সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

বিসিএস সার্ভিস পুনর্গঠন প্রস্তাব ২০২৫ । সরকারি চাকরি থেকে ক্যাডার শব্দটি কি বাদ দেওয়া হবে?

বাংলাদেশ ২৬টি ক্যাডার সার্ভিসকে ১৩টি সার্ভিসে রূপান্তর করে ক্যাডার শব্দটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে–বিসিএস সার্ভিস পুনর্গঠন প্রস্তাব ২০২৫

বিসিএস পরীক্ষার ফল কি দ্রুত দেয়া সম্ভব? হ্যাঁ। একটি সম্পূর্ণ বিসিএস পরীক্ষা (প্রিলিমিনারী, মূল লিখিত এবং মৌখিক) সম্পন্ন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) সময় নেয় সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার বছর। বিগত সরকারের সময় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বিভিন্ন কারনে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছিল। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক দুটো বিসিএস নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়সূচি বা নির্ঘন্ট উল্লেখ করা যেতে পারে। ৪১তম বিসিএস এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২৭ নভেম্বর ২০১৯। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পনের (১৫) মাস পরে প্রিলিমিনারী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে এবং ঐ বছরের আগষ্ট মাসে এর ফল প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ প্রিলিমিনারী পরীক্ষার ফল প্রকাশে পিএসসি’র সময় লেগেছিল পাঁচ (৫) মাস। প্রিলিমিনারী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এমসিকিউ পদ্ধতিতে। মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয় এমসিকিউ পদ্ধতিতে এবং তারা তিন লক্ষ প্রার্থীর ফল প্রকাশ করে মাত্র তিন দিনে। সেখানে পিএসসি অনুরূপ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে সময় নেয় পাঁচ মাস।

বিসিএস নিয়োগে এত সময় নেয় কেন? প্রিলিমিনারী পরীক্ষার ফল প্রকাশের আট (০৮) মাস পরে ৪১তম বিসিএস এর মূল লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অতঃপর এর ফলাফল প্রকাশিত হয় ১০ নভেম্বর ২০২২ সালে। অর্থাৎ মূল লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে পিএসসি সময় নিয়েছে প্রায় এক (১) বছর। এই ৪১ তম বিসিএস এর মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয় ২০২৩ সালের জুন মাসে। অর্থাৎ মূল লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষার মধ্যে সময়ের ব্যবধান আঠার (১৮) মাস বা দেড় বছর। সামগ্রিকভাব প্রিলিমিনারী, মূল লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা (৩টা পরীক্ষা) নিতেই পিএসসি’র মোট সময় লেগেছে দুই (২) বছর তিন (৩) মাস। পিএসসি ৪১তম বিসিএস এর অধীনে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। অর্থাৎ ৪১তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ (২৭ নভেম্বর ২০১৯) হতে চূড়ান্ত চাকুরীর সুপারিশ (জুলাই ২০২৩) এর তারিখের মধ্যে সময়ের ব্যবধান তিন (৩) বছর আট (৮) মাস । অতঃপর প্রার্থীদের কিছু তথ্য যাচাই বাছাই করে নয় (৯) মাস পরে সরকার নিয়োগ আদেশ বা গেজেট জারি করে গত ২১ মার্চ ২০২৪। অর্থাৎ ৪১তম বিসিএস এর সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সর্বমোট সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার (৪.৫) বছর। অনরূপভাবে ৪৩তম বিসিএস এর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও পিএসসি ও সরকার মোট সময় নিয়েছে ৪ বছর ২ মাস। এই বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত বয়েছিল ৩০ নভেম্বর ২০২০ এবং প্রার্থীদের যোগদানের তারিখ এখন নির্ধারিত হয়েছে ১ জানুয়ারী ২০২৫ তারিখে।

