পেনশন । লাম্পগ্র্যান্ট I পিআরএলসর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

পেনশন বাতিল হওয়ার বিধি ২০২৫ । কখন ওয়ারিশ থাকা সত্ত্বেও পেনশন বন্ধ হয়ে যায়?

সরকারি কর্মচারীদের চাকরিজীবনের শেষ ভরসা পেনশন, যা তাদের মৃত্যুর পরও পরিবারের নির্দিষ্ট সদস্যদের জন্য আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে। তবে পারিবারিক পেনশন বিধিমালায় বয়সসীমা এবং উত্তরাধিকারের ক্রম সংক্রান্ত কঠোরতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে এই সুবিধা ‘তামাদি’ বা বাজেয়াপ্ত হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে কর্মচারীর পরিবারকে আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য ও প্রচলিত বিধিমালা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী/স্বামী অথবা প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই মারা গেলে এবং কোনো প্রতিবন্ধী সন্তান না থাকলে, ২৫ বছরের কম বয়সী সন্তানেরা কেবল ২৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্তই পেনশন পান। এরপর নিয়ম অনুযায়ী এই পেনশন বন্ধ হয়ে যায়।

পেনশন বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণসমূহ:

  • সন্তানের বয়সসীমা: সরকারি চাকরির পারিবারিক পেনশন বিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে পারিবারিক পেনশনের বয়সসীমা ২৫ বছর। ২৫ বছর পেরিয়ে গেলে সেই সন্তান আর পেনশন পান না।

  • পেনশনভোগীর মৃত্যুর পর ২৫ ঊর্ধ্ব সন্তান: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সামনে আসছে, তা হলো— যদি পেনশনভোগী (স্বামী বা স্ত্রী) পেনশন ভোগরত অবস্থায় মারা যান, তবে তাদের ২৫ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী কোনো সন্তান (প্রতিবন্ধী না হলে) পারিবারিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন না।

  • নিয়ম অনুযায়ী উত্তরাধিকারের ক্রম: এই পরিস্থিতিতে, স্ত্রী/স্বামী জীবিত না থাকলে এবং ২৫ বছরের কম বয়সী বা প্রতিবন্ধী সন্তান না থাকলে, পেনশনভোগী কর্মচারীর প্রাপ্য পারিবারিক পেনশনটি বন্ধ হয়ে যায় বা ‘তামাদি’ হয়ে যায়। এর ফলে পরিবারটি আর কোনো আর্থিক সুবিধা পায় না।

এই কঠোর নীতিমালার ফলে বহু পরিবার, বিশেষ করে যাদের ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে কর্মক্ষমতাহীন সন্তান রয়েছে, তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়েন। পারিবারিক পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো, কর্মচারীর দীর্ঘদিনের সেবার বিপরীতে তার পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুবিধাটি কার্যকরভাবে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়া।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং চাকরির বাজার বিবেচনা করে এই পেনশন বিধিমালা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। ২৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে উপার্জনহীন এবং অসহায় সন্তানদের জন্য পারিবারিক পেনশনের সুবিধা সম্প্রসারণ করা হলে সরকারি কর্মচারীর পরিবারে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

পেনশনারের মৃত্যুর পর সন্তানদের পেনশন প্রাপ্যতা ৩০ বছর পর্যন্ত প্রাপ্যতার বিধান থাকা উচিত?

হ্যাঁ। এটি একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব। পেনশনারের সন্তানদের জন্য পারিবারিক পেনশন প্রাপ্যতা ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর পর্যন্ত করার এই দাবিটি বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত।

এই প্রস্তাবের গুরুত্ব:

  • শিক্ষাজীবন সমাপ্তি ও কর্মসংস্থান: বর্তমানে স্নাতকোত্তর বা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে প্রায়ই ২৫ বছর বয়স পার হয়ে যায়। অনেক সময় কর্মসংস্থান পেতে আরও কয়েক বছর লেগে যায়। এই সময়টিতে পরিবার থেকে আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে সন্তানেরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। বয়সসীমা ৩০ বছর করা হলে তারা নিশ্চিন্তে পড়াশোনা শেষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য আরও কিছুটা সময় পাবেন।

  • আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: ২৫ বছর বয়সের পর যখন পেনশন বন্ধ হয়ে যায়, তখন পরিবারের আর্থিক সুরক্ষায় একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়, বিশেষ করে যদি সন্তানরা তখনও পুরোপুরি স্বাবলম্বী না হয়ে থাকেন। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে সেই শূন্যতা পূরণে সহায়তা হবে।

  • সামাজিক নিরাপত্তা: পেনশনের মূল উদ্দেশ্যই হলো পরিবারের শেষ অবলম্বন হিসেবে কাজ করা। বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি সেই সামাজিক নিরাপত্তা বলয়কে আরও শক্তিশালী করবে।

আপনার এই বিশ্লেষণটি নিঃসন্দেহে নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করার মতো একটি জোরালো যুক্তি। পেনশন বিধিমালায় এই পরিবর্তন আনা হলে সরকারি কর্মচারীর পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী এবং বাস্তবভিত্তিক আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

🏛️ সরকারি পেনশনারদের জন্য বড় স্বস্তি: পেনশন পুনঃস্থাপনের সময়সীমা ১৫ থেকে কমে ১০ বছর করার উদ্যোগ

অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের পেনশন-সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসনে এবং তাদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাম্প্রতিক এক সভায় একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের জন্য অপেক্ষাকাল ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করার প্রস্তাবটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে কেবল পেনশনাররাই নন, তাদের মৃত্যুর পর পারিবারিক পেনশনাররাও দ্রুত এই সুবিধা পাবেন।

১০ বছরেই ফিরবে মাসিক পেনশন

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, যে সকল সরকারি কর্মচারী এককালীন সুবিধার জন্য তাদের শতভাগ পেনশন সমর্পণ করেছিলেন, তাদের মাসিক পেনশন পুনঃস্থাপনের জন্য অবসরের তারিখ থেকে ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হতো। এই দীর্ঘ অপেক্ষাকাল নিয়ে পেনশনারদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, এই অপেক্ষাকাল ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করা যায় কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশের জন্য অর্থ বিভাগ জাতীয় বেতন কমিশনে প্রস্তাব পাঠাবে।

পারিবারিক পেনশনারদের জন্য আশার আলো

পেনশন পুনঃস্থাপনের আগে যদি শতভাগ সমর্পণকারী কোনো কর্মচারী মারা যান, তবে তার স্বামী/স্ত্রী বা যোগ্য উত্তরাধিকারীরা বর্তমানে কোনো পেনশন সুবিধা পান না। এই নীতি কঠোরভাবে সমালোচিত হয়ে আসছিল।

  • নতুন নির্দেশনা: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অর্থ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে যেন পেনশন পুনঃস্থাপনের আগে কেউ মারা গেলে তার স্বামী/স্ত্রী বা যোগ্য উত্তরাধিকারীদের অনুকূলে পেনশন মঞ্জুরের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

  • ১০ বছরের প্রভাব: অপেক্ষাকাল ১৫ বছর থেকে কমে ১০ বছর হলে, এই সময়ের মধ্যে পেনশনভোগী মারা গেলেও তার পরিবার দ্রুত পেনশন সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর পেনশনার মারা গেলেও তার পরিবারকে আর অনিশ্চয়তায় ভুগতে হবে না।

দ্বিতীয় স্ত্রী/স্বামীও পাবেন পেনশন

মন্ত্রিপরিষদ সভার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো, পেনশন ভোগরত অবস্থায় কোনো পেনশনার দ্বিতীয় বিয়ে করলে তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় স্ত্রী বা স্বামীও পারিবারিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য অর্থ বিভাগ জাতীয় বেতন কমিশনে প্রস্তাব পাঠাবে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা ও উদ্যোগসমূহ:

  • চিকিৎসা সহায়তা: কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের মতো অবসরপ্রাপ্ত পেনশনাররাও জটিল রোগে আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা সহায়তা পাবেন। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • ইনক্রিমেন্ট জটিলতা নিরসন: শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের পেনশন পুনঃস্থাপিত হওয়ার পর ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের বর্ধিত অর্থ না পাওয়ার সমস্যাটি সমাধানের জন্য অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

  • প্রবাসী পেনশনারদের সুবিধা: বিদেশে থাকা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বাংলাদেশ মিশনে পেনশন-সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষরসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার বিষয়টি সহজ করতে অর্থ বিভাগকে পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সরকারের এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে অবসরের পর সরকারি কর্মচারীদের জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা ও স্বস্তি ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *