আগামী জুলাই হতেই ষ্বশাসিত ও রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রত্যয় পেনশন স্কীম চালু হচ্ছে- এরই মাঝে সংসদে ঘোষণা করা হয়েছে যে, প্রত্যয় স্কিমটি পিওর সরকারি কর্মচারীদের জন্যও আগামী বাজেটেই চালু হতে পারে–সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রত্যয় স্কীম ২০২৪
রাজস্বখাতেও পেনশন থাকবে না? পেনশন থাকবে কিন্তু গতানুগতিক পেনশন থাকবে না। সরকারি রাজস্বখাতগুলোর প্রতিষ্ঠানেরও গ্র্যাচুইটি, মাসিক পেনশন, জিপিএফ, লাম্পগ্র্যান্ট এগুলো থাকবে না। সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞগণ। প্রত্যয় পেনশনটি চালু হয় তবে বর্তমানে যারা কর্মরত আছেন তারা প্রচলিত নিয়মেই পেনশন, গ্র্যাচুইটি, লাম্পগ্র্যান্ট, জিপিএফ ইত্যাদি পাবেন। তবে নতুন স্কীম কার্যকর হওয়ার পর নতুন যোগদানকারীগণ আর প্রচলিত পেনশন স্কীমে থাকবে না।
যা মূল বেতন থেকে কাটা হবে তাই কি ফেরত দেওয়া হবে? না। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা (যা কম হয় তা) কাটা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে। মোট কথা আপনি যা কাটাবেন সরকার সেই পরিমাণ অর্থ অর্থাৎ আপনার দ্বিগুণ টাকা জমা হবে। এই ফান্ড কিছুটা জিপিএফ ফান্ড এর মত কিন্তু জিপিএফ এর টাকা পুরোটা তোলা যায় কিন্তু এখানে জমাকৃত কোন টাকাই ভবিষ্যতে তোলা যাবে না, বরং মাসিক পেনশন হিসেবে পাওয়া যাবে। এই ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য মুনাফা এবং চাঁদা হিসাবে জমাকৃত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন দেওয়া হবে।
মাসে ৩ হাজার করে কাটালে কত টাকা মাসিক পেনশন পাওয়া যাবে? এটি নির্ভর করে আপনি কত বছর চাকরি করছেন সেটির উপর। আপনি যদি ২৫ বছর চাকরি করেন অথবা ২৫ বছর পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন তবে আপনি প্রতি মাসে ২৩,৮৬৪ টাকা হারে পেনশন পেতে থাকবেন। প্রচলিত পেনশনে ৫% হারে প্রতিবছর বৃদ্ধি পেলেও এখানে কোন বৃদ্ধি পাবে না। আপনি চাকরি শেষে লাম্পগ্র্যান্ট, গ্র্যাচুইটি, জিপিএফ এ জমাকৃত টাকা পেলেও এগুলো আর বিদ্যমান থাকবে না। এতে করে সরকারকে বাজেট হতে আর বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও গ্র্যাচুইটির জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে না।
বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত হতে হবে? হ্যাঁ। সরকারি চাকরিজীবীদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা আসতে পারে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। তাদেরকে ‘প্রত্যয়’ স্কিমে যুক্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে। গত ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থবিভাগের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ভবিষ্যতে সরকারি চাকরিজীবীদের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে বলে অর্থবিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। সূত্র: টিবিএস
সর্বজনীন প্রত্যয়ন পেনশন স্কীম ২০২৪ / শিঘ্রই সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও এটি চালু হচ্ছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান বলতে অধিদপ্তর, দপ্তর, মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, আর্মি, বর্ডার গার্ড ইত্যাদি সকল সরকারি নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়।
প্রত্যয় পেনশন স্কিম নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন
সর্বজনীন পেনশন ২০২৪ । ৫০% ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে?
- সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী কর্মীগণও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
- পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বৎসর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন।
- চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
- চাঁদাদাতা তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবে।
- পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
- নিম্ন আয়সীমার নিচে থাকা নাগরিকগণের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে প্রদান করবে।
- আপাততঃ সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ সর্বজনীন পেনশনের আওতা বহির্ভূত হবেন। তবে ক্রমান্বয়ে তাদেরকে এ ব্যবস্থার অধীনে আনয়ন করা হবে।
- সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদার হার এবং স্কিম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
- পেনশনারদের প্রদত্ত চাঁদার টাকা বিনিয়োগ বিধিমালার আওতায় সর্বোচ্চ নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য রিটার্ণের ভিত্তিতে পেনশনের মাসিক পরিমাণ নির্ধারিত হবে
সর্বজনীন পেনশন পাওয়ার জন্য কি দৌড়াদৌড়ি করতে হবে?
না। বিনিয়োগ হতে প্রাপ্য মুনাফার হার বৃদ্ধি পেলে মাসিক পেনশনের পরিমান আরো বৃদ্ধি পাবে। অধিকন্তু, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় খরচ সরকার কর্তৃক নির্বাহ করা হবে বিধায় চাঁদাদাতার কর্পাস হিসাবে জমাকৃত অর্থ এবং বিনিয়োগলব্ধ আয় সম্পূর্ণ চাঁদাদাতার অ্যানুইটি হিসাবায়নের মাধ্যমে মাসিক পেনশন নির্ধারিত হবে। জমাকৃত চাঁদার উপর বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্য পেনশন আয়করমুক্ত হবে। স্কিমটি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এটি শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। এ স্কিমে নিবন্ধিত কর্মচারী পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পরবর্তী মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্যাংক একাউন্টে মাসিক পেনশনের অর্থ পেতে থাকবেন, যা তাকে মোবাইল এসএমএস-এর মাধ্যমে অবহিত করা হবে। এক্ষেত্রে তাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোন দপ্তরে যাওয়ার বা কোন প্রকার প্রমানক দাখিলের প্রয়োজন হবে না। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, প্রত্যয় স্কিমটি নতুন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য আকর্ষনীয় এবং আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর।
প্রত্যয় পেনশন স্কিম ২০২৪ । সরকারি প্রতিষ্ঠান বাদে গতানুগতিক পেনশন স্কিম থাকছে না