সরকারি ছুটিকালীন বেতন নির্ধারণ ২০২৫ । ছুটিতে থাকাকালীন সর্বশেষ মাসে উত্তোলিত বেতনের হারে বেতন পাইবে?
নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯ এর বিধি ৬ তে ছুটিকালীন বেতন নির্ণয়ের যে পদ্ধতি বর্ণিত আছে তাহা অত্যন্ত দীর্ঘ প্রকৃতির হওয়ায় Memorandum No. SGA/RII/IM-34/64-399, তারিখ: ০১ অক্টোবর, ১৯৬৯ দ্বারা ছুটিকালীন বেতন নির্ণয়ের উক্ত পদ্ধতিকে সহজীকরণ করা হয়-সরকারি ছুটিকালীন বেতন নির্ধারণ ২০২৫
উক্ত নির্দেশনা মতে ছুটি আরম্ভের পূর্বে সর্বশেষ উত্তোলিত বেতনের সমানহারে গড় বেতনে ছুটিকালীন বেতন পাইবেন এবং উক্ত হারের অর্ধ হারে অর্ধ গড় বেতনে ছুটিকালীন বেতন পাইবেন।
বর্তমানে ছুটিকালীন বেতন নির্ণয়ের এই পদ্ধতিটিই কেবল অনুসরণযোগ্য। নির্ধারিত ছুটি বিধিমালার বিধান অনুযায়ী ছুটিকালীন বেতন নির্ণয়ের প্রক্রিয়াটি বর্তমানে অকার্যকর।
নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯: ডাউনলোড
ছুটিকালীন বেতন বলতে একজন কর্মচারী ছুটির সময় যে বেতন পান, তাকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ছুটির ধরনের ওপর ভিত্তি করে বেতনের নিয়ম ভিন্ন হয়।
বিভিন্ন ধরনের ছুটির জন্য বেতনের নিয়ম:
অর্জিত ছুটি (Earned Leave): এই ছুটিতে কর্মচারী পূর্ণ বেতন পান। প্রতি ১১ দিন কাজ করার বিনিময়ে একদিন অর্জিত ছুটি জমা হয় এবং এটি কর্মচারীর অধিকার। ছুটি শেষে এই ছুটির জন্য কোনো বেতন কাটা হয় না। এই ছুটি চিকিৎসার জন্য হলে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন পর্যন্ত এবং অন্য কারণে হলে সর্বোচ্চ ১২০ দিন পর্যন্ত পূর্ণ বেতনে নেওয়া যায়।
- অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি (Half-Pay Leave): এই ছুটিতে কর্মচারী তার মূল বেতনের অর্ধেক পান। যদি কোনো কর্মচারীর পূর্ণ বেতনে ছুটি জমা না থাকে, তাহলে তিনি এই ছুটি নিতে পারেন। এই ছুটির জন্যও চিকিৎসকের সনদপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
- অসাধারণ ছুটি (Extraordinary Leave): এই ছুটি সাধারণত বিনা বেতনে মঞ্জুর করা হয়। যখন কোনো কর্মচারীর অন্য কোনো ছুটি প্রাপ্য থাকে না, তখন বিশেষ প্রয়োজনে এই ছুটি দেওয়া হয়। এই ছুটির সময় কোনো বেতন বা ভাতা দেওয়া হয় না।
- মাতৃত্বকালীন ছুটি (Maternity Leave): একজন নারী সরকারি কর্মচারী প্রসবের আগে ও পরে মোট ছয় মাস (১৮০ দিন) পূর্ণ বেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। এই ছুটির জন্য কোনো বেতন কাটা হয় না।
- চিকিৎসাজনিত ছুটি: যদি কোনো কর্মচারী গুরুতর অসুস্থতার কারণে লম্বা ছুটি নেন, তবে তিনি মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত ছুটি নিতে পারেন। এর মধ্যে প্রথম ১৮ মাস পূর্ণ বেতনে এবং বাকি ৬ মাস অর্ধেক বেতনে ছুটি পান।
সুতরাং, ছুটির সময় বেতন নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ছুটি নিচ্ছেন তার ওপর। অর্জিত ছুটি বা মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো কিছু ছুটি পূর্ণ বেতনসহ হয়, আবার কিছু ছুটি (যেমন অর্ধেক বেতনে ছুটি বা অসাধারণ ছুটি) পূর্ণ বেতন দেয় না।
ছুটিতে থাকাকালীন সর্বশেষ মাসে উত্তোলিত বেতনের হারে বেতন পাইবে?
সরকারি ছুটিকালীন বেতনের নিয়মাবলী অনুসারে, একজন কর্মচারী ছুটিতে থাকাকালীন সাধারণত সর্বশেষ মাসে উত্তোলিত বেতনের হারেই বেতন পেয়ে থাকেন। এই নিয়মটি ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত হয়। এর মূলনীতি হলো, একজন কর্মচারী যখন অর্জিত ছুটি (Earned Leave) বা পূর্ণ বেতনে অন্য কোনো ছুটি (যেমন, মাতৃত্বকালীন ছুটি) ভোগ করেন, তখন তিনি তার ছুটির আগের মাসের মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া ভাতা এবং অন্যান্য নিয়মিত ভাতাগুলো পূর্ণ হারেই পান। অর্থাৎ, ছুটির কারণে তার বেতনে কোনো কাটছাঁট করা হয় না।
বেতনের হার: ছুটির সময় বেতন হিসাব করার জন্য ছুটির ঠিক আগের মাসের উত্তোলিত বেতনকে ভিত্তি ধরা হয়। এর মধ্যে মূল বেতন, ব্যক্তিগত বেতন (যদি থাকে) এবং নির্দিষ্ট কিছু নিয়মিত ভাতাও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ভাতা: বাড়ি ভাড়া ভাতা এবং চিকিৎসা ভাতা (যদি প্রযোজ্য হয়) ছুটির সময়ও পূর্ণ হারে পাওয়া যায়।
ছুটির ধরন: এই নিয়মটি প্রধানত পূর্ণ বেতনে অর্জিত ছুটি বা মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি কোনো কর্মচারী অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি নেন, তবে তিনি মূল বেতনের অর্ধেক পাবেন। আর অসাধারণ ছুটি (বিনা বেতনে ছুটি) নিলে কোনো বেতন বা ভাতা পাবেন না।
ইনক্রিমেন্ট: যদি কোনো কর্মচারীর ছুটি চলাকালীন সময়ে তার ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) কার্যকর হওয়ার কথা থাকে, তবে সেই ইনক্রিমেন্ট যথারীতি যোগ হবে এবং তিনি বর্ধিত হারে বেতন পাবেন।
সংক্ষেপে, আপনার জিজ্ঞাসা অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মচারী পূর্ণ বেতনে ছুটিতে থাকলে তিনি সর্বশেষ মাসে যে হারে বেতন উত্তোলন করেছেন, সেই হারেই বেতন পাবেন এবং ছুটির কারণে তার বেতনে কোনো প্রভাব পড়বে না।