কোন সরকারি চাকরিজীবী যদি অবিচারের শিকার হয় তবে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা করতে পারবে – প্রশাসনিক ট্রাইবুনারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে আপীল বিভাগে মামলা দায়ের করা যাবে – প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইন ১৯৮০
প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইন ১৯৮০ –বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৭ অনুচ্ছেদে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের বিধান রাখা হয়েছে। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট ১৯৮০ (১৯৮১ সালের অ্যাক্ট-৭) বলে বাংলাদেশে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়।
কেন এই আইন গঠন করা হলো? আইনের ধারা ০৩ অনুসারে জেলা জজ আছেন বা জেলা জজ ছিলেন এরকম ব্যক্তিকে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক করে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। আইনের ধারা ০৫ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আছেন বা ছিলেন বা হওয়ার যোগ্য এইরকম কাউকে চেয়ারম্যান এবং যুগ্ন সচিব ও জেলা জজ পর্যায়ের দুজন সদস্য নিয়ে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
মামলাকারীর মৃত্যু হলে? কোন ব্যক্তি যদি পেনশনযোগ্য চাকরি হতে বরখাস্ত বা অপসারণের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এবং মামলা চলাকালীন সময়ে মারা যান তাহলে তার মৃত্যুর ৬০ দিনের মধ্যে তার উত্তরাধিকারীরা মামলায় তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারবেন।
আদেশের প্রাধান্য পাইবে কি? ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত কোন আদেশ, সিদ্ধান্ত বা কার্যধারা সম্পর্কে কোন আদালতে চ্যালেঞ্জ, পূনবিবেচনা,বা রহিত করা যাবে না বা এবিষয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না।
প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত কোন ব্যক্তির চাকুরির শর্তাবলি পেনশনের অধিকার সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ ও তৎসম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুস্পষ্ট এখতিয়ার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রয়েছে। প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে তার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত যেকোন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তার আবেদনও ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করতে পারে। অবশ্য আইনি শর্ত হলো, আবেদনকারীকে তার সম্পর্কে গৃহীত যেকোন ব্যবস্থা বা আদেশে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হতে হবে। সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির ঊর্ধ্বতন কোন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা বা আদেশ বাতিল, পরিবর্তন বা সংশোধনের সুযোগ থাকলে সেক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক এ ধরনের কোন আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে আবেদন করার সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া আছে। যথার্থ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন ব্যবস্থা বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত এ সময়সীমা নির্ধারিত। এ আইনে প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যিনি চাকুরিতে কর্মরত রয়েছেন বা অবসর নিয়েছেন অথবা অন্য কোনভাবে চাকুরি থেকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদচ্যুত হয়েছেন। প্রতিরক্ষা বিভাগের চাকুরিতে কর্মরত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ সংজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।
সরকারি চাকরি জীবী বরখাস্ত হলেই প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে যাবেন / প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইন ১৯৮০ অনুসারে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত কোন ব্যক্তির চাকুরির শর্তাবলি পেনশনের অধিকার সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ ও তৎসম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুস্পষ্ট এখতিয়ার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রয়েছে। প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত কোনো ব্যাক্তি সম্পর্কে তার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত যেকোন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তার আবেদনও ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করতে পারে। অবশ্য আইনি শর্ত হলো, আবেদনকারীকে তার সম্পর্কে গৃহীত যেকোন ব্যবস্থা বা আদেশে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হতে হবে। সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির ঊর্ধ্বতন কোন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা বা আদেশ বাতিল, পরিবর্তন বা সংশোধনের সুযোগ থাকলে সেক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক এ ধরনের কোন আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে আবেদন করার সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া আছে। যথার্থ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন ব্যবস্থা বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত এ সময়সীমা নির্ধারিত। এ আইনে প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যিনি চাকুরিতে কর্মরত রয়েছেন বা অবসর নিয়েছেন অথবা অন্য কোনভাবে চাকুরি থেকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদচ্যুত হয়েছেন। প্রতিরক্ষা বিভাগের চাকুরিতে কর্মরত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ সংজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।
দেশের ৮টি বিভাগে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঢাকায় তিনটিসহ এই মোট সাতটি ট্রাইব্যুনাল কাজ করছে। ঢাকার বাইরে বগুড়া, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনায় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল থাকলেও রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে কোনও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। তাই এসব বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মামলা করতে অন্য বিভাগের ট্রাইব্যুনালে যেতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য কিছু গণপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ, শর্তাবলি, সরকারি বাসা, বেতন-ভাতা, ও পেনশন সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য সরকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। আইনে বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত সকল কর্মচারী ও সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থায় যারা কর্মে নিযুক্ত তার তাদের পেনশন ও চাকরির শর্তাবলি বা তার বিরুদ্ধে যদি কোনও কার্যধারা গ্রহণ করা হয় সে বিষয় নিয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবেন। আর এই মামলাগুলো এই ধারা অনুযায়ী অবশ্যই এই ট্রাইব্যুনালেই করতে হবে।
সরকারি কর্মচারি কেন প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে যাবেন? আইনের ধারা ৪ অনুসারে কি বিষয়ে মামলা দায়ের করা যাবে
- ক) প্রজাতন্ত্রের বা বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মে নিযুক্ত যে কোন ব্যক্তির পেনশনের অধিকার সহ তার কর্মের শর্তাবলি বা প্রজাতন্ত্রের বা বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে সেসম্পকে গৃহীত কোন ব্যবস্থার উপর তৎকর্তৃক পেশকৃত আবেদনের শুনানি গ্ৰহন ও নিস্পত্তির জন্য এই ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার থাকবে।
- খ) প্রজাতন্ত্রের বা বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মে নিযুক্ত যে কোন ব্যক্তির পেনশনের অধিকার সহ তার কর্মের শর্তাবলি বা প্রজাতন্ত্রের বা বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে সেসম্পকে গৃহীত কোন ব্যবস্থার দ্বারা কোন ব্যক্তি সংক্ষুদ্ধ হলে এই ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
- তবে যেক্ষেত্রে কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নিকট আপিল করার সুযোগ আছে এবং সেখানে আপিল দায়ের করে দুই মাস অতিবাহিত না হলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা যাবে না।
ঘটনার ঠিক কত দিনের মধ্যে মামলা করতে হবে?
সিদ্ধান্ত জারির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে– কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ বা উচ্চতর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত আপিল আদেশ প্রদানের ০৬ মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল দায়ের- প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি উক্ত আইনের ধারা ৫ অনুসারে গঠিত প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে, আদেশ প্রদানের তামাদি সহ সর্বোচ্চ ০৯ মাসের মধ্যে আপিল দায়ের করতে পারবেন। ব্যতিক্রম ছাড়া প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ চুড়ান্ত হবে।