সরকারি কর্মচারীদের পেনশনের হার বৃদ্ধি: ৫ বছর চাকরি করলেই মিলবে সুবিধা
সরকারি কর্মচারীদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা ও পেনশনের হারে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে সরকার । নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে মাত্র ৫ বছর চাকরি পূর্ণ করলেই একজন কর্মচারী পেনশনের আওতাভুক্ত হবেন । পাশাপাশি পেনশনের সর্বোচ্চ হার সর্বশেষ আহরিত বেতনের ৮০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% এ উন্নীত করা হয়েছে ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে । জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ ১ জুলাই ২০১৫ তারিখ হতে কার্যকর বলে গণ্য করা হচ্ছে ।
পেনশনের নতুন হার ও সময়সীমা
আগে পেনশনের যোগ্য হতে হলে কমপক্ষে ১০ থেকে ২৫ বছর চাকরির প্রয়োজন হতো, যা কমিয়ে এখন ৫ থেকে ২৫ বছর করা হয়েছে । নতুন নির্ধারিত টেবিল অনুযায়ী:
৫ বছর চাকরির জন্য: মূল বেতনের ২১% পেনশন ।
১০ বছর চাকরির জন্য: ৩৬% (যা আগে ছিল ৩২%) ।
২০ বছর চাকরির জন্য: ৮০% (যা আগে ছিল ৭০%) ।
২৫ বছর বা তদুর্ধ্ব চাকরির জন্য: সর্বোচ্চ ৯০% পেনশন প্রাপ্য হবেন ।
তবে ৫ থেকে ২৪ বছর চাকরির ক্ষেত্রে পেনশন সুবিধা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে মৃত্যুবরণ করতে হবে অথবা মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক স্থায়ীভাবে অক্ষম ঘোষিত হতে হবে। এছাড়া স্থায়ী পদ বিলুপ্তির কারণে ছাঁটাই হলেও এই সুবিধা পাওয়া যাবে ।
সর্বনিম্ন পেনশন ও আনুতোষিক
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, একজন পেনশনারের মাসিক পেনশনের পরিমাণ যাই হোক না কেন, তিনি সর্বনিম্ন ৩,০০০ (তিন হাজার) টাকা পেনশন পাবেন । ৬৫ বছরের কম বয়সী পেনশনারদের পেনশন ৪০% এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ৫০% বৃদ্ধি করা হয়েছে । এছাড়া আনুতোষিকের ক্ষেত্রে ৫-৯ বছর চাকরির জন্য প্রতি ১ টাকার বিপরীতে ২৬৫ টাকা এবং ২০ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য ২৩০ টাকা হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে ।
অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
ছুটি নগদায়ন: অবসরকালীন অর্জিত ছুটি পাওনা সাপেক্ষে এখন ১২ মাসের পরিবর্তে ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ নগদায়ন করা যাবে ।
পারিবারিক পেনশন: বিধবা স্ত্রীর বয়স ৫০ বছরের বেশি হলে পুনরায় বিবাহ না করার অঙ্গীকারনামা দাখিলের শর্ত শিথিল করা হয়েছে ।
বিপত্নীক স্বামীর সুবিধা: মৃত মহিলা কর্মচারীর স্বামীও এখন থেকে বিধবা স্ত্রীর অনুরূপ হারে ও পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত পারিবারিক পেনশন পাবেন।
বিশেষ আর্থিক সহায়তা: চাকরির মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ মৃত্যুবরণ করলে বা অক্ষম হলে, তার শেষ আহরিত ৩টি মূল বেতনের সমপরিমাণ হারে এককালীন বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে ।
এই নতুন নিয়ম চালুর ফলে পিআরএল (PRL) ভোগরত কর্মচারীরাও বিধি অনুযায়ী পুনঃনির্ধারিত সুবিধাগুলো পাবেন ।

কর্মচারীগনের অবসরকালীন সুবিধাদি বা প্রাপ্যতা পূর্ণনির্ধারণ প্রসঙ্গে
৫ বছর চাকরি করলেই মিলবে কি পেনশন সুবিধা?
৫ বছর চাকরি করলেই সরাসরি সাধারণ অবসরের মতো পেনশন সুবিধা পাওয়া যাবে না। ৫ থেকে ২৪ বছর চাকরি করার পর পেনশন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। শর্তগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
পেনশন প্রাপ্তির বিশেষ শর্তসমূহ
৫ থেকে ২৪ বছরের পেনশনযোগ্য চাকরিকালের পেনশন কেবল নিম্নোক্ত বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে প্রাপ্য হবেন:
মৃত্যুবরণ: যদি একজন সরকারি কর্মচারী চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ।
স্থায়ী অক্ষমতা: সরকার কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড দ্বারা শারীরিক বা মানসিক বৈকল্যের কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম (Invalid) ঘোষিত হলে ।
পদ বিলুপ্তি: স্থায়ী পদ বিলুপ্তির কারণে যদি সংশ্লিষ্ট কর্মচারী চাকরি থেকে ছাঁটাই হন ।
পেনশনের হার ও অন্যান্য তথ্য
পেনশনের হার: ৫ বছর পূর্ণ করা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পেনশনের হার হবে সর্বশেষ আহরিত বেতনের ২১% ।
আগের নিয়ম: আগে পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ১০-২৫ বছরের স্থলে বর্তমানে এটি ৫-২৫ বছর করা হয়েছে ।
বিশেষ আর্থিক সহায়তা: যদি কোনো কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন বা স্বাস্থ্যগত কারণে অক্ষম হয়ে পড়েন, তবে তিনি বা তাঁর পরিবার প্রতি বছর চাকরির জন্য ৩টি মূল বেতনের সমপরিমাণ হারে এককালীন বিশেষ আর্থিক সহায়তা পাবেন ।
অর্থাৎ, স্বাভাবিকভাবে স্বেচ্ছায় অবসর বা পূর্ণ মেয়াদে চাকরি শেষ করার ক্ষেত্রে ৫ বছরেই পেনশন সুবিধা পাওয়া যাবে না; এটি কেবল মৃত্যু, অক্ষমতা বা পদ বিলুপ্তির মতো বিশেষ পরিস্থিতির জন্য প্রযোজ্য ।



