নিজেকে বিক্রি করতে চাই । এমন সময়ে বসবাস করছি আমরা যেখানে মানুষ দ্রব্যমূল্যের কাছে অসহায়?
ধ্রব আবরার একজন ফেসবুকার সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া গ্রুপে নিজেকে সরকারি কর্মচারী বলে পরিচয় দিয়েছেন। একজন ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারী হিসাবে জীবন যাপনের বাস্তবিকতায় যেসব সমস্যায় পড়েছেন তা তার আক্ষেপমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তিনি সরকারি চাকরিকালে স্বল্প বেতনের অসহায়ত্ব নিজেকে বিক্রি করার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তার বক্তব্যটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো।
সরকারি চাকরিজীবীর বেতন
“আমি সরকারি চাকরিজীবি। সব মিলিয়ে ২৪,৮৬৫ টাকা বেতন। আমার ৫ জনের সংসার। বাবা মা, স্ত্রী, ১ বছর বয়সী মেয়ে সন্তান ও আমি। বাবা মা দুজনেই ষাটোর্ধ্ব বয়স। অসুস্থ থাকেন প্রায় সময়। গ্রামে কিছু জমি আছে যেগুলো থেকে বাৎসরিক আয় হয় ত্রিশ হাজার মতো।
খরচ বাদে কিছুই থাকে না
আমার বেতন থেকে বাসা ভাড়া দিতে হয় ৬,৩৮০ টাকা। জিপিএফ কর্তন ১,০০০ টাকা, গৃহ নির্মাণ লোন নিয়েছিলাম নিজের বিয়ের জন্য, সে বাবদ কর্তন ১,০০০, প্রতি মাসে মা বাবার জন্য নির্ধারিত ওষুধ কিনতে হয় ৪,২০০ টাকা। সন্তানের জন্য কমপক্ষে ১,০০০ টাকা বরাদ্দ রাখতে হয়। এবার মাসিক খাওয়া খরচ কত লাগে আপনারাই বলুন। মাঝখানে মা গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই খরচ মেটাতে গিয়ে ব্যাংক লোন করতে হয় ৬ লাখ টাকা। এখন একবছর যাবৎ লোনের কিস্তি বাবদ ব্যাংক কেটে নেয় ১২,৫০০৳। এটা আরো ৪ বছর টানতে হবে চলতে না পেরে কিছু জমি বিক্রি করছি।
লোনই একমাত্র ভরসা
গ্রামে জমির দাম নগন্য। সব বিক্রি করলেও লোন শোধ হবে না। কি করব বুঝতে পারছি না। শখ আহ্লাদ ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। বাবা মা, স্ত্রী সন্তানের মুখে দু মুটো খাবার তুলে দিতে পারলেই শান্তি। ৯ টা ৫টা চাকরি করে অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। তাই নিজেকে একেবারেই বিক্রি করতে চাই। পরিবারের হাতে এককালীন টাকাটা তুলে দিয়ে আমি ক্রেতার হাতে নিজেকে তুলে দিব। কেউ কি কিনবেন আমাকে? আমার মূল্য কত?”
পরিবর্তন জরুরি
এভাবেই তিনি ১১-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারীদের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরেছেন। তিনি বৈষম্যমূলক পে স্কেলে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এবং নিম্নমানের জীবন যাপন করছেন তা তুলে ধরেছেন। বর্তমান বেতন ব্যবস্থা ২০১৫ সংশোধন বা পরিবর্তন করা না হলে নিম্নগ্রেডের কর্মচারীদের বেঁচে থাকাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
নিত্য পন্যের দাম এখন কেমন?
স্বল্প আয়ের মানুষেরা বলছেন, কম দামে পাই বলে নিয়মিত টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনি। কিন্তু দিনদিন ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। টিসিবির ট্রাক থেকে আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষরা বাজারের চেয়ে কম দামে তেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ কিনতে পারতাম। সারা বছর এটা চালু রাখলে আমরা বাঁচতে পারি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, ওই দামে কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই। কাটা মরিচ ৪০০-১২০০ টাকা কেজি, ধনিয়া পাতা ৫৫০ টাকা, গাজর ২২০ টাকা, ডিমের হালি ৬০ টাকা, লাউ ৮০-১০০ টাকা, বেগুন ১৪০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা পটল ১০০ টাকা, ঢেঁরস ১২০ টাকা, সিম ৪০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৭০ টাকা কেজি, আলু ৫৫ টাকা, লাল শাক ৪০ টাকা। এমন দামের সামনে বর্তমান বেতন অসহায় হয়ে পড়ে।
সরকারি নিম্নগ্রেডে বেতন কত?
২০ তম গ্রেডের একজন কর্মচারী সর্বসাকুল্যে বেতন পাচ্ছেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই তাকে বাড়ীভাড়া, খাবারসহ সব ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎবিল, গ্যাসবিলসহ সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে ৭ হাজার টাকা। এর পর পুরো মাসের খরচ চালানোর জন্য তার হাতে থাকে মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তাকে পুরো মাসের সংসারের খরচ, পরিবারের কাপড়সহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হয়। এর বাইরে তার আয়ের আর কোনো উৎস নেই। বেতনের আকাশ পাতাল বৈষম্য থাকলেও দৈনন্দিন খরচে নেই খুব বেশি পার্থক্য। ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের মাসের ১৫ দিন না অতিবাহিত হতেই শুরু হয় টানাটানি।
