সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অসদাচারণে শাস্তি বিধান রয়েছে। এসব শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান করা হয়। সর্বশেষ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষই কেবল শাস্তি প্রদান করতে পারেন।
কেন সরকার কঠোর হচ্ছে? সরকারের সর্বস্তরে শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ৩০ এ নং বিধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। জনসেবা প্রদান এবং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারি কর্মচারীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সরকারি কর্মচারীদের সুশৃঙ্খল, দায়িত্বশীল ও পেশাদার আচরণের উপর জনপ্রশাসনের সফলতা নির্ভর করে। সম্প্রতি বিভিন্ন পদমর্যাদার কিছু সরকারি কর্মচারীর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানব বন্ধন, কলম বিরতিসহ বিবিধ কর্মসূচি পালনের কারণে সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
সরকারি সিদ্ধান্তে বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না? না। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সরকারের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত, আদেশ বা সংস্কার কার্যক্রমের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার আগেই বিবেচ্য বিষয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরুপ মন্তব্যসহ বিবৃতি প্রকাশ করা হচ্ছে যা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর পরিপন্থি। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ৩০ এ নং বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ” কোনো সরকারি কর্মচারী- (এ) সরকারের অথবা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ পালনে জনসম্মুখে আপত্তি উত্থাপন করিতে বা যে কোনো প্রকারে বাধা প্রদান করিতে পারিবেন না, অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে তাহা করার জন্য উত্তেজিত বা প্ররোচিত করিতে পারিবেন না। (বি) সরকারের বা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ সম্পর্কে জনসম্মুখে কোনো অসন্তোষ্টি বা বিরক্তি প্রকাশ করিতে অথবা অন্যকে তাহা করার জন্য প্ররোচিত করিতে অথবা কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করিতে বা অন্যকে অংশগ্রহণ করার জন্য প্ররোচিত করিতে পারিবেন না।
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি অসদাচরণ গন্য হবে? । সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যে কোনোভাবে অসন্তোষ্টি, ভুল বুঝাবুঝি বা বিদ্বেষের সৃষ্টি করিতে অথবা অন্যকে প্ররোচিত করিতে বা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করিতে পারিবেন না।
অসদাচরণে কি সরকার বরখাস্ত করতে পারে?
হ্যাঁ। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ (সি) সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ পরিবর্তন, বদলানো, সংশোধন বা বাতিলের জন্য অনুচিত প্রভাব বা চাপ প্রয়োগ করিতে পারিবেন না। (ডি) সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বা কোনো শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যে কোনোভাবে অসন্তোষ্টি, ভুল বুঝাবুঝি বা বিদ্বেষের সৃষ্টি করিতে অথবা অন্যকে প্ররোচিত করিতে বা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করিতে পারিবেন না।” সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর যে কোনো বিধান লঙ্ঘন সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর আওতায় অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। কোনো সরকারি কর্মচারী এ বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অসদাচরণের দায়ে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আওতায় আসবেন। সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বহির্ভূত আচরণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।
সরকারী কর্মচারী (শৃংখল ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৩ (বি) অনুযায়ী কোন কর্মচারী অসদাচরণের দায়ের দোষী সাব্যস্ত হইলে এই বিধিমালার সব দণ্ড প্রদান করা যায় তাহা নিম্নরূপবিধি- ৪ (২) অনুযায়ী
লঘুদণ্ড অর্থাৎ (এ) তিরস্কার;
(বি) অন্য কোন কারণে পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি প্রাপ্তির অযােগ্য না হইলে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা।
(সি) অন্য কোন কারণে দক্ষতাসীমা অতিক্রমে অযােগ্য না হইলে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য টাইম স্কেলের দক্ষতাসীমা অতিক্রম বন্ধ রাখা।
(ডি) সরকারী আদেশ অমান্য বা কর্তব্যকর্মে অবহেলায় জন্য সংঘটিত সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতি বা বেতন বা আনুতােষিক হইতে আদায় করা এবং
(ই) টাইম স্কেলের নিম্নধাপে অবনমতিকরণ !
বিবি-৪ (৩) অনুযায়ী গুরুদণ্ড অর্থাৎ
(এ) নিম্নপদ বা নিম্ন টাইম স্কেলে অবনমতিকরণ;
(বি) বাধ্যতামূলক অবসরদান;
(সি) চাকুরী হইতে অপসারণ;
(ডি) চাকুরী হইতে বরখাস্তকরণ।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধিমালা ২০১৮ কার্যকর রয়েছে।