সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি’র সুবিধা: জানুন বিস্তারিত নিয়মাবলী
সরকারি দায়িত্ব পালনকালে কোনো কর্মচারী আহত বা দুর্ঘটনার শিকার হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে ‘বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি’র (Special Disability Leave) বিধান রেখেছে সরকার। বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস (BSR) এবং নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা ১৯৫৯-এর আওতায় এই বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। সম্প্রতি সরকারি ছুটির নিয়মাবলী ২০২৫-এর আলোচনায় এই বিষয়টি আবারও গুরুত্বের সাথে সামনে এসেছে।
বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি কী?
সরকারি কোনো কর্মচারী যদি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে অথবা পদের কারণে উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অক্ষম হয়ে পড়েন, তবে তাকে এই ছুটি প্রদান করা হয়। এটি সাধারণ অর্জিত ছুটির বাইরে একটি বিশেষ সুবিধা।
ছুটির মূল শর্ত ও মেয়াদ:
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই ছুটি মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়:
মেডিকেল বোর্ডের প্রয়োজনীয়তা: এই ছুটি কেবল মেডিকেল বোর্ডের সার্টিফিকেটের ভিত্তিতেই মঞ্জুর করা যায়। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী যে সময়ের জন্য অক্ষমতা নির্দিষ্ট করা হবে, সেই সময়ের জন্যই ছুটি কার্যকর হবে।
সর্বোচ্চ মেয়াদ: একজন সরকারি কর্মচারী তার পুরো চাকরি জীবনে এক বা একাধিকবার এই ছুটি নিতে পারেন, তবে মোট ছুটির মেয়াদ কোনোভাবেই ২৪ মাস বা ২ বছরের অধিক হবে না।
আবেদনের সময়সীমা: সাধারণত দুর্ঘটনা বা আঘাত পাওয়ার ৩ মাসের মধ্যে আবেদন করতে হয়। তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে এই সময়সীমা শিথিল করতে পারেন।
ছুটি হিসাবের বাইরে: এই ছুটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি কর্মচারীর মূল ছুটির হিসাব (Earned Leave balance) থেকে বিয়োগ করা হয় না।
বেতন ও অন্যান্য সুবিধা:
বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটিকালীন সময়ে বেতন প্রদানের ক্ষেত্রেও বিশেষ নিয়ম রয়েছে: ১. প্রথম ৪ মাস পর্যন্ত পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি ভোগ করা যায়। ২. পরবর্তী সময়ের জন্য (যদি প্রয়োজন হয়) অর্ধ-গড় বেতনে ছুটি পাওয়া যায়।
কারা এই সুবিধা পাবেন না?
বিধিমালা অনুযায়ী, যদি কোনো কর্মচারী তার নিজের গাফিলতি বা অসদাচরণের কারণে আহত হন, তবে তিনি এই বিশেষ ছুটির জন্য বিবেচিত হবেন না। এছাড়া চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখে থাকা কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
গুরুত্ব:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী বিশেষ করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য এই বিধিমালা একটি বড় সুরক্ষা কবচ। এতে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হওয়া কর্মচারীরা অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ে সুচিকিৎসার সুযোগ পান।

সব দপ্তরের কর্মচারীদের জন্য কি এ ছুটি প্রযোজ্য?
হ্যাঁ, বাংলাদেশের প্রায় সকল স্থায়ী সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদের জন্যই এই ছুটি প্রযোজ্য।
তবে এটি কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু আইন বা বিধিমালার ওপর নির্ভর করে। নিচে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. সাধারণ সিভিল কর্মচারী (সকল মন্ত্রণালয় ও দপ্তর)
‘নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৫৯’ (Prescribed Leave Rules, 1959) অনুযায়ী, বাংলাদেশের সকল সিভিল সরকারি কর্মচারী (মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর এবং মাঠ পর্যায়ের অফিস) এই বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটির আওতায় পড়েন। এটি আপনার দেওয়া নথিতেও উল্লেখ করা হয়েছে।
২. স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান
অধিকাংশ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা (যেমন: সিটি কর্পোরেশন, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বা বোর্ড) তাদের নিজস্ব চাকরির প্রবিধানমালায় সরকারি ছুটির নিয়ম অনুসরণ করে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রবিধানমালায় এই ছুটির কথা সরাসরি বলা না থাকে, তবে তারা সাধারণত ‘সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত আদেশ’ অনুযায়ী এই সুবিধা প্রদান করে।
৩. শৃঙ্খলা বাহিনী (পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি)
পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দপ্তরের কর্মচারীরা এই সুবিধার সবচেয়ে বড় গ্রহীতা। তাদের ক্ষেত্রে এই ছুটির প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে এবং তারা সার্ভিস রুলস অনুযায়ী এটি ভোগ করতে পারেন।
৪. সামরিক বাহিনী
সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর জন্য নিজস্ব বিশেষ আইন ও ছুটির বিধিমালা রয়েছে। তাদের অক্ষমতাজনিত ছুটির ধরন এবং মেয়াদ সিভিল প্রশাসনের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে তাদের জন্যও বিশেষ ছুটির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ নোট: অস্থায়ী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে
একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি যে, অস্থায়ী (Temporary) কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এই ছুটি মঞ্জুরের শর্ত কিছুটা কঠিন। যদি কোনো অস্থায়ী কর্মচারী ৩ বছরের কম সময় ধরে চাকরিতে থাকেন, তবে তাকে এই ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনার প্রয়োজন হয়। তবে স্থায়ী (Permanent) পদের সকলের জন্যই এটি একটি বিধিবদ্ধ অধিকার।



