বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

৯ম পে স্কেল ২০২৫ । সশস্ত্র বাহিনীর পে-কমিশনের কাছে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার জোর দাবি?

সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৩০০টি ইউনিট থেকে পে-কমিশনের কাছে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকাসহ বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর এই রিপোর্ট যাচাই-বাছাই করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে– ৯ম পে স্কেল ২০২৫

কেন সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩৫,০০০ টাকা হওয়া উচিত? সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের জন্য নতুন পে কমিশন গঠিত হয়েছে। এই কমিশনকে আগামী ৩১ অক্টোবর এর মধ্যে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ৩০০টি ইউনিটসহ বিভিন্ন কর্মচারী ফেডারেশন সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছে। তাদের এই দাবির পেছনে বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে। ২০১৫ সালে সর্বশেষ পে স্কেল দেওয়া হয়েছিল, যেখানে সর্বনিম্ন মূল বেতন ছিল ৮২৫০ টাকা। সে অনুযায়ী ২০২০ সালে নতুন পে স্কেল হওয়ার কথা ছিল এবং তখন বেতন দ্বিগুণ হয়ে কমপক্ষে ১৬,৫০০ টাকা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এরপর ২০২৫ সালে বর্তমান পে কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাই, যদি এই নিয়ম মেনে চলা হয়, তাহলে ২০২০ সালের ১৬,৫০০ টাকা এবং ২০২৫ সালের দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩২,৫০০ টাকা সর্বনিম্ন বেতন হওয়া উচিত। এখন এই অঙ্কের সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাজারের চাহিদার দিক বিবেচনা করে ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা যুক্তিসঙ্গত।

মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায়নি কি?  গত ১০ বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। বাড়িভাড়া, খাদ্যদ্রব্য, চিকিৎসা খরচ এবং শিক্ষা খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ৮২৫০ টাকা দিয়ে ২০১৫ সালে যে জীবনযাপন সম্ভব ছিল, এখন ১৬,৫০০ টাকা দিয়েও তা কঠিন। দ্রব্যমূল্যের এই লাগামহীন বৃদ্ধি কর্মচারীদের আর্থিক চাপ বাড়াচ্ছে। তাই, জীবনযাত্রার এই বাড়তি খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ৩৫,০০০ টাকা বেতন অপরিহার্য। যদি একজন কর্মচারীর বেতন তার মৌলিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট না হয়, তবে তিনি মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েন। আর্থিক দুশ্চিন্তা কাজের প্রতি তার মনোযোগ কমিয়ে দেয়। ভালো বেতন পেলে কর্মচারীরা আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেন। এতে দেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা বাড়ে এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। তাই, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার দাবির পাশাপাশি অন্যান্য ভাতাও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যাতায়াত, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ভাতা। এই ভাতাগুলোও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া জরুরি। সশস্ত্র বাহিনী এবং কর্মচারী ফেডারেশনের এই প্রস্তাব যদি সরকার বিবেচনা করে, তবে তা দেশের কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। এতে একদিকে যেমন কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, তেমনি দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতিও বাড়বে বলে আশা করা যায়।

দশ বছর পর নতুন পে স্কেল জারি হলে সর্বনিম্ন মূল বেতন ১৯,৮০০ টাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং সার্বিক দিক বিবেচনা করে সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩৫,০০০ টাকা হওয়া উচিত। ১০ বছর পর নতুন পে স্কেলে ১৯,৮০০ টাকা মূল বেতন গ্রহণযোগ্য নয়, দাবি ৩৫,০০০ টাকার১০ বছর পর নতুন পে স্কেল জারি হতে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনী এবং বিভিন্ন কর্মচারী ফেডারেশন সর্বনিম্ন মূল বেতন ১৯,৮০০ টাকা করার প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই অঙ্কটি যথেষ্ট নয়। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সর্বনিম্ন মূল বেতন কমপক্ষে ৩৫,০০০ টাকা হওয়া উচিত। ২০১৫ সালের পে স্কেলে সর্বনিম্ন মূল বেতন ছিল ৮,২৫০ টাকা। এরপর পাঁচ বছর পর পর নতুন পে স্কেল কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, যা ২০২০ সালে হয়নি। এখন ১০ বছর পর নতুন পে স্কেল আসছে। তাই, বর্তমান বাজার মূল্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন-কাঠামো ঢেলে সাজানো অপরিহার্য। ১৯,৮০০ টাকা বেতন কেবল ২০১৫ সালের ৮,২৫০ টাকার সামান্য বৃদ্ধি, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তাব বেতন কাঠামো ২০২৫

 ৯ম পে স্কেল প্রস্তাবনার মূল দিক ২০২৫ ।  সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটের দেওয়া প্রস্তাবনা এবং সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের প্রস্তাবনার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে মিল ও অমিল রয়েছে। নিচে তার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো:

  1. সর্বনিম্ন স্কেল: সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটগুলো সর্বনিম্ন স্কেল ১৯,৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করলেও সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন দাবি করেছে ৩৫,০০০ টাকা। তবে ইউনিটগুলোও পে-কমিশন চেয়ারম্যানের কাছে সর্বনিম্ন স্কেল ৩৫,০০০ টাকা করার জোর দাবি জানিয়েছে।
  2. চিকিৎসা ভাতা: সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তাবনায় ৫০ বছর পর্যন্ত ৩,০০০ টাকা এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ৫,০০০ টাকা চিকিৎসার জন্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, ফেডারেশনের প্রস্তাবনা হলো সবার জন্য ১০,০০০ টাকা।
  3. টিফিন ভাতা: ইউনিটের প্রস্তাবনায় দৈনিক টিফিন ভাতা ৫০ টাকা এবং ফেডারেশনের প্রস্তাবনায় তা ২০০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।
  4. যাতায়াত ভাতা: এই ক্ষেত্রে উভয় প্রস্তাবনায় মিল রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী এবং ফেডারেশন উভয়ই যাতায়াত ভাতা ৩,০০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
  5. শিক্ষা ভাতা: প্রতি সন্তানের জন্য ৩,০০০ টাকা শিক্ষা ভাতা দেওয়ার বিষয়ে উভয় প্রস্তাবনায় ঐক্য দেখা গেছে।
  6. বাড়ি ভাড়া: বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রেও দুই পক্ষের প্রস্তাবনা একই। ঢাকা মহানগরে মূল বেতনের ৮০%, বিভাগীয় শহরে ৭০% এবং অন্যান্য স্থানে ৬৫% বাড়ি ভাড়া দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
  7. বৈশাখী ভাতা: সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটগুলো বৈশাখী ভাতা মূল বেতনের ৪০% করার প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ফেডারেশনের প্রস্তাবনা হলো ৫০%।

কেন সর্বনিম্ন বেতন ৩৫০০০ টাকা করার দাবী উঠেছে?

সশস্ত্র বাহিনীর পে-কমিশনের কাছে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার দাবি ওঠার প্রধান কারণ হলো কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়। গত দশ বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীর কর্মচারীরা মনে করছেন, বর্তমান বেতন দিয়ে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ, খাদ্য, পোশাক, এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের এই আকাশচুম্বী দামের কারণে তাদের জীবনযাত্রার মান ক্রমশ নিম্নগামী হচ্ছে। শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্যই নয়, আবাসন, পরিবহন, চিকিৎসা, এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও খরচ অনেক বেড়েছে। সামরিক বা বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই কর্মচারীদের বাসা ভাড়া, যাতায়াত এবং সন্তানদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করা হলে তা এই বর্ধিত ব্যয়ের সঙ্গে কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।কর্মচারীরা মনে করেন, যদি তাদের বেতন ও ভাতা পর্যাপ্ত না হয়, তবে পেটে ক্ষুধা এবং পরিবারের অভাব-অনটনের চিন্তা তাদের মানসিক চাপ বাড়ায়। এই মানসিক চাপ তাদের কর্মক্ষেত্রে মনোযোগী হতে বাধা দেয়, যা দেশের সেবায় তাদের আগ্রহ ও কর্মদক্ষতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ভালো বেতন-ভাতা পেলে তারা দেশের সেবায় আরও বেশি উৎসাহিত এবং মনোযোগী হবে। সংক্ষেপে, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার দাবি উঠেছে, যাতে তারা আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আরও ভালোভাবে দেশসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে।

মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি
গত এক দশকে মুদ্রাস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। খাদ্যদ্রব্য, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা এবং শিক্ষা খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় একজন কর্মচারীর পক্ষে বর্তমান বেতন দিয়ে পরিবার চালানো কঠিন।
তাই, তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে ৩৫,০০০ টাকা সর্বনিম্ন বেতন হওয়া প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন।কর্মীর মনোবল ও কর্মদক্ষতা
যদি কোনো কর্মচারী তার বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকেন, তাহলে তার কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। আর্থিক দুশ্চিন্তা কর্মীকে হতাশ করে এবং তার কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয়।
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কর্মচারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তারা আরও বেশি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন, যা দেশের অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

One thought on “৯ম পে স্কেল ২০২৫ । সশস্ত্র বাহিনীর পে-কমিশনের কাছে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার জোর দাবি?

  • মোছাব্বের আলী

    সুন্দর প্রস্তাব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *