ভ্যাকেশন বনাম নন-ভ্যাকেশন সার্ভিস বেনিফিট ২০২৫ । বাংলাদেশে চাকরি শেষে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার আর্থিক বৈষম্য?
সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ভ্যাকেশন ও নন-ভ্যাকেশন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধার মধ্যে বিশাল আর্থিক ব্যবধান লক্ষ করা যাচ্ছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ‘লামগ্রান্ট (ছুটি নগদায়ন)’ সুবিধার বৈষম্য নিয়ে। ২৫ বছরের চাকরি জীবনের হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একজন ভ্যাকেশন কর্মচারী একজন নন-ভ্যাকেশন কর্মচারীর চেয়ে প্রায় ৳৯,৮২,৮৫৫ (নয় লক্ষ বিরাশি হাজার আটশো পঞ্চান্ন টাকা) কম নিয়ে অবসরে যাচ্ছেন।
অবসরকালীন সুবিধার তুলনামূলক চিত্র (২৫ বছরের চাকরিকাল, বেসিক ৳৬৩,৪১০ ধরে):
| তুলনার বিষয় | নন-ভ্যাকেশন কর্মচারী | ভ্যাকেশন কর্মচারী | ব্যবধান (ভ্যাকেশন কর্মচারীর ক্ষতি) |
| ১. প্রকৃত ছুটি নগদায়ন (লামগ্রান্ট) সুবিধা | পূর্ণ ১৮ মাস (৳১১,৪১,৩৮০) | মাত্র ৮.৫ মাস (৳৫,৩৮,৯৮৫) | ৳৬,০২,৩৯৫ |
| ২. পিআরএল (PRL) কালীন ১ বছরের বেতন | পূর্ণ বেতন (৳৭,৬০,৯২০) | অর্ধ-গড় বেতন (৳৩,৮০,৪৬০) | ৳৩,৮০,৪৬০ |
| মোট আর্থিক সুবিধার যোগফল | ৳১৯,০২,৩০০ | ৳৯,১৯,৪৪৫ | ৳৯,৮২,৮৫৫ |
লামগ্রান্ট ও পিআরএল সুবিধার মূল বৈষম্য
১. ছুটি নগদায়ন (লামগ্রান্ট) সুবিধা: ২৫ বছরের চাকরিকালীন সময়ে
- নন-ভ্যাকেশন কর্মচারী নিট ১০৬৪ দিন গড় বেতনে অর্জিত ছুটি জমা করতে পারেন। তিনি অর্জিত ছুটি থেকে সম্পূর্ণ ১৮ মাসের (৫৪৭ দিন) ছুটি নগদায়ন করতে সক্ষম হন এবং তাঁর হিসাবে ৫১৭ দিন ছুটি অব্যয়িত থাকে।
- ভ্যাকেশন কর্মচারী মাত্র ২৫৫ দিন ছুটি জমা করতে পারেন। ফলে, তিনি ১৮ মাসের (৫৪৭ দিন) পূর্ণ সুবিধার পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৮ মাস ১৫ দিনের (২৫৫ দিন) ছুটি নগদায়ন করতে পারেন এবং কোনো ছুটি জমা থাকে না। সরাসরি ১৮ মাসের লামগ্রান্ট সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
২. পিআরএল (PRL) সুবিধা থেকে বঞ্চনা: পিআরএল বা অবসর-উত্তর ছুটিতে থাকাকালীন বেতনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে।
- নন-ভ্যাকেশন কর্মচারীরা তাদের পিআরএলকালীন সময়ে সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের পূর্ণ অংশ (Full Pay) ভোগ করেন।
- ভ্যাকেশন কর্মচারীদের পিআরএলকালীন পূর্ণ বেতন প্রদান করা হয় না। তাঁদেরকে ‘অর্ধগড় বেতনে’ (Half-average Pay) ছুটি ভোগ করতে বাধ্য করা হয়, যার অর্থ অবসরের ঠিক আগের বেতনের অর্ধেক পান।
‘মুদ্রার অপর পিঠ’: যে সুবিধা ভোগ করেন ভ্যাকেশন কর্মচারীরা: এই বিশাল আর্থিক ব্যবধানের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভ্যাকেশন কর্মচারীরা তাঁদের চাকরিকালীন সময়ে নন-ভ্যাকেশন কর্মচারীদের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছুটি ভোগ করে থাকেন।
- একজন ভ্যাকেশন কর্মচারী বছরে প্রায় ৬০ দিন অতিরিক্ত ছুটি পান। এর মধ্যে রয়েছে পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরসহ এককালীন ছুটি (১৬ দিন), ঈদুল আযহা এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি (১৫ দিন), দূর্গা পূজার ছুটি (৭ দিন), শীতকালীন ছুটি (১০ দিন) ইত্যাদি।
- ২৫ বছরের চাকরিকালে এই ছুটির পরিমাণ দাঁড়ায় (৬০ দিন × ২৫ বছর) = ১৫০০ দিন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ভ্যাকেশন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এই ১৫০০ দিনের অতিরিক্ত ছুটি ভোগ করার সুযোগ পেলেও এর বিনিময়ে তাঁরা অবসর-উত্তর সময়ে একটি বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বৈষম্য দূরীকরণে সরকারি নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে কিনা, তা এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ‘ভ্যাকেশন’ (Vacation) ও ‘নন-ভ্যাকেশন’ (Non-Vacation) বিভাগের কর্মচারীদের অবসরকালীন আর্থিক সুবিধার মধ্যে বিশাল বৈষম্য দেখা দিয়েছে। একটি ২৫ বছরের চাকরিকালের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একজন ভ্যাকেশন কর্মচারী তার নন-ভ্যাকেশন সহকর্মীর তুলনায় অবসরকালীন সময়ে প্রায় ৳৯,৮২,৮৫৫ (নয় লক্ষ বিরাশি হাজার আটশো পঞ্চান্ন টাকা) কম নিয়ে অবসরে যান। এই আর্থিক ফারাকের মূল কারণ হলো অর্জিত ছুটি বা Arjito Chuti (EL) গণনার পদ্ধতির ভিন্নতা এবং অবসর-উত্তর ছুটি (PRL)-কালীন বেতনের তারতম্য। সাধারণত, শিক্ষা ও বিচার বিভাগসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অবকাশ অনুমোদিত এবং কর্মচারীরা অবকাশকালীন সময়ে কর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারেন, সেগুলোকে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
অবসরে আর্থিক সুবিধার তুলনামূলক বিশ্লেষণ: (উদাহরণস্বরূপ, বেসিক ৳৬৩,৪১০ ধরে ২৫ বছরের চাকরিকালীন হিসাব)
| তুলনার বিষয় | নন-ভ্যাকেশন কর্মচারী | ভ্যাকেশন কর্মচারী | ব্যবধান (ভ্যাকেশন কর্মচারীর ক্ষতি) |
| ১. ছুটি নগদায়ন (লামগ্রান্ট) সুবিধা | পূর্ণ ১৮ মাসের সুবিধা (৳১১,৪১,৩৮০) | মাত্র ৮.৫ মাসের সুবিধা (৳৫,৩৮,৯৮৫) | ৳৬,০২,৩৯৫ |
| ২. পিআরএল (PRL) কালীন ১ বছরের বেতন | পূর্ণ সর্বশেষ বেতন (৳৭,৬০,৯২০) | অর্ধ-গড় বেতন (৳৩,৮০,৪৬০) | ৳৩,৮০,৪৬০ |
| মোট প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধা | ৳১৯,০২,৩০০ | ৳৯,১৯,৪৪৫ | ৳৯,৮২,৮৫৫ |
বৈষম্যের নেপথ্যে কারণ:
১. অর্জিত ছুটি জমার তারতম্য: নন-ভ্যাকেশন কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ১১ দিনে ১ দিন পূর্ণ গড় বেতনে এবং ১২ দিনে ১ দিন অর্ধ-গড় বেতনে অর্জিত ছুটি জমা হয়। এর ফলে:
- নন-ভ্যাকেশন কর্মচারী: ২৫ বছরে মোট ১০৬৪ দিন গড় বেতনের ছুটি জমা হয়, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮ মাস বা ৫৪৭ দিনের ছুটি নগদায়ন (লামগ্রান্ট) করা যায়।
- ভ্যাকেশন কর্মচারী: বছরে অর্জিত ছুটি কম থাকায় ২৫ বছরে মাত্র ৩৮০ দিন গড় বেতনের ছুটি জমা হয়। তারা সর্বোচ্চ ৮ মাস ১৫ দিন বা ২৫৫ দিনের ছুটি নগদায়ন করতে পারেন।
২. অবসর-উত্তর ছুটি (PRL)-কালীন বেতন:
নন-ভ্যাকেশন কর্মচারীরা পিআরএল চলাকালীন পূর্ণ বেতন পান, তবে ভ্যাকেশন কর্মচারীদেরকে এই সময় ‘অর্ধ-গড় বেতনে’ ছুটি ভোগ করতে বাধ্য করা হয়। এই নিয়মের কারণেই অবসর-উত্তর সময়ে তাদের আর্থিক ক্ষতি বহুগুণ বেড়ে যায়।
সুবিধার বিনিময়ে বড় ক্ষতি:এই আর্থিক ফারাকের মূল কারণ হলো ভ্যাকেশন কর্মচারীরা তাঁদের চাকরিকালীন সময়ে নন-ভ্যাকেশন কর্মচারীদের চেয়ে অনেক বেশি অতিরিক্ত ছুটি ভোগ করেন। একজন ভ্যাকেশন কর্মচারী বছরে গ্রীষ্মকালীন, শীতকালীন এবং অন্যান্য উপলক্ষে প্রায় ৬০ দিন অতিরিক্ত ছুটি পান। ২৫ বছরের চাকরিকালীন সময়ে এই অতিরিক্ত ছুটির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৫০০ দিন।
বিশেষত, প্রাথমিক শিক্ষকসহ শিক্ষা বিভাগের কর্মচারীরা এই ‘ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে’র অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁরা নিয়মিতভাবে অতিরিক্ত ছুটি ভোগ করলেও, অবসরকালীন সুবিধা (যেমন- লামগ্রান্ট ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা) পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই বিশাল আর্থিক বৈষম্য দূর করতে হলে হয় ভ্যাকেশন কর্মচারীদের ছুটি গণনার পদ্ধতি পরিবর্তন করে নন-ভ্যাকেশন কর্মচারীদের সমমানের অর্জিত ছুটি জমা করার সুযোগ দিতে হবে, অথবা তাদের পিআরএলকালীন সুবিধা ও লামগ্রান্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে।




