সরকারি কর্মচারীদের ১:৪ বেতন কাঠামো ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপন দাবি ২০২৫ । অবিলম্বে ৯ম পে স্কেল ও বেতনের বৈষম্য দূর করা করতে হবে?
অবিলম্বে বৈষম্যহীন ৯ম পে স্কেল ঘোষণা, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ এবং বেতন গ্রেড ১২টি করার দাবিতে আজ ১৭ অক্টোবর দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সরকারি কর্মচারীরা। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তাঁদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। আন্দোলনকারী কর্মচারীদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. বৈষম্যহীন ৯ম পে স্কেল: আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বৈষম্যহীন ৯ম পে স্কেলের গেজেট প্রকাশ করতে হবে। ২. বেতনের অনুপাত ও সর্বনিম্ন মজুরি: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ নির্ধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ (পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা করতে হবে। ৩. গ্রেড সংখ্যা হ্রাস: বিদ্যমান গ্রেড ২০টি থেকে কমিয়ে মাত্র ১২টি (১-১২ গ্রেড) করতে হবে। ৪. টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল: টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনরায় বহাল করতে হবে, বিশেষ করে নিম্নশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির জন্য এই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। ৫. পেনশন গ্র্যাচুইটি: পেনশন গ্র্যাচুইটি ২০১৫ সালের পূর্বের ন্যায় ১০০% (শতভাগ) উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বেতন কাঠামোতে জীবনযাপন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা দ্রুত তাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করা এখন সময়ের দাবি। দাবি পূরণ না হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী নেতারা।
সরকারি কর্মচারীগণ কেমন বেতন কাঠামো চাইছে?
সরকারি কর্মচারীগণ মূলত একটি বৈষম্যহীন ও যুগোপযোগী বেতন কাঠামো চাইছেন। আপনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের দাবিকৃত বেতন কাঠামোর মূল দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. বেতনের অনুপাত নির্ধারণ: তাঁরা সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ নির্ধারণ করতে চাইছেন। এর অর্থ হলো, সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতনের চার গুণের বেশি হবে না।
২. সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ: তাঁরা সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ (পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা নির্ধারণ করার জোর দাবি জানাচ্ছেন।
৩. গ্রেড সংখ্যা হ্রাস: তাঁরা বিদ্যমান বেতন গ্রেডের সংখ্যা ২০টি থেকে কমিয়ে মাত্র ১২টি (গ্রেড ১ থেকে গ্রেড ১২ পর্যন্ত) করতে চাইছেন। অর্থাৎ, সর্বমোট ১২টি গ্রেড থাকবে।
৪. নতুন পে স্কেল: তাঁরা দ্রুত বৈষম্যহীন ৯ম পে স্কেলের গেজেট প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন, যা ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যকর করার প্রত্যাশা করছেন।
৫. টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল: তাঁরা চান টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড পুনরায় চালু করা হোক, যা নিম্নশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে তাঁরা মনে করেন।
৬. পেনশন গ্র্যাচুইটি: তাঁরা পেনশন গ্র্যাচুইটি ২০১৫ সালের পূর্বের মতো ১০০% (শতভাগ) উত্তোলনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
সংক্ষেপে, তাঁরা একটি ছোট আকারের (১২ গ্রেড), উচ্চতর সর্বনিম্ন বেতনযুক্ত (৩৫,০০০ টাকা), এবং অপেক্ষাকৃত কম বেতন বৈষম্যপূর্ণ (১:৪ অনুপাত) বেতন কাঠামো চাইছেন।
সরকার কি ধরনের বেতন কাঠামো দিতে চাইছে?
সরকারি কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন বর্তমানে নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের জন্য কাজ করছে এবং সরকারের পরিকল্পনা হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের মধ্যেই নবম পে স্কেলের গেজেট প্রকাশ করে তা কার্যকর করা। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকেই সরকারি কর্মচারীরা নতুন কাঠামোর সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
তবে, সরকার বা কমিশনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত বা আনুষ্ঠানিক কোনো বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়নি। কমিশন যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বা প্রাথমিক আলোচনা চলছে, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- বেতনের অনুপাত: বর্তমানে সর্বোচ্চ (গ্রেড-১) ও সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০) বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১। কমিশন নতুন কাঠামোতেও এই অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করছে। কর্মচারী সংগঠনগুলোর ১:৪ অনুপাতের দাবির বিপরীতে কমিশনের আলোচনায় এই অনুপাতটি বহাল রাখার দিকে ঝোঁক দেখা যাচ্ছে।
- গ্রেড সংখ্যা: বর্তমানে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে গ্রেডের সংখ্যা কমানোর প্রাথমিক আলোচনা চলছে। এটি ১২টি বা ১৫টি হতে পারে।
- বেতন বৃদ্ধির হার: বিদ্যমান পে স্কেলের তুলনায় গড়ে কী হারে বেতন বাড়ানো হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। একটি সূত্র অনুযায়ী, বর্তমান স্কেলের মূল বেতন প্রায় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে।
- ভাতা বৃদ্ধি: কমিশন ইতোমধ্যে চিকিৎসা ভাতা এবং শিক্ষণ ভাতার মতো কয়েকটি ভাতা বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে অবসরের পরেও কর্মচারীরা মাসে $১,৫০০$ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান, যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
- টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড: ২০১৫ সালের পে স্কেলে বাতিল হওয়া সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল করার কোনো ইঙ্গিত সরকারের পক্ষ থেকে নেই। বরং বর্তমান কমিশন পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার প্রস্তাব দিতে পারে।
- অন্যান্য বিষয়: কমিশন বিশেষায়িত চাকরির জন্য আলাদা বেতনকাঠামো, স্বাস্থ্যবীমা (Health Insurance), মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি এবং কাজের মান মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেতন কাঠামো প্রণয়নের মতো বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করছে।
সংক্ষেপে, সরকারের লক্ষ্য হলো ২০২৬ সালের প্রথম দিকে একটি নতুন, যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী পে স্কেল কার্যকর করা, যা বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।




