বছর) | পে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন পে স্কেলের গেজেট (প্রজ্ঞাপন) ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। | বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠন |
| কার্যকর শুরু | ১ জানুয়ারি, ২০২৬ | নতুন বেতন কাঠামো (নবম পে স্কেল) ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করতে হবে। | বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠন |
সংগঠনগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পে কমিশনের সুপারিশ জমা না হলে এবং ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশ না হলে তারা ১ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতি বা মহাসমাবেশের মতো কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করবে।
⚠️ কমিশনের বর্তমান অবস্থান
অন্যদিকে, পে কমিশন সূত্রে খবর, তারা নভেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে পারছে না। কমিশনের সদস্য জানিয়েছেন, তারা ডিসেম্বরের শেষ দিকে সরকারের কাছে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। এই বিলম্বের ফলেই কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, সরকারি কর্মচারীরা কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যাতে সরকার তাদের নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নে বাধ্য হয়।



