সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তাদের কর্মজীবন পরিকল্পনার (Career Planning) অংশ হিসেবে উচ্চশিক্ষাকে সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। উচ্চশিক্ষার অনুমোদন কার্যক্রমকে সহজীকরণের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিবেচনায় প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মচারীদের দেশের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত এ নীতিমালা জারি করা হলো।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ খ্রি: তারিখে সরকারি/আধাসরকারি/বিধিবদ্ধ/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীদের জন্য দেশের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত সরকারি/আধাসরকারি/বিধিবদ্ধ/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তাদের কর্মজীবন পরিকল্পনার (Career Planning) অংশ হিসেবে উচ্চশিক্ষাকে সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। উচ্চশিক্ষার অনুমোদন কার্যক্রমকে সহজীকরণের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিবেচনায় প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মচারীদের দেশের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত এ নীতিমালা জারি করা হলো।
০২। নীতিমালার উদ্দেশ্যঃ
(ক) কর্মচারীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি;
(খ) কর্মচারীদের আবেদন বিবেচনার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাকে উৎসাহিতকরণ;
(গ) জনবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পেশাদারি মনোভাবের বিকাশ সাধন।
০৩। নীতিমালার আওতাঃ
সরকারি/আধাসরকারি/বিধিবদ্ধ/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীদের দেশের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
০৪। উচ্চশিক্ষাঃ
পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য কর্মচারীর Service path অথবা তার Academic Background সংশ্লিষ্ট শিক্ষা, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা, মাস্টার্স/এম.এস./এম.ফিল., পিএইচ.ডি, এবং পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ উচ্চশিক্ষা হিসেবে গণ্য হবে।
০৫। প্রেষণঃ
(ক) পূর্ণবৃত্তিতে সম্পাদনযোগ্য উচ্চশিক্ষা কোর্সের সম্পূর্ণ মেয়াদের জন্য কোন কর্মচারীকে স্বাভাবিক নিয়মে প্রেষণ মঞ্জুর করা যাবে। দেশে পাবলিক/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রাপ্ত ফেলোশিপকে পূর্ণবৃত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত কোন প্রকল্প হতে অথবা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশী/বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত দাতাসংস্থা/সরকার অনুমোদিত ফাউন্ডেশন হতে প্রাপ্ত বৃত্তিও পূর্ণবৃত্তি হিসেবে গণ্য হবে। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ বৃত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।
(খ) কোন কর্মচারী সমগ্র চাকরি জীবনে উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ০৫ (পাঁচ) বছর (দেশে বা বিদেশে) প্রেষণ গ্রহণের সুযোগ পাবেন। কোর্সের প্রয়োজন অনুযায়ী একাদিক্রমে (in continuation) সর্বোচ্চ ০৪ (চার) বছর এবং পরবর্তীতে ০১ (এক) বছর পর্যন্ত মেয়াদ বর্ধিত করে এ জাতীয় প্রেষণ প্রদান করা যাবে। প্রেষণ প্রাপ্তির জন্য কর্মচারীর চাকরিকাল ০২ বছর হতে হবে এবং চাকরি স্থায়ীকরণের শর্তাদি পূরণ হতে হবে।
(গ) কোন কর্মচারী শিক্ষাছুটি অথবা শিক্ষাছুটির ধারাবাহিকতায় অসাধারণ ছুটির অধীনে উচ্চশিক্ষা আরম্ভ করলেও পরবর্তীতে কোন বৃত্তি প্রাপ্ত হলে শিক্ষাছুটি অসাধারণ ছুটির অবশিষ্ট অংশের জন্য অথবা কোর্স চলাকালীন পরবর্তী কোনো সময়ে কোর্স শুরুর তারিখ হতে পূর্ণবৃত্তি প্রদান করা হলে ভূতাপেক্ষভাবে কোর্স শুরুর তারিখ হতে প্রেষণ মঞ্জুর করা যাবে।
(ঘ) কোন কর্মচারীকে প্রেষণ বা শিক্ষাছুটিতে শুধু একটি মাস্টার্স কোর্সের অনুমোদন দেয়া যাবে।
(ঙ) কোন কর্মচারীর পিএইচ.ডি. ডিগ্রি থাকলে দেশের অভ্যন্তরে আর কোন পিএইচ.ডি. ডিগ্রির জন্য আবেদন বিবেচনা করা হবে না।
(চ) চাকরিতে যোগদানের পূর্বে কোন কর্মচারী উচ্চশিক্ষারত থাকলে তাকে যোগদানের সময় প্রলম্বিত করে এবং অসাধারণ ছুটি প্রদান করে উচ্চশিক্ষা চলমান রাখার অনুমতি দেয়া যাবে।
০৬।শিক্ষাছুটিঃ
প্রচলিত বিধান অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষাছুটি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বছর পর্যন্ত মঞ্জুর করা যাবে। এ ছুটি প্রেষণের সাথেও যে কোন মেয়াদে দেয়া যাবে। প্রেষণ শেষ হওয়ার পরেও প্রয়োজন হলে প্রেষণের সাথে সংযুক্ত করে শিক্ষাছুটি মঞ্জুর করা যাবে।
০৭।কর্মকালীন উচ্চশিক্ষাঃ
দেশের অভ্যন্তরে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা কর্মকালীন উচ্চশিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের পর প্রেষণে/শিক্ষাছুটিতে বা কর্মকালীন কোন কর্মচারীর একটি মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য অনুমোদন দেয়া যাবে। তবে অতিরিক্তভাবে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত Professional কোর্স/ডিগ্রির (এল.এল.বি/সি.এ. ইত্যাদি) অনুমোদন দেয়া যাবে।
০৮। দূরশিক্ষণঃ
দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে (Distance Learning) উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সাধারণতঃ নিরুৎসাহিত করা হবে। তবে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন- উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের আবেদন বিবেচনা করা যাবে।
০৯। কর্মচারীর বয়সঃ
অনুচ্ছেদ ৫ এর আওতায় আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে কর্মচারীর কোর্স সমাপ্তির শেষ তারিখ হতে পি.আর.এল-এ গমনের তারিখ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ বছর সময় থাকতে হবে।
১০। অনুমোদন প্রক্রিয়াঃ
(ক) নির্ধারিত ছকে (পরিশিষ্ট-ক) প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে।
(খ) প্রেষণ/শিক্ষা/অসাধারণ ছুটিতে সম্পাদনযোগ্য ও কর্মকালীন উচ্চশিক্ষার অনুমোদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রদান করবে। যে সব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করার জন্য কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি প্রয়োজন হয় সেসব ক্ষেত্রে আগ্রহী কর্মচারীর নিয়ন্ত্রণকারী কর্মচারী পূর্বানুমতি প্রদান করবেন।
১১। বিবিধঃ
(ক) সাধারণভাবে কোর্সে যোগদানের ১০ (দশ) কার্যদিবস পূর্ব হতে এবং কোর্স সমাপ্তির পর ০৫ (পাঁচ) কার্যদিবস পর্যন্ত কর্মচারীর শিক্ষাছুটির মেয়াদে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বর্ধিত মেয়াদসহ) অথবা প্রেষণ আদেশপ্রাপ্ত কর্মচারী তার প্রেষণ মেয়াদে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (Officer on Special Duty) হিসেবে তার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগ বা তাদের নির্দেশিত কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন।
(খ) উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত অবস্থায় অধ্যয়নসংশ্লিষ্ট কাজে বিদেশ গমনের প্রয়োজন হলে প্রচলিত নিয়মে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের নিকট হতে প্রয়োজনীয় পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।
(ঘ) কোন ভিন্নরূপ আদেশ বা বিশেষ কোন কারণ ছাড়া উচ্চশিক্ষা সমাপ্তির সকল ক্ষেত্রে কর্মচারীর প্রাপ্ত সনদ তার প্রত্যাবর্তনের ০১ (এক) বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে দাখিল করতে হবে।
(ঙ) সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে বা তাদের ব্যবস্থাপনায় কোন কোর্সের একটি অংশ যদি বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ বিদেশে কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে সমাপনযোগ্য হয়, সে ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুযায়ী প্রেষণ/শিক্ষাছুটি/ অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করা যাবে।
(চ) উচ্চশিক্ষা সমাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পঠিত বিষয় এবং অর্জিত জ্ঞানের উপযুক্ত প্রায়োগিক ক্ষেত্রে পদায়ন বিষয়ে স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
(ছ) কর্মকালীন শিক্ষা ব্যতীত কোন কর্মচারী প্রেষণ/শিক্ষাছুটি ভোগ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কমপক্ষে ০২ (দুই) বছর চাকরি না করে পদত্যাগ করলে তিনি কোর্সে অধ্যয়ন/গবেষণারত থাকাকালে যে পরিমাণ বেতন-ভাতা প্রাপ্ত হয়েছেন তা সরকারকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। অন্যথায় তা সরকারি দাবি হিসেবে তার নিকট হতে আদায়যোগ্য হবে।
(জ) প্রেষণ/শিক্ষাছুটি/অসাধারণ ছুটি প্রাপ্যতা সাপেক্ষে ধারাবাহিকভাবে প্রদান করা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোন কর্মচারী প্রশিক্ষণ বা উচ্চশিক্ষার জন্য একসাথে ৫ (পাঁচ) বছরের বেশি প্রেষণ/শিক্ষাছুটি/ অসাধারণ ছুটি অথবা ছুটি ছাড়া তার নিজ পদ হতে যদি অনুপস্থিত থাকেন তবে তার ক্ষেত্রে বি.এস,আর, ৩৪ এর বিধান প্রযোজ্য হবে।
(ঝ) দেশের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে ইতঃপূর্বে জারিকৃত কোন আদেশ, পরিপত্র/নীতিমালার কোন অংশ এই নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই নীতিমালা প্রাধান্য পাবে এবং এই নীতিমালা প্রয়োগে কোন জটিলতা দেখা দিলে অথবা অস্পষ্টতা থাকলে সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
১২। জনস্বার্থে জারিকৃত এ নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য দেশের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক নীতিমালা-২০১৫: ডাউনলোড