PPR 2025 (New) । সরকারি ক্রয়সীমা বাড়লো: দ্রুত হবে কোটেশন প্রক্রিয়া, সুফল পাবেন উপজেলা দপ্তরগুলোও?
সরকারি পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পণ্য ক্রয়, কাজ এবং সেবাপ্রাপ্তির জন্য কোটেশন আহ্বানের আর্থিক সীমায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে সরকার। “কোটেশন প্রদানের অনুরোধ জ্ঞাপন পত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য, কাজ এবং সেবাপ্রাপ্তি” সম্পর্কিত একটি নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যা [তারিখ/সময়কাল – যেমন, ‘সম্প্রতি’ বা ‘নতুন আর্থিক বছর থেকে’] কার্যকর হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে ছোট ও মাঝারি অঙ্কের ক্রয় প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মূল পরিবর্তন ও নতুন আর্থিক সীমা (পিআর-২০২৩ অনুযায়ী)
নতুন নিয়ম অনুসারে, সরকারি দপ্তরগুলোর কোটেশন (Quotation) বা সীমিত টেন্ডার (Limited Tendering Method – LTM) আহ্বানের ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে কার্য সম্পাদনে গতি আসবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এখানে উল্লেখ করা সীমাগুলো একক কোটেশন আহ্বানের সর্বোচ্চ সীমা।
সুদূরপ্রসারী প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থিক সীমা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সীমিত পরিসরে দ্রুত পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারবে। এর প্রধান ইতিবাচক দিকগুলো হলো:
১. দ্রুত কার্য সম্পাদন: ছোট অঙ্কের ক্রয়ের জন্য আর বড় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে না, ফলে কাজ দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে। ২. বিকেন্দ্রীকরণ: উপজেলা পর্যায়ের দপ্তরের আর্থিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় চাহিদা দ্রুত পূরণ করা যাবে। ৩. সময় সাশ্রয়: দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ টেন্ডার প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হ্রাস পাওয়ায় সরকারি কাজের গতি বাড়বে।
এই নতুন নীতিমালা সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে মাঠ পর্যায়ের কাজকে আরও ফলপ্রসূ করবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশা প্রকাশ করেছে।

পিপিআর, ২০১৫ জারি হওয়ার পূর্বদিন পর্যন্ত যে সকল ক্রয়কারী তাদের ক্রয়কার্যের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি বা আগ্রহব্যক্তকরণের অনুরোধপত্র জারি করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে পূর্বতন পিপিআর, ২০০৮ প্রযোজ্য হইবে। পিপিআর, ২০২৫ জারি হওয়ার তারিখে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ও দরপত্র দলিল জারি হওয়ার পূর্বাবস্থায় কোনো ক্রয়কারী ক্রয়ের যে ধাপেই থাকুক না কেন, তাদের পিপিআর, ২০২৫ অনুসরণেই ক্রয়কার্যের সকল ধাপ প্রতিপালন করতে হবে।
বাংলাদেশের সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি হ্রাসের লক্ষ্যে সরকার ২০২৫ সালের ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ’ প্রণয়ন করেছে। এই নতুন আইন দেশের প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বাজেট উদ্বায়ী গুরুত্বের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে কার্যকর, দ্রুত এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপকে দেশের গঠনমূলক প্রগতি এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য হলো সরকারি ক্রয়ের পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে (ই-জিপি) নিয়ে আসা, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাদেশের মূল বৈশিষ্ট্য ও প্রধান সংস্কারসমূহ কি কি? নতুন ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন এনেছে:
১. ই-জিপি পোর্টাল বাধ্যতামূলককরণ ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ক্রয়ের নিশ্চয়তা বাধ্যতামূলক ব্যবহার: ২০১১ সালে চালু হওয়া ই-জিপি (e-GP) পোর্টাল এখন থেকে সব ধরনের সরকারি ক্রয়ের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বচ্ছতা বৃদ্ধি দেশের মোট সরকারি ক্রয়ের মাত্র ৬৫ শতাংশ এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। নতুন আইনের মাধ্যমে এই হার শতভাগ নিশ্চিত করে ক্রয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো হবে।
২. দরপত্রের মূল্যসীমা বাতিল ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি: শর্ত শিথিল আগে দরপত্রের দাম সরকারি প্রাক্কলনের তুলনায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কম বা বেশি করার শর্ত ছিল। নতুন আইনে এই শর্ত তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রভাব এর ফলে দরদাতারা এখন আরও বাস্তবসম্মত ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য প্রদান করতে পারবেন।
৩. ক্রয়ের কাঠামোর পুনর্বিন্যাস: ক্যাটাগরি বিভাজন পুরোনো আইন অনুযায়ী পণ্য, কাজ এবং সেবা—এই তিন ক্যাটাগরিতে ক্রয় পরিচালিত হত। সংশোধিত আইনে সেবাগুলোকে পৃথক করে এখন ‘সেবা’ ও ‘তথ্যসেবা’ নামে দুই বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। লক্ষ্য এই বিভাজন ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মতো অত্যাধুনিক ও বহুমুখী সেবা প্রদান নিশ্চিত করবে।
৪. এনজিও ও যৌথ উদ্যোগের সুযোগ সৃষ্টি: এনজিওদের অংশগ্রহণ আগে কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে নিবন্ধিত ও অনুমোদিত এনজিওগুলো সরকারি দরপত্রে অংশ নিতে পারত না। নতুন অধ্যাদেশে তাদের জন্য দরপত্রে অংশ নেওয়ার দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে, যা সামাজিক সেবার উন্নয়ন ও তৃণমূল পর্যায়ের কার্যক্রমে গতি আনবে। যৌথ উদ্যোগে উৎসাহ: বড় প্রকল্পে দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথভাবে দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে, যা অপচয় হ্রাসে ভূমিকা রেখে দক্ষতা ও সততা নিশ্চিত করবে।
৫. আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান: বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ এই আইনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলা। দরকষাকষির সুযোগ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বা পরিচালন সহায়তার মতো দৃশ্যমান সেবায় নিষ্কৃতি প্রাপ্ত দরদাতাদের সঙ্গে দরকষাকষির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা আগে বুদ্ধিবৃত্তিক সেবাদানকারীদের জন্য সীমিত ছিল।
সার্বিক প্রভাব ও প্রত্যাশা: ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ বাংলাদেশের সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে কেবল দুর্নীতি রোধই হবে না, বরং সরকারি প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছতা ও গতি বৃদ্ধি করে অর্থ ও সময়ের অপচয় কমবে। ডিজিটাল ব্যবস্থার বাধ্যতামূলক প্রয়োগ, এনজিওদের অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান—এসব সম্মিলিত উদ্যোগ দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন অংশীদারদের আস্থা জোরদার করবে। সব মিলিয়ে, এই আধুনিকায়ন দেশের সুশাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং সরকারের অর্থায়নে চলা প্রকল্পগুলো দ্রুত ও সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ছাপ ফেলবে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫
সরকারি প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশ ২০২৫। নতুন ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি সিন্ডিকেট ভাঙতে সাহায্য করবে?



