পে-স্কেল I গেজেট । প্রজ্ঞাপন । পরিপত্র

পুলিশে বড় ধরনের পদোন্নতি ২০২৫ । সশস্ত্র ও নিরস্ত্র মিলিয়ে ৬২ পরিদর্শক ‘সহকারী পুলিশ সুপার’ পদে উন্নীত?

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে সশস্ত্র এবং নিরস্ত্র শাখার মোট ৬২ জন পুলিশ পরিদর্শককে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে “সহকারী পুলিশ সুপার” পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাকরি পুলিশ অধিদপ্তরে ন্যস্ত করা হয়েছে। এই আদেশ জনস্বার্থে অবিলম্বে কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপনের বিবরণ: প্রজ্ঞাপন দুটি ০৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, যা ২১ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ, তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন দুটি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মো. মাহবুবুর রহম কর্তৃক স্বাক্ষরিত।

পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা:

১. পুলিশ পরিদর্শক (সশস্ত্র) থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (২৯ জন): পুলিশ পরিদর্শক (সশস্ত্র) পদে কর্মরত ২৯ জন কর্মকর্তাকে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

  • উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তাবৃন্দ (ক্রমিক নং সহ):
    • জনাব মোঃ নুরুল ইসলাম, বিপি-৬৮৮৭০৯৪৯৮৩, সিলেট জেলা
    • জনাব মোঃ নুরুল হক, বিপি-৬৭৮৫০৯৭১৯৭, নারায়ণগঞ্জ জেলা
    • জনাব মো. রবিউল ইসলাম, বিপি-৬৭৮৫০৭৩৮৫১, ডিএমপি, ঢাকা
    • জনাব মোঃ জিল্লুর রহমান, বিপি-৬৮৮৯০০৪০৭৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
    • জনাব হান্নান হাওলাদার, বিপি-৭১৯১০৪৮০৭৪, কেএমপি, খুলনা
    • জনাব মো. আইয়ুব আলী, বিপি নম্বর-৬৬৮৫০৩৪৬৪৬, মুন্সীগঞ্জ জেলা সংযুক্ত পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা
    • জনাব মোঃ এমরান আলী খাঁন, বিপি-৬৭৮৬০১২২২৭, এসপিবিএন-১
    • জনাব মোঃ সেলিম হোসেন, বিপি-৬৭৮৯০৮৩৯৬৭, র‍্যাব-৩
    • জনাব মো. মোনাক্কা, বিপি-৭৩৯১০০২১১২, ডিএমপি, ঢাকা

২. পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (৩৩ জন): পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদে কর্মরত ৩৩ জন কর্মকর্তাকে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

  • উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তাবৃন্দ (ক্রমিক নং সহ):
    • জনাব মোঃ মাহবুবুল আলম, বিপি-৬৭৯০০৪১৪১৩, সিআইডি
    • জনাব আবদুল্লাহ আল মামুন ভূঁইয়া, বিপি-৬৮৯০০৭০৬০২, পিবিআই
    • জনাব মোহাম্মদ আরিফ ইকবাল, বিপি-৬৯৯৩১১৮৯৮১, এন্টি টেররিজম ইউনিট
    • জনাব শেখ মোঃ মঈন উদ্দিন চৌধুরী, বিপি-৭১৯৩১১৪৮৪৭, পুলিশ অধিদপ্তর, ঢাকা
    • জনাব মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, বিপি-৭১৯৩০১০৪১১, এসবি
    • জনাব মিতশ্রী বড়ুয়া, বিপি-৬৭৯৩০৩০৯৯৮, সিআইডি
    • জনাব মোঃ নুর হোসেন খন্দকার, বিপি-৬৭৯৩০৬৫৫৮১, ডিএমপি, ঢাকা
    • জনাব আব্দুল্লাহ আল নজরুল, বিপি-৬৭৯৩০১০৪৮৪, ডিএমপি, ঢাকা
    • জনাব চক্রধর রায়, বিপি-৬৮৯৪১০৮৯৭৪, বিপিএ, সারদা, রাজশাহী

যোগদানের নির্দেশনাবলী: পদোন্নতিপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সিনিয়র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর যোগদান পত্র দাখিল করতে বলা হয়েছে।

পুলিশে বড় ধরনের পদোন্নতি ২০২৫

একজন পুলিশ পরিদর্শকের কাজ কি?

পুলিশ পরিদর্শক (Inspector of Police) বাংলাদেশ পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদা। এটি নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে সাধারণত সর্বোচ্চ পদ, যা প্রথম শ্রেণির (First Class) পদমর্যাদার সমতুল্য। পুলিশ পরিদর্শককে তার কর্মক্ষেত্র অনুসারে মূলত দুটি প্রধান ভূমিকায় দেখা যায়:

১. থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (Officer-in-Charge – OC): সাধারণত একটি থানার প্রধান হিসেবে একজন নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক দায়িত্ব পালন করেন। এটি তার কাজের সবচেয়ে পরিচিত দিক। ২. বিশেষায়িত ইউনিট বা দপ্তরে: বিশেষায়িত বিভাগ যেমন ডিবি (Detective Branch), সিআইডি (CID), এসবি (Special Branch), ট্রাফিক বিভাগ, বা জেলা/মহানগর পুলিশের বিভিন্ন কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ শাখায়ও পরিদর্শকরা দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশ পরিদর্শকের প্রধান কাজ ও দায়িত্বসমূহ নিম্নরূপ:

১. থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (OC) হিসেবে প্রধান দায়িত্ব:

  • আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও তদারকি: থানার আওতাধীন এলাকার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।
  • মামলা ও তদন্ত (Investigation): থানায় রুজুকৃত সকল মামলার কার্যক্রম তদারকি করা এবং গুরুতর মামলার ক্ষেত্রে নিজেই তদন্ত পরিচালনা করা। তিনি নিশ্চিত করেন যে তদন্ত সঠিক ও দ্রুত গতিতে চলছে।
  • অপরাধ দমন: অপরাধমূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধ ও অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা।
  • প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ: থানার সকল পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাজের তত্ত্বাবধান ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।
  • তথ্য সংগ্রহ ও সমন্বয়: তার এলাকার গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করা।
  • জনসংযোগ: সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করা।

২. বিশেষায়িত ইউনিটে দায়িত্ব:

  • গোয়েন্দা কাজ (CID/SB/DB): গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে থাকলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ, যেমন- খুন, ডাকাতি, অপহরণ, দুর্নীতি বা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের জটিল ও স্পর্শকাতর মামলার তদন্তে নেতৃত্ব দেন।
  • ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা (Inspector, Traffic): ট্রাফিক পরিদর্শক হিসেবে থাকলে তিনি একটি নির্দিষ্ট এলাকার ট্রাফিক আইন প্রয়োগ, যানজট নিরসন, এবং ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম তদারকি করেন।
  • সশস্ত্র পুলিশ (Inspector, Armed): সশস্ত্র পরিদর্শকরা সাধারণত রিজার্ভ ফোর্স, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন এবং তাদের অধীনস্থ ফোর্সকে নেতৃত্ব দেন।
  • মনিটরিং ও প্রশাসন: পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স বা রেঞ্জ অফিসে কর্মরত পরিদর্শকরা প্রশাসনিক বা অপারেশনাল কাজের তদারকি ও ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করেন।

সংক্ষেপে, একজন পুলিশ পরিদর্শক হলেন মাঠ পর্যায়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। তিনি একদিকে যেমন একটি অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সরাসরি দায়িত্বে থাকেন, তেমনি অন্যদিকে তিনি পুলিশ বাহিনীর প্রশাসনিক ও তদন্তমূলক কাজ পরিচালনায় মধ্যম সারির নেতা হিসেবে কাজ করেন।

বাংলাদেশে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরের বেতন কাঠামো সরকারি পে-স্কেল (জাতীয় বেতন স্কেল) অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। যেহেতু পুলিশ ইন্সপেক্টর প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদমর্যাদার কর্মকর্তা, তাই তারা ৯ম গ্রেডের বেতন পান।

সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী, ৯ম গ্রেডের মূল বেতন শুরু হয় ২২,০০০ টাকা থেকে এবং সর্বোচ্চ ৫৩,০৬০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় (সময়ভিত্তিক পদোন্নতি বা ইনক্রিমেন্টের মাধ্যমে)।

এই মূল বেতনের সাথে আরও কিছু ভাতা যোগ হয়, যা একজন ইন্সপেক্টরের মোট প্রাপ্তি বাড়িয়ে তোলে। প্রধান ভাতাগুলো হলো:

  • বাড়ি ভাড়া: এটি ইন্সপেক্টরের পদায়নকৃত এলাকার উপর নির্ভর করে। যেমন:
    • ঢাকা মহানগরীতে মূল বেতনের ৫০%
    • অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪০%
    • জেলা শহরে ৩৫%
    • অন্যান্য এলাকায় ৩০%
  • চিকিৎসা ভাতা: মাসিক ১৫০০ টাকা (স্থির)।
  • টিফিন/যাতায়াত ভাতা: পদের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ।
  • ধোলাই ভাতা: পোশাক পরিষ্কারের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ।
  • শিক্ষা সহায়ক ভাতা (যদি থাকে): সন্তানদের পড়াশোনার জন্য।
  • বিশেষ ভাতা/ঝুঁকি ভাতা (Risk Allowance): পুলিশ সদস্যদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাতা, যা তাদের কাজের ঝুঁকির জন্য প্রদান করা হয়। এর পরিমাণ মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ ইন্সপেক্টরের সম্ভাব্য মাসিক মোট বেতন (অনুমানিক):

  • মূল বেতন: ২২,০০০ টাকা (৯ম গ্রেডের শুরু)
  • বাড়ি ভাড়া (যদি ঢাকাতে হয়): ২২,০০০ এর ৫০% = ১১,০০০ টাকা
  • চিকিৎসা ভাতা: ১,৫০০ টাকা
  • ঝুঁকি ভাতা: (ধরা যাক মূল বেতনের ৩০%) = ৬,৬০০ টাকা
  • অন্যান্য ভাতা: (আনুমানিক) ১,০০০ – ২,০০০ টাকা

মোট আনুমানিক বেতন: ২২,০০০ + ১১,০০০ + ১,৫০০ + ৬,৬০০ + ১,৫০০ = ৪২,৬০০ টাকা (প্রায়)

অভিজ্ঞতা এবং ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির সাথে সাথে মূল বেতন এবং আনুষঙ্গিক ভাতাগুলোও বাড়তে থাকে। মনে রাখা উচিত যে এটি একটি আনুমানিক হিসাব এবং বাস্তব প্রাপ্তি কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের কর্তন (যেমন ভবিষ্য তহবিল, কল্যাণ তহবিল) বাদ যাওয়ার পর।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *