ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটার আগে জিডি করা যায় কিন্তু ঘটনা ঘটার পর মামলা করতে হয়- বাদীর ক্ষতি আর্থিকভাবে নিরুপনযোগ্য বা আমলযোগ্য হতে হয় – থানায় মামলা করার নমুনা ২০২৩
এজাহার বা এফআইআর কি? অপরাধীর শাস্তি দাবী করে বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে থানায় সরাসরি অপরাধের সংবাদ লিপিবদ্ধ করাকে বলে এজাহার যা FIR নামেও পরিচিত। FIR হলো First Information Report বাংলায় প্রাথমিক তথ্য বিবরণী । এ বিবরণটা প্রথম দেয়া হয় বলে একে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে – কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের নিকট কোন অপরাধ সংঘঠিত হওয়া সম্পর্কে কোন সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে তিনি সাথে সাথে তা লিখে তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন এবং তার স্বাক্ষর নিবেন।
ঘটনার বর্ণনাকারীকে কি স্বাক্ষর দিতে হয়? লিখিতভাবে প্রদত্ত সংবাদেও তথ্য প্রদানকারী স্বাক্ষর করবেন। এই তথ্য বিবরণী উক্ত অফিসার, সরকার কর্তৃক নির্দেশিত ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন। এটাই এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নামে পরিচিত। এজাহার যেভাবে দায়ের করবেন ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫৪ ধারা অনুসারে আমলাযোগ্য অপরাধের সংবাদ পাওয়া গেলে তা নির্ধারিত ফরম অনুসারে রক্ষিত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। আমলাযোগ্য অপরাধের সংবাদ মৌখিকভাবে দেয়া হলে তা লিপিবদ্ধ করে সংবাদ দাতাকে পাঠ করে শুনাতে হবে এবং তাতে তার স্বাক্ষর নিতে হবে।
উত্তম এজাহারের বৈশিষ্ট্য কি? অপরাধীর নাম ও ঠিকানা (জানা থাকলে) সুস্পষ্ট হতে হবে। অপরাধের বর্ণনা যৌক্তিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হবে। অপরাধ সংঘটনের তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হবে। অপরাধের ঘটনাস্থল (পিও) উল্লেখ করতে হয়। অপরাধ সংঘটনের কোন পূর্ব সূত্র বা কারণ থেকে থাকলে তার বর্ণনা তুলে ধরতে হয়। সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে। অপরাধ পরবর্তী অবস্থা যেমন সাক্ষীদের আগমন, আহত ব্যক্তির চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা থাকতে হয়। অপরাধীদের কেহ বাঁধা দিয়ে থাকলে তার ধারাবাহিক বর্ণনা করতে হয়। কোন বিষয় তাৎক্ষনণিক ভাবে লেখা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে সে বিষয়টি সংযোজন করা হবে এমন একটি কৈফিয়ত এজাহারে রাখতে হয়। এজাহারে কোন ঘষা-মাজা, কাটা-কাটি করা উচিত না।
এজাহার নমুনা । থানায় মামলা করার নমুনা কপি pdf
কোনো অপরাধ বা অপরাধমূলক কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে থানায় প্রতিকার পাওয়ার জন্য যে সংবাদ দেওয়া হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বলে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে বা তাঁর পরিবারের কেউ কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন, তিনি থানায় এজাহার করতে পারেন। মূলত এজাহার করার মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়।
Caption: word file download
কখন মামলা গ্রহণ করা হয়? । এজাহার গ্রহণে করণীয় বিষয়াবলী পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল (পিআরবি) ১৯৪৩ এর ২৪৩ প্রবিধান এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার, এজাহারের শর্তাবলী বর্ণিত হয়েছে।
- আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপি ২৭ ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন।
- এজাহার হলো জিআর (জেনারেল রেজিস্টার) বা পুলিশী মামলার ভিত্তি। এখান থেকেই জিআর মামলার জন্ম হয় তাই আমলাযোগ্য কোন অপরাধের সংবাদ পাবার সাথে সাথে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৭ ধারার অধীনে তদন্ত আরম্ভ করতে হবে।
- আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ শুনে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পুলিশ অফিসার এফআইআর গ্রহণ হতে বিরত থাকতে পারবেন না (পিআরবি ২৪৩(চ) প্রবিধান)।
- ডাক্তারী সার্টিফিকেট না পাওয়ার কারণে এজাহার বিলম্বিত করা যাবে না।
- সংবাদাতা সংবাদটি লিখিতভাবে দিতে না চাইলৈ বা তা লেখা হলে তাতে সে স্বাক্ষর দিতে না চাইলে সংবাদটি জিডিভূক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
- টেলিফোনে কোন আমলযোগ্য ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেলে সংবাদদাতাকে থানায় এসে এজাহার দায়েরের জন্য বলতে হবে, সংবাদদাতা না এলে সংবাদ গ্রহণকারী অফিসার নিজেই বিষয়টি এফআইআর করে ব্যবস্থা নিবেন।
- যার সম্পত্তিতে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা যার উপর আঘাত হয়েছে তিনি এজাহার দিবেন তবে আমলযোগ্য অপরাধের বিষয় যে কেউ এজাহার দিতে পারেন।
- অপরাধ সংঘটনের সংবাদটি কোন আমলযোগ্য ঘটনার না হলে সে সংবাদের ভিত্তিতে কোন এজাহার নয়, জিডি এন্টি করে ব্যবস্থা নিতে হবে, সংবাদদাতা অনেক কারণেই স্বাক্ষর দিতে নাও চাইতে পারে সে জন্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে না।
- পুলিশ কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কনস্টেবলও এজাহার গ্রহণ করতে পারবেন।
- ম্যাজিস্ট্রট আমলযোগ্য কোন অপরাধের জন্য পুলিশকে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিলে, ম্যাজিস্ট্রেটের প্রেরিত লিখিত খবরই পুলিশ কর্মকর্তা এজাহারে গণ্য করে ব্যবস্থা নিবেন। (তথ্যসূত্র: পিআরবি ২৪৫ প্রবিধি এবং 47 DL R 94)
- আমল অযোগ্য ঘটনার তদন্ত ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া করতে পারবেন না।
- এজাহার আদালতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই কোর্ট অফিসার তা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পেশ করবেন।
- এজাহারের কপি হবে ৫টি, এর মূল কপি কোর্টে প্রেরণ করতে হবে।
- প্রথম কার্বন কপি যাবে পুলিশ সুপার এর নিকট।
- দ্বিতীয় কার্বন কপি থাকবে থানায়।
- সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি যাবে সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপারের নিকট।
- সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি পাবে এজাহারদাতা।
এজহার করলেই কি মামলা গ্রহণ করে?
এফআইআর বা এজাহারে উল্লেখিত অপরাধটি হবে আমলযোগ্য। সংবাদটি বিস্তারিত না হলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে। সংবাদটি লিপিবদ্ধ করতে হবে। লিপিবদ্ধ সংবাদের উপর সংবাদাতাকে স্বাক্ষর করতে হবে। নির্ধারিত ফরমে (বিপি-২৭) সংবাদটি লিপিবদ্ধ করতে হবে। সংবাদ লিপিবদ্ধ করার পর তা সংবাদদাতাকে পাঠ করে শুনাতে হবে।
এজাহার যেহেতু কোন অপরাধ সংঘটনের পর পরই দায়ের করা হয়, তাই এজাহার হলো ঘটে যাওয়া ঘটনার একটি বাস্তব চিত্র। কিন্তু এজাহার প্রায়ই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লিখেন না অর্থাৎ এজাহারদাতা নিজে না লিখে অন্য কাউকে দিয়ে লেখান যিনি ঘটনা দেখেননি, তিনি এজাহার লিখতে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এলোমেলো করে ফেলেন। এজাহার একটি লিখিত দালিলিক সাক্ষ্য আর এ কারণেই এজাহারদাতা কিংবা এজাহার গ্রহীতা এ দু’জনের অন্তত একজনকে মামলার সাক্ষ্য পর্বে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়ে তা প্রমাণ করতে হয়। অন্যথায় মামলা দুর্বল হয়ে যায়। সাক্ষ্য আইনের ১৪৫ ধারা অনুসারে এজাহারকে সাক্ষীর সাক্ষের সত্যতা কিংবা অসংগতি প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। তাই এজাহার হতে হবে পূর্ণাঙ্গ।