ভারতেও কি একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়? বিসিএস পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে বর্তমানে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং সুপারিশকৃত প্রার্থীদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড এবং রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই বাছাই করতে পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। এতে প্রায় নয় / দশ মাস অতিরিক্ত সময় লেগে যায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস নিয়োগে প্রক্রিয়ার সময়সূচির সাথে ভারতের সিভিল সার্ভিস নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়সূচীর একটা তুলনামূলক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কারন সেখানেও একই প্রক্রিয়ায সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে। ভারতে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার (সিএসই) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তারিখ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ-

  • ২০২৩ সালের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩।
  • প্রিলিমিনারী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৮ মে ২০২৩ (একদিন)
  • প্রিলিমিনারী পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল ১২ জুন ২০২৩।
  • মূল লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৫ জুন থেকে ২৪ জুন ২০২৩ (মোট পাঁচ দিন)।
  • মূল লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বের হয়েছিল ৮ ডিসেম্বর ২০২৩।
  • সর্বশেষ মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২ জানুয়ারী থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ পর্যন্ত।
  • ইউপিএসসি চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষনা করে ২০২৩ সালের মে মাসে।
  • এরপর তাঁরা ১৪ সপ্তাহের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এর জন্য মুসৌরীতে অবস্থিত লাল বাহাদুর শাস্ত্রী একাডেমী অব এডমিনিস্ট্রেশন এ যোগদান করেন। ২০২৩ সালে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৩১ জুলাই থেকে ০২ নভেম্বর পর্যন্ত ।

উপরে বর্ণিত ভারতের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ও নিয়োগের সময়সূচি হতে দেখা যায় যে, তাদের ইউপিএসসি এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সিভিল সার্ভিসের সকল পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ সম্পন্ন করে। পরীক্ষাসহ সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় দেড় বছরের মধ্যে। ইউপিএসসি প্রতি বছর তাদের প্রকাশিত পঞ্জিকা অনুসারে নির্দিষ্ট তারিখে সকল পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করে এবং নির্দিষ্ট তারিখেই ফলাফল প্রকাশ করে। সেখানে তারিখের কিছু পরিবর্তন হলেও মাসের কোন পরিবর্তন হয় না।

উপরের পরিসংখ্যান হতে এটা সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশ পিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা আয়োজনে অহেতুক অনেক মূল্যবান সময়ের অপচয় করছে এবং তাতে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবক-যুবতীর জীবনের মূল্যবান সময়, মেধা এবং শ্রমের অপচয় হচ্ছে। যে পরীক্ষা সর্বোচ্চ দেড় বছরে শেষ করা যায়, বাংলাদেশের পিএসসি তা সম্পন্ন করতে চার বছরেরও বেশী সময় নিচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পিএসসি’র সদস্য সংখা ১৬ জন, অন্যদিকে ভারতীয় ইউপিএসসি’র সদস্য সংখ্যা মাত্র ৮ জন। অধিকন্তু, বাংলাদেশে প্রিলিমিনারী বিসিএস পরীক্ষায় প্রার্থীর সংখ্যা দুই (২) লক্ষ, কিন্তু ভারতে তা ১৩ লক্ষ । বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) বিসিএস পরীক্ষার কোন সময়সূচি বা পঞ্জিকা অনুসরণ করে না। পিএসসি ওয়েবসাইটে বিসিএস পরীক্ষার বা ফল প্রকাশের কোন নির্দিষ্ট তারিখ বা পঞ্জিকা নেই। তাতে মনে হয় তাদের পরীক্ষা গ্রহণের যেমন কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, তেমনি পরীক্ষার ফল প্রকাশেরও কোন নির্দিষ্ট তারিখ নেই। পিএসসি এক এক বছর ভিন্ন ভিন্ন তারিখে বিভিন্ন পরীক্ষা (প্রিলিমিনারী, মূল লিখিত এবং মৌখিক) গ্রহণ করে। পিএসসি’র ফল প্রকাশেরও কোন নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই। পিএসসি’র সুনির্দিষ্ট বা প্রকাশিত কোন পঞ্জিকা বা সময়সূচী না থাকায় পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বা ফল প্রকাশে বিলম্ব হলে তার জন্য তাদের কোন দায় থাকে না বা দায় নিতে হয় না।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) আওতায় বিদ্যমান একীভূত ‘ক্যাডার সার্ভিস’ বাতিল করে সার্ভিসের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা নামকরণের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ২৬টি ক্যাডারকে কমিয়ে ১৩টি প্রধান সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাদের এসব সার্ভিসে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষার আরো একটা করুন দিক হচ্ছে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবং পিএসসি’র সুপারিশ পেয়েও অনেক উত্তীর্ণ প্রার্থীকে নিয়োগ না দেয়া। পূর্বতন সরকারের আমলে প্রতাটি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেক প্রার্থীকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ না দিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে। সেই সরকার তার কোন ব্যাখ্যা বা কারন প্রার্থীদেরকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি। উদাহরণস্বরূপ, ৪১তম বিসিএস-এ পিএসসি সুপারিশ করেছিল ২৫২০ প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য, আর সরকার নিয়োগ দিয়েছিল ২৪৫৩ জনকে । অর্থাৎ বিসিএস-এ উত্তীর্ণ ও পিএসসি’র সুপারিশকৃতদের মধ্য হতে ৬৭ জনকে সরকার নিয়োগই দেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে এবং বিপুল শ্রমসাধ্য ও কঠিন বিসিএস পরীক্ষার পথক্রম শেষ করে এবং ৪ বছরেরও বেশী সময় অপেক্ষা করার পর এই ৬৭ জন প্রার্থী জানতে পেরেছিল বিসিএস পাশ করেও তাঁদের চাকুরী হবার অবকাশ নেই ।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫-০২-০৮ pdf

ক্যাডার নয় বরং সার্ভিস নামকরণ ২০২৫ । ১৩টি সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করেছে

  1. প্রশাসনিক সার্ভিস
  2. বিচারিক সার্ভিস
  3. জননিরাপত্তা সার্ভিস
  4. পররাষ্ট্র সার্ভিস
  5. হিসাব সার্ভিস
  6. নিরীক্ষা সার্ভিস
  7. রাজস্ব সার্ভিস
  8. প্রকৌশল সার্ভিস
  9. শিক্ষা সার্ভিস
  10. স্বাস্থ্য সার্ভিস
  11. কৃষি সার্ভিস
  12. তথ্য সার্ভিস এবং
  13. তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সার্ভিস।

নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত হলে অর্থ সাশ্রয় হবে?

পৃথিবীর দীর্ঘতম নিয়োগ প্রক্রিয়া হচ্ছে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের নিয়োগ প্রক্রিয়া। এর জন্য মূলত দায়ী তথাকথিত একটা স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান- পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতা এবং ফলাফলের অনিশ্চয়তার কারনে বিসিএস পরীক্ষার্থীরা একসাথে তিন-চারটা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বা পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বাধ্য হন। এর ফলে প্রত্যেক বছর বিসিএস পরীক্ষার প্রার্থী সংখ্যাও অহেতুক বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে এর কারনে বিসিএস-এ আগ্রহী তরুন-তরুনীদেরকে যে চরম মানসিক অশান্তি চাপ, দুঃশ্চিন্তা ও ধকল বইতে হয়, যার একটা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষার এই দীর্ঘসূত্রিতার কারনে শুধুমাত্র যে শিক্ষিত তরুন-তরুনীদের সময়, মেধা ও শক্তির অপচয় হচ্ছে তাই নয়, পিএসসি’রও অর্থ ও শ্রমের অপচয় হচ্ছে এবং তার সামর্থ্যেও টান পড়ছে। এই কারনে পিএসসিকে একসাথে তিন চারটা বিসিএস নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু কোনটাই তারা সময়মত শেষ করতে পারে না।

   
   
   

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